নারীদের সিয়াম সাধনা ও রমজানের আমল
Published: 9th, March 2025 GMT
ইবাদত ও প্রতিদানে নারী ও পুরুষের রয়েছে যথাযথ যৌক্তিক অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি কোনো বিশ্বাসী নারী বা পুরুষ সৎকর্ম করে, অবশ্যই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৪) মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করে, রমজান মাসে রোজা পালন করে, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত–আবরু রক্ষা করে এবং শরিয়াহসম্মত বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করে; সে জান্নাতের আটটি দরজার যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (আবুদাউদ, ইবনে হিব্বান: ৪১৬৩, আল মুজামুল আওসাত, তাবরানী: ৪৭১৪; সহিহ আলবানী)।
যাবতীয় ইবাদত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদিতে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান সুযোগ ও দায়িত্ব রয়েছে। নারীরা রোজা পালনের পাশাপাশি তারাবিহ নামাজও পড়বেন এবং রমজানের অন্যান্য সুন্নত আমল যথা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও ইতিকাফ ইত্যাদিও আমল করবেন।
মায়েরা রোজা অবস্থায় শিশুকে দুধ পান করালে রোজার কোনো প্রকার ক্ষতি হয় না এবং অজুও ভঙ্গ হয় না। মায়েদের স্তন্য থেকে দুগ্ধ নিঃসরণ হলেও রোজার বা অজুর ক্ষতি হয় না। কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বা তরল বের হলে রোজার কোনোরূপ ক্ষতি হয় না, তবে অজু ভঙ্গ হবে। বমি হলেও রোজার ক্ষতি হয় না, এতে অজু ভঙ্গ হয়। রোজা শুধু পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা বিনষ্ট হয়। নারীদের রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব হলে রোজা ভঙ্গ হবে। এই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে; কাফফারা আদায় করতে হবে না। সন্তানসম্ভবা নারীকে যদি গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় বিজ্ঞ ও ধর্মসচেতন চিকিৎসক রোজা রাখতে বারণ করেন, তবে সেই রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। নারীরা রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালে রোজা রাখতে পারবেন না, ওই রোজাগুলোও পরে কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মিসরিয়া)
মাসিক পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব চলাকালে রোজা রাখা যায় না, নামাজ পড়া যায় না এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা যায় না, কাবাঘর তাওয়াফ করা যায় না। এ ছাড়া অন্যান্য দোয়া দরুদ ও ইস্তিগফার এবং হাদিস, তফসির পড়া যায়; তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার, অজিফা ইত্যাদিও আমল করা যায়। এ অবস্থায় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন হয়ে জায়নামাজও ব্যবহার করতে পারবেন, সাহ্রি ও ইফতারে শামিল হতে পারবেন, রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করতে পারবেন। ঋতুমতী নারীর স্পর্শে কেউ অপবিত্র হয় না বা কারও অজু–গোসল নষ্ট হয় না। ‘রজোবতী রমণীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ বা রতিক্রিয়া নিষিদ্ধ বা হারাম।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)
রোজা অবস্থায় তেল, সুরমা, সুগন্ধি, স্নো, ক্রিম, পাউডার, কসমেটিকস বা সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে পর্দা-পুশিদা ও শরিয়তের বিধানের লঙ্ঘন যেন কখনো না হয়। (ফাতাওয়া শামী)।রোজা অবস্থায় মাসিক শুরু হলে ওই রোজাটি পরে কাজা আদায় করতে হবে, কিন্তু সেদিন পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। অনুরূপ রোজার মধ্যে মাসিক চলাকালে দিনের বেলায় তা বন্ধ হলে সেদিনও পানাহার থেকে বিরত থাকবেন, কিন্তু এটি রোজা হিসেবে গণ্য হবে না; পরে এই রোজাটিও কাজা আদায় করবেন।
কোনো নারীর যদি তিন দিনের কম বা ১০ দিনের বেশি সময় মাসিক পিরিয়ড হয় অথবা নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার পর পুনরায় রক্তক্ষরণ হয়, একে ইস্তিহাজা বলে। ইস্তিহাজা চলাকালে নামাজও পড়তে হবে এবং রোজাও রাখতে হবে। অনুরূপভাবে সন্তান প্রসবের ৪০ দিন পরও যদি রক্তপাত বন্ধ না হয়, তাহলে অজু–গোসল করে যথারীতি নামাজ আদায় করতে হবে এবং রোজাও রাখতে হবে। এ উভয় অবস্থায় নফল নামাজ, নফল রোজা ও অন্যান্য সব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব ও নফল ইবাদত করা যাবে। নামাজ, তাওয়াফ, কোরআন তিলাওয়াত, স্পর্শ করাসহ সব ইবাদত করতে পারবেন। (আদ দুররুল মুখতার)।
রোজা অবস্থায় যদি কেউ কোনো ছোট্ট শিশু বা অন্য কাউকে প্রয়োজনে খাবার চিবিয়ে বা দাঁত দিয়ে কেটে বা টুকরো করে দেন, এতে রোজা ভাঙবে না। যেসব নারী ও পুরুষ রান্নারান্নার কাজ করেন, তাঁরা প্রয়োজনে রোজা অবস্থায়ও তরকারি বা খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করতে বা লবণ দেখতে পারবেন। মুখে বা জিবে নিয়ে তারপর ফেলে দিতে হবে এবং তারপর থুতু ফেলে দিলেই মুখ পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রয়োজন মনে করলে পানি দিয়ে কুলি করেও নিতে পারেন। (আর রদ্দুল মুহতার)
রোজা অবস্থায় তেল, সুরমা, সুগন্ধি, স্নো, ক্রিম, পাউডার, কসমেটিকস বা সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে পর্দা-পুশিদা ও শরিয়তের বিধানের লঙ্ঘন যেন কখনো না হয়। (ফাতাওয়া শামী)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিষ দিয়ে তিনটি গরুকে মেরে ফেলার অভিযোগ
মাটির দেয়ালে জং ধরা টিনের চাল। সেই চালের এক পাশে পোষা তিনটি গাভি, আরেক পাশে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বসবাস। গাভির দুধ বিক্রি করে চলত সংসার। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গাভি তিনটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আজিজুল ইসলাম।
আজিজুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর গরু তিনটিকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবেশী মজনু মিয়ার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি কেন গরু মারতে যাব! আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা তথ্য রটানো হচ্ছে।’
আজিজুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁর ঘরে থাকা গাভি তিনটি মারা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মারা যাওয়া গরু তিনটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্ত করছে।
আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। দরিদ্র হওয়ায় আজিজুল ইসলামের শ্বশুর মহির উদ্দিন ১০ বছর আগে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা বাছুর দেন। সেই বাছুর লালন–পালন করার পর পূর্ণবয়স্ক হয়ে অনেকগুলো বাছুর জন্ম দেয়। এর মধ্যে তিনটি বকনা বাছুর পালন করে গাভিতে পরিণত করেন আজিজুল। সেই গাভির দুধ বিক্রি করে পাঁচ সদস্যের সংসার চলত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাড়ির অদূরেই বাঁশঝাড়ে গাভি তিনটি বেঁধে রাখার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর গতকাল শনিবার রাতে তিনটি গাভি মারা যায়। তিনটি গাভির মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একসঙ্গে তিনটি গরু মারা যাওয়া আজিজুল ইসলামের বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড়। উঠানের সামনে ময়নাতদন্ত করছে প্রাণিসম্পদের দল।
বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন আজিজুলের স্ত্রী স্বপনা বেগম। এ সময় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘হামার গ্রামের মজনুর সাথে মোর ঝগড়া চলছে। মজনু ২০ দিন আগোত হুমকি দিছিল, মোক নিঃস্ব করি দিবে, মোর সংসার ফকির করতে যা করা লাগে করবে। মজনু ওর কথা পালন করছে, মোক ফকির বানাইল। এ্যালা মুই নিঃস্ব। ওয় মোর গরু বিষ দিয়ে মারি ফেলাইছে। গরুগুলার কী দোষ? ওয় মোক মারত। মুই ওর বিচারের জন্যে থানায় অভিযোগ দিছি। মুই সঠিক বিচার চাই।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখায়ের বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর টিম নিয়ে আজিজুল ইসলামের বাড়িতে যাই। গাভিগুলোর প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনটি গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় মালিক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।