চবি ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ বাতিল ও ৩ প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি
Published: 9th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নয় ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ বাতিল এবং প্রক্টরিয়াল বডির তিন সদস্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ।
রবিবার (৯ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ, বাতিল কর করতে হবে’, ‘লুকিয়ে করা বহিষ্কার, প্রহসনটা পরিষ্কার’, ‘নারী মানেই হানি না, এই প্রক্টর মানি না’, ‘মবতন্ত্রের ইজারাদার, প্রক্টর তুই গদি ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
চবির ভর্তি পরীক্ষায় ২ জুলাই-বিপ্লবীকে নিয়ে প্রশ্ন
চবিতে রমজানবিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সমাবেশে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী ঈশা দে বলেন, “যে ঘটনার উপর বিষয়টি জটিল হয়েছিল সেটি হচ্ছে, একজন প্রক্টরের গায়ে এক ছাত্রী হাত তুলেছিল। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় এবং কখনোই এমন আচরণ প্রত্যাশিত না। কিন্তু যখন এ ঘটনায় সে হলের হাউজ-টিউটর সৈয়দা ফারিহা লাহরিন ম্যাম মেযেদের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এটা প্রশাসনের কেমন প্রহসন, সেটা আপনারাই বুঝুন।”
তিনি আরো বলেন, “গত ৪ মার্চ প্রশাসন থেকে বহিষ্কারাদেশের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বহিষ্কৃতরা যে অপরাধী না, তার কারণ দর্শাতে বলেছে। সবার চিঠিতে একই ধরনের লেখা। চিঠিতে ১০ জনকে বলা হয়েছে বিশৃঙ্খলার নেতৃত্ব দান করেছেন। ১০ জন কীভাবে নেতৃত্ব দেন? আমরা চাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। বহিষ্কারাদেশ বাতিল হোক এবং প্রক্টর তানভীর স্যার ও দুই সহকারী প্রক্টর কানন স্যার ও কোরবান আলী স্যারকে পদত্যাগ করতে হবে।”
আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ তন্ময় বলেন, “বহিষ্কারের চিঠিতে ছয়টা অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয় নম্বরটিতে বলা হয়েছে অন্যান্য অপরাধ। এটা আসলে কী? এটা খুবই প্রহসনমূলক চিঠি। আবার বলা হয়েছে হলের গেট ভাঙার কথা। এখন প্রশ্ন, গেট বন্ধ থাকবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সান্ধ্য আইন রয়েছে? কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল?”
ইমতিয়াজ তন্ময় বলেন, “শিক্ষার্থী হিসেবে আমি স্বচ্ছতা চাই। আমি জানতে চাই, ঠিক কোন প্রমাণে এসব অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। কিছু ভিডিও ফুটেজ তো আমরাও দেখেছি, যেখানে কিছু শিক্ষক অশালীন ভাষায় কথা বলছেন। কোন শিক্ষক কি কাউকে গালিগালাজ করতে পারেন? শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া হলেও ওসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?”
গত ৫ ফেব্রুয়ারি চবির শেখ হাসিনা হলের নৌকা প্রতীক ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভাঙাকে কেন্দ্র করে হলটির নারী শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষক-সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় তদন্ত করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার ও সনদ বাতিল এবং ৯ শিক্ষার্থীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এরপরই এ বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিষ দিয়ে তিনটি গরুকে মেরে ফেলার অভিযোগ
মাটির দেয়ালে জং ধরা টিনের চাল। সেই চালের এক পাশে পোষা তিনটি গাভি, আরেক পাশে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বসবাস। গাভির দুধ বিক্রি করে চলত সংসার। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গাভি তিনটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আজিজুল ইসলাম।
আজিজুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর গরু তিনটিকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবেশী মজনু মিয়ার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি কেন গরু মারতে যাব! আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা তথ্য রটানো হচ্ছে।’
আজিজুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁর ঘরে থাকা গাভি তিনটি মারা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মারা যাওয়া গরু তিনটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্ত করছে।
আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। দরিদ্র হওয়ায় আজিজুল ইসলামের শ্বশুর মহির উদ্দিন ১০ বছর আগে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা বাছুর দেন। সেই বাছুর লালন–পালন করার পর পূর্ণবয়স্ক হয়ে অনেকগুলো বাছুর জন্ম দেয়। এর মধ্যে তিনটি বকনা বাছুর পালন করে গাভিতে পরিণত করেন আজিজুল। সেই গাভির দুধ বিক্রি করে পাঁচ সদস্যের সংসার চলত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাড়ির অদূরেই বাঁশঝাড়ে গাভি তিনটি বেঁধে রাখার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর গতকাল শনিবার রাতে তিনটি গাভি মারা যায়। তিনটি গাভির মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একসঙ্গে তিনটি গরু মারা যাওয়া আজিজুল ইসলামের বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড়। উঠানের সামনে ময়নাতদন্ত করছে প্রাণিসম্পদের দল।
বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন আজিজুলের স্ত্রী স্বপনা বেগম। এ সময় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘হামার গ্রামের মজনুর সাথে মোর ঝগড়া চলছে। মজনু ২০ দিন আগোত হুমকি দিছিল, মোক নিঃস্ব করি দিবে, মোর সংসার ফকির করতে যা করা লাগে করবে। মজনু ওর কথা পালন করছে, মোক ফকির বানাইল। এ্যালা মুই নিঃস্ব। ওয় মোর গরু বিষ দিয়ে মারি ফেলাইছে। গরুগুলার কী দোষ? ওয় মোক মারত। মুই ওর বিচারের জন্যে থানায় অভিযোগ দিছি। মুই সঠিক বিচার চাই।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখায়ের বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর টিম নিয়ে আজিজুল ইসলামের বাড়িতে যাই। গাভিগুলোর প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনটি গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় মালিক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।