মাগুরার সেই শিশুটির মা বলছিলেন, আগের দিন (মঙ্গলবার) তাঁর মেয়ে ফোনে কান্নাকাটি করে বোনের বাসা থেকে নিজের বাসায় চলে আসতে চেয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, আর দুইটা দিন থাকতে। তারপর নিয়ে আসবেন। এখন তাঁর একটাই আপসোস। বললেন, ‘ইশ্‌! ক্যান যে পাঠাইছিলাম!’

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (পিআইসিইউ) সামনে দাঁড়িয়ে হাহাকার নিয়ে এই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন মাগুরার সেই শিশুর মা। আজ রোববার কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।

বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের ওই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

আরও পড়ুনবোনের স্বামীর সহায়তায় শিশুটিকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ২১ ঘণ্টা আগে

অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিএমএইচের পিআইসিইউর সামনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন স্বজন এসেছেন শিশুটিকে দেখতে। সঙ্গে শিশুটির মা–ও ছিলেন। সিএমএইচের একজন কর্মকর্তা স্বজনদের বুঝিয়ে বলছিলেন, ‘ওর ইনফেকশন অনেক বেশি। আপনারা দেখতে গেলে ওর ক্ষতিই হবে। আপনারা দোয়া করেন, আল্লাহ সুস্থ করে দিলে দেখতে পারবেন।’

স্বজনেরা চলে যাওয়ার পর শিশুটির মায়ের মুঠোফোনে একের পর এক ফোন আসছিল। মা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে কথা বলছিলেন। হাঁটাহাঁটি করছিলেন।

প্রথম আলোকে শিশুটির মা বলেন, ‘মেয়ের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। আপনাকে ছবি তুইলা দেখাতে পারলে বুঝতে পারতেন কী কষ্ট পাচ্ছে! আল্লাহর কাছে মেয়ের দাবি ছাইড়া দিছি।’

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেপ্তার ৪০৮ মার্চ ২০২৫

শিশুটির মা আরও বলেন, তাঁর স্বামী কৃষক ছিলেন। ৯ মাস আগে গ্রামে একটা মারধরের ঘটনায় স্বামীর মাথায় লাঠির আঘাত লাগে। এর পর থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ। মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

শিশুটির মা আরও জানান, স্বামীর অসুস্থতা ও অনটনের কারণে বড় মেয়েকে গত নভেম্বর মাসে বিয়ে দেন। মেয়ের বয়স ১৪ বছর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। এরপরের মেয়েটির বয়স ৯ বছর। সবচেয়ে ছোটটি ছেলে, বয়স আড়াই বছর। তিনি বলেন, ‘মেয়ে বোনের বাসায় যেতে চাইছিল না। জোর করে পাঠাইছিলাম। যদি না পাঠাইতাম তাহলে এই অবস্থা হতো না।’

বড় মেয়ে তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আগেও করেছিলেন বলে জানান এই মা। তিনি বলেন, ঘটনার আগের দিন মেয়ে ওর বড় বোনের কাছে বলেছিল, বোনের শ্বশুর তাকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে। এটা নিয়ে মেয়ে তাঁর স্বামীকে বলে উল্টো মারধরের শিকার হন।

মা বলেন, শ্বশুর-জামাতা দুজনের চরিত্রই খারাপ। এটা আগে জানলে তিনি বিয়ে দিতেন না। হাসপাতালে এখন মেয়ের সঙ্গে তিনিই থাকছেন। মেয়ের সুস্থতার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান। ধর্ষকদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়, সেটা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটি এখনো অচেতন। তার অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন। শিশুটিকে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা চলছে।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক, শরীরে পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত: চিকিৎসক০৮ মার্চ ২০২৫

সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদ্‌রোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ, থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকেরা।

ওই বোর্ডের একজন চিকিৎসক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। গলায় বড় ক্ষত। ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে শিশুকে ফাঁস দেওয়া হয়েছিল এবং বুকে প্রচণ্ড জোরে চাপ দেওয়া হয়েছিল। মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে গেছে। বুকের ওপর চাপ দেওয়ার কারণে ফুসফুসের যেসব জায়গায় বাতাস থাকার কথা না, সেসব জায়গায় বাতাস ঢুকে গেছে। আজ সকালে বুকে অস্ত্রোপচার করে অতিরিক্ত বাতাস বের করার জন্য টিউব বসানো হয়েছে। অক্সিজেন স্বল্পতাজনিত কারণে মস্তিষ্কে ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে খিঁচুনি হচ্ছিল।

ওই চিকিৎসক আরও বলেন, শিশুটি এখনো অচেতন। মস্তিষ্কের ক্ষতি কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এখন খিঁচুনি নেই। তবে রক্তে সংক্রমণ অনেক বেশি। শিশুটির রক্তচাপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে শিশুটির অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন।

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

আরও পড়ুনঅচেতন অবস্থায় উদ্ধার শিশুটির বোন ঢাকা থেকে মাগুরায়, মামলা হয়নি০৮ মার্চ ২০২৫

শিশুটির মা বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪) এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। ওই বাড়িতে বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তাঁর শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি।

এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তাঁর বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তাঁর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটি এখন লাইফ সাপোর্টে ০৭ মার্চ ২০২৫

এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তাঁর মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তাঁর স্বামী মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স এমএইচ চ ক ৎসক বলছ ল ন বড় ব ন স র জন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় কেএফসি রেস্টুরেন্ট ও বাটা শো-রুমে ভাঙচুর

খুলনা নগরীতে কেএফসি নামের একটি রেস্টুরেন্ট এবং বাটার শো-রুম ব্যাপক ভাঙচুর করেছে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনকারীরা। সোমবার সন্ধ্যায় ভাঙচুর ও মালপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বিকেলে সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে ফেরিঘাট মোড়ের দিকে মিছিল বের হয় এবং মিছিলটি ফেরিঘাট মোড় ঘুরে আবার শিববাড়ি মোড়ে যায়। 

তবে মিছিলের একাংশ নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের দিকে যায়। এরপর সন্ধ্যায় তারা কেএফসিতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়া বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বাইরে ফেলে দেয়। ভাঙচুরকারীরা ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। ভাঙচুরের সময় কেএফসির পাশের ভবনে অবস্থিত বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। 

পরে কেএফসিতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের চেয়ার-টেবিল, ডেস্ক, ক্যাশ কাউন্টার, টিভি, ফ্রিজ সবকিছু একেবারে ধংসস্তুূপে পরিণত হয়েছে। কেএফসির সামনের সড়কেও কিছু আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তবে কেএফসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। 

এরপর কিছু লোক নগরীর শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে হোটেল টাইগার গার্ডেন ভবনের নিচতলায় বাটার শোরুমে ভাঙচুর চালায়। 

নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, কেএফসি ও বাটা শো-রুমে ভাঙচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।

 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুষ্টিয়ায় চালকল মা‌লিক স‌মি‌তির সভাপ‌তির বা‌ড়ি লক্ষ‌্য ক‌রে গু‌লি
  • হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় ৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড
  • ‘ভালো নেই’ জানিয়ে দোয়া চাইলেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক
  • আরও নতুন মামলায় গ্রেপ্তার সালমান-মেনন-দীপু মনিসহ ৯ জন
  • গায়েবি সাহায্য
  • জমি নিয়ে বিরোধ মামলা করে বাড়ি ছাড়া আট পরিবার
  • পক্ষাঘাতগ্রস্তদের কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে নতুন ব্রেন-টু-ভয়েস প্রযুক্তি
  • ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ৪ দিনের রিমান্ডে
  • যে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়
  • খুলনায় কেএফসি রেস্টুরেন্ট ও বাটা শো-রুমে ভাঙচুর