ইউরোপের প্রধান দেশগুলো বলেছে, তারা ফিলিস্তিনের গাজা পুনর্গঠনে আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাকে সমর্থন করে।

আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করেই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

গাজা পুনর্গঠনে মিসরের পরিকল্পনাটি আরব নেতারা অনুমোদন করেছেন। কায়রোতে গত মঙ্গলবার আরব লিগের সম্মেলনে মিসরের প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়। এর তিন দিন পর গতকাল শনিবার জেদ্দায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বৈঠকে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়।

আরও পড়ুনআরব নেতাদের গাজা পুনর্গঠন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল০৫ মার্চ ২০২৫

কিন্তু আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করেছে। যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজা জোর করে খালি করার পরিকল্পনা রয়েছে ট্রাম্পের।

ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিসরে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’য় (ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল বরাবর একটি রিসোর্ট এলাকা) পরিণত করার বিষয়ে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি আরব নেতারা নাকচ করেছেন।

আরও পড়ুনগাজা পুনর্গঠনে বিকল্প প্রস্তাবে সমর্থন ওআইসির ১৪ ঘণ্টা আগে

গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের ধারণার একটি বিকল্প। গতকাল শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এই পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা আছে।

এক বিবৃতিতে ইউরোপের এই দেশগুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, আরব-সমর্থিত প্রস্তাবটিতে গাজার বিপর্যয়কর জীবনযাত্রার দ্রুত ও টেকসই উন্নতির প্রতিশ্রুতি আছে।

আরও পড়ুনগাজা পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তুত০৪ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনগাজা নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করল আরব দেশগুলো০৪ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরব সমর থ ত প ব কল প ন কর ছ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা পুনর্গঠনে বিকল্প প্রস্তাবে সমর্থন ওআইসির

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল এবং এখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরব লিগের বিকল্প প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। সৌদি আরবের জেদ্দায় শনিবার ওআইসির এক জরুরি বৈঠক শেষে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ সময় ওআইসির পক্ষ থেকে আঞ্চলিক উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

মিসরের কায়রোতে গত মঙ্গলবার আরব লিগের এক সম্মেলনে গাজা পুনর্গঠনে মিসরের দেওয়া প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর তিন দিন পর জেদ্দায় ৫৭ সদস্যের ওআইসির বৈঠকে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প মিসরের প্রস্তাবে গাজা পুনর্গঠনে এর ভবিষ্যৎ প্রশাসন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর দখল নেওয়ার বিষয়টিতে ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়েছে।

ওআইসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওআইসি গাজার দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী এই সংস্থা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক তহবিল সংস্থাগুলোকে দ্রুত এ পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে।

যুদ্ধ–পরবর্তী গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। গাজা জোর করে খালি করার পরিকল্পনাও রয়েছে ট্রাম্পের। ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিসরে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছিল।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি ওআইসির অনুমোদনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, রাশিয়া, চীন এবং আন্তর্জাতিক অন্য পক্ষগুলোর কাছ থেকে সমর্থনের মাধ্যমে একে আন্তর্জাতিক পরিকল্পনায় পরিণত করা। এ লক্ষ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

কায়রোর আল-আহরাম সেন্টার ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাভা সাইফ আল্লাম বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা আরব দেশগুলোকে বিরোধী কাতারে ঐক্যবদ্ধ করেছে। মিসর তার প্রস্তাবের জন্য আরও বড় পরিসরে সমর্থন চাইছে। রাভা আরও বলেন, এটি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি প্রত্যাখ্যান করে—এমন একটি বিস্তৃত জোট গঠনের একটি প্রচেষ্টা।

জিম্মিদের আহ্বান

হামাসের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ইসরায়েলে ফেরা ৫৬ জিম্মি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজা যুদ্ধবিরতি পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ও হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে বলেছেন। গত শুক্রবার ৫৬ জিম্মি ইনস্টাগ্রামে একটি চিঠি পোস্ট করেন। তাতে তাঁরা লিখেছেন, ‘আমরা যারা সেই নরক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তারা জানি যে যুদ্ধে ফিরে যাওয়া বাকি জিম্মিদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। একবারে একসঙ্গে সব জিম্মিকে মুক্ত করতে চুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করুন।’

প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ১ মার্চ শেষ হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা চালানোর সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। এখনো হামাসের হাতে ৫৮ জিম্মি রয়েছে।

গতকাল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ দিয়ে মধ্যস্থতাকারী মিসরের সঙ্গে হামাসের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হওয়ার কথা। হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশের অনুমতিসহ সাম্প্রতিক বিষয়ে আলোচনা হবে। তাঁরা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চান।

ঐতিহ্যবাহী মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে ঐতিহাসিক একটি মসজিদ আংশিক জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, শুক্রবার অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি সেনারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটেছে নাবলুসের ওল্ড সিটির ঐতিহ্যবাহী আল-নাসর মসজিদে। এএফপিটিভিতে এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আংশিক পুড়ে যাওয়া মসজিদের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।

হুতিদের হুঁশিয়ারি

ইয়েমেনের হুতিদের পক্ষ থেকে চার দিনের মধ্যে গাজায় ত্রাণসহায়তা বন্ধের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আবারও নৌপথে হামলা শুরুর হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজা পুনর্গঠনে বিকল্প প্রস্তাবে সমর্থন ওআইসির