মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবার মাথায় কুড়ালের কোপ
Published: 9th, March 2025 GMT
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় কলেজপড়ুয়া মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বখাটে তরুণের বিরুদ্ধে। হামলার শিকার ওই ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান ওরফে মিলন (৫৫)। গত শুক্রবার রাত ১০টায় উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জানগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মিজানুর রহমানের মাথা মারাত্মকভাবে কেটে গেছে। পরিবারের লোকজন তাঁকে প্রথমে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত তরুণ আত্মগোপনে রয়েছেন।
হামলার শিকার মিজানুর রহমানের ছোট ভাই মো.
ফরিদের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই তরুণ তাঁর ভাতিজির হাত ধরে টান দেন। সে বাড়িতে এসে ঘটনাটি জানালে তাঁরা দুই ভাই ওই তরুণের পরিবারের কাছে আবার অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সঞ্জয় চায়নিজ কুড়াল নিয়ে অতর্কিতে তাঁদের দুই ভাইয়ের ওপর হামলা চালান। এ সময় কুড়ালের কোপে তাঁর বড় ভাই মিজানুরের মাথায় মারাত্মক জখম হয়। আর তিনি সরে যাওয়ায় তাঁর হাতে হালকা আঘাত পান। একই সময় প্রতিবেশী এক নারী এগিয়ে এলে তাঁকেও আঘাত করেন ওই তরুণ।
ফরিদ জানান, ঘটনার পর তাঁরা তাঁর বড় ভাই মিজানুর রহমানকে প্রথমে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিন দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে ওই হাসপাতালে তাঁর ভাই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য অভিযুক্ত তরুণের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, শুক্রবার রাতের ওই হামলার ঘটনার পর থেকে তরুণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন করেছেন। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করার কথা তাঁরা শুনেছেন। তবে পরিবারের কেউ আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত থানায় অভিযোগ নিয়ে যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
থানায় অভিযোগ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ফরিদ বলেন, ভাইয়ের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অভিযোগ করতে দেরি হচ্ছে। তবে আজ আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ লিখে থানায় জমা দেবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ন র রহম ন পর ব র র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে ২০০ কোটি ডলার আয় করছে—ট্রাম্পের এ দাবি কি সত্য
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে শুল্কের খড়্গ চাপানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে বারবারই যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ‘অন্যায্য বাণিজ্যের’ শিকার হচ্ছে, সেই দাবি করছেন।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশে বিদেশি পণ্য প্রবেশের ওপর শুল্ক বা আমদানি কর ধার্য করেন। এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পণ্যে আরোপ করেছেন সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। প্রতিশোধ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্যে ধার্য করেছে বড় অঙ্কের শুল্ক।
শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করা দাবিগুলোর কিছু প্রমাণিত নয় বা এমনকি সেসব মিথ্যা। বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে বিবিসি ভেরিফাই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও সম্প্রতি দাবি করেছেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে দেশটির আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।যুক্তরাষ্ট্র কি দৈনিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় করছেপ্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তাঁর নতুন শুল্ক ঘোষণার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আমরা শুল্ক দিয়ে প্রচুর আয় করছি—দিনে (২ বিলিয়ন) ২০০ কোটি ডলার।’
ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে সমর্থন করে, এমন কোনো প্রকাশিত তথ্য বিবিসি ভেরিফাই খুঁজে পায়নি। যদিও শুল্ক থেকে পাওয়া কত অর্থ ফেডারেল সরকারে পাঠানো হয়, তা নিয়ে প্রতিদিন বিবৃতি দেয় মার্কিন অর্থ বিভাগ।
৭ এপ্রিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক আয় সর্বোচ্চ ২১৫ মিলিয়ন (২১ কোটি ৫০ লাখ) ডলার। এটি ট্রাম্পের দাবি করা অঙ্কের চেয়ে অনেক কম।
অবশ্য ট্রাম্পের ওই দাবি শুল্ক থেকে বছরের সামনের দিনগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অনুমেয় আয়ের ভিত্তিতে হতে পারে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র দৈনিক ৯ বিলিয়ন (৯০০ কোটি) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। কিছু বিশ্লেষক হিসাব কষে দেখেছেন, গত ২ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাম্পের আরোপ করা গড় শুল্কহার ছিল ২২ শতাংশ। সে হিসাবে আমদানি করা পণ্য থেকে দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয় হতে পারে ২ বিলিয়ন (তবে নতুন শুল্ক ঘোষণায় দেশটিতে পণ্য আমদানি কমতে পারে)। এখানে যে আয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির পরিমাণ আগের মতোই ধরা হয়েছে।
ট্রাম্পের ওই দাবির ভিত্তি ৬ এপ্রিল তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও হতে পারে।
আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেন ট্রাম্প, এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ১৬ ঘণ্টা আগেবাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও দাবি করেছিলেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।
ট্রাম্পের দাবির পক্ষে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য জানতে চেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই।
আপনারা জানেন, আমরা তাদের (ইইউ) কাছ থেকে লাখ লাখ গাড়ি নিই। তারা কোনো গাড়ি নেয় না। তারা আমাদের কৃষিপণ্যও নেয় না। তারা কিছুই নেয় না।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টচীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কি ১ লাখ কোটি ডলারএকটি দেশ যখন অন্য দেশের কাছে থেকে রপ্তানির তুলনায় পণ্য আমদানি বেশি করে, তখন বাণিজ্যঘাটতি দেখা দেয়। ট্রাম্পের দাবি, চীনের সঙ্গে তার এ ঘাটতির পরিমাণ বিশাল।
৭ এপ্রিল ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের ১ লাখ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি।’
রপ্তানি বাণিজ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে, ঠিক। তবে ট্রাম্প যেমনটা দাবি করেছেন, তেমনটা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন