অপশক্তির পুনর্বাসনের জন্য গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ রাস্তায় নামেনি: শিক্ষক নেটওয়ার্ক
Published: 9th, March 2025 GMT
দেশের অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা বেড়েছে। কিন্তু গৃহ থেকে জনপরিসরে নারী নির্যাতন কমেনি। সমাজ নারী নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করছে। বিগত সরকারের সময় যে গোষ্ঠী নিপীড়নের শিকার হয়েছিল, তারাই এখন নারীর প্রতি ‘ফ্যাসিস্ট’ হয়ে উঠছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল অপশক্তির পুনর্বাসন করার জন্য নয়। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশে’ কথাগুলো বলেন বক্তারা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত এই সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশে সভাপ্রধানের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, গৃহ থেকে শুরু করে জনপরিসরে নারীকে নিপীড়ন করা হচ্ছে। এটা হঠাৎ করে হচ্ছে না। সমাজ এই নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করছে। বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ভূমিকা বেড়েছে। কিন্তু নির্যাতন টিকে আছে। ধর্ষণের শাস্তি পাওয়া অপরাধীও জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে। নির্যাতন যাদের থামানোর কথা, তারা চোখ বন্ধ করে রাখছে। নারী নির্যাতনের ভেতর দিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখা হয়। শুধু ধর্মই নয়, নির্যাতক যখন যেটা সুবিধা মনে করে, সেটাই ব্যবহার করে। নারী ও অন্যান্য লিঙ্গের ওপর নির্যাতন ঠেকানোর দায়িত্ব সবার। নতুন বাংলাদেশ যত দিন না বাস্তবায়িত হবে, তত দিন রাজপথে থাকবেন বলে জানান তিনি।
নারী নির্যাতনের অতীতের ঘটনাগুলোর প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, নির্যাতনের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা চলছে। জুলাই-আগস্টের যে চেতনা, তাতে ধর্মীয়ভাবে অন্ধ, সামাজিকভাবে গোরা গোষ্ঠীর পুনর্বাসনের চেষ্টা ছিল না। যারা এখন গর্ত থেকে বের হচ্ছে, তাদের বুঝতে হবে যে জুলাই-আগস্টে সমাজের বিভিন্ন স্তরের যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরা এ ধরনের অপশক্তিকে পুনর্বাসন করার জন্য নামেননি। এই সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভিন্ন কিছু করবে, সেটাই প্রত্যাশা। কিন্তু তা দেখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্র ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কাম্য নয়।
গণ-অভ্যুত্থানের পরের সরকার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ করেন অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) দুর্বলতা প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে। এর সুযোগ নিয়ে ছিনতাইকারী, ধর্ষক, ধর্মীয় লেবাসের লোকজন নারীর ওপর পুরোনো ফ্যাসিজম করছে। গত ফ্যাসিজমের সময় ধর্মীয় জনগোষ্ঠী নানাভাবে নিপীড়নের শিকার ছিল। তাদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সমবেদনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই অনুভূতি ধরে রাখতে পারছে না। তারা নিজেরাই ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছে, নিপীড়ক হয়ে উঠছে। দুর্বল সরকারের সময় যে যার শক্তি প্রয়োগ করছে।
অধ্যাপক স্বপন আদনান বলেন, আট বছরের শিশুটি (মাগুরার) ধর্ষণের শিকার হয়েছে পরিবারের ভেতরেই। দেশে পরিবারের ভেতর মেয়েদের আশ্রয় ভেঙে যাচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিষয়টিকে স্বাভাবিক করা হচ্ছে, সাফাই গাওয়া হচ্ছে। উত্ত্যক্তকারী বীরের সংবর্ধনা পাচ্ছে। সমস্যার শেকড় অনেক গভীরে। প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। মনোজগৎ পরিবর্তনে কাজ করতে হবে।
সমাবেশে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক কর্মচারী দ্বারা ‘মোরাল পুলিশিং’ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হন। সে ঘটনায় উগ্র সংগঠন থানায় মব সৃষ্টি করে। সন্ত্রাসী অবস্থা তৈরি করলে থানা তাদের কবজায় চলে যায়। তারা থানার ভেতর আটক ব্যক্তির লাইভ ভিডিও প্রচার করে। থানা থেকে বাদীর ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। বাদীকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। যেভাবে অপরাধীকে বিজয়ীর বেশে ছেড়ে দেওয়া হয়, তা সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার আরেকটি জঘন্য উদাহরণ। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
সমাবেশে শিক্ষক নেটওয়ার্ক কতগুলো দাবি তুলে ধরে। এগুলো হলো, থানা থেকে ভুক্তভোগীর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির আবার থানা থেকে অশালীন বক্তব্যে বাধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিচার করা; যাঁরা সাইবার আক্রমণ করছেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া; মব তৈরি করে নারীর অমর্যাদা যাঁরা করছেন, তাঁদের বিচার করা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠু তদন্ত করা; যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসনিম সিরাজ মাহবুব, মোশাহিদা সুলতানা, কাজী মারুফুল ইসলাম, কামাল উদ্দিন, সংস্কৃতিকর্মী সুস্মিতা রায়, ফেরদৌস আরা রুমী, শিক্ষার্থী মুস্তানিক বিল্লাহ। সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আয়োজনে একই ধরনের প্রতিবাদী সমাবেশ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
‘বরবাদ’ দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে শাকিবের ‘এসকে ফিল্মস’
শাকিব খানের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস (শাকিব খান ফিল্মস) এবার আন্তর্জাতিক পরিসরে সিনেমা পরিবেশনা শুরু করলো। বাংলাদেশের এই ফিল্ম প্রডাকশন হাউজটি সিনেমা নির্মাণের পাশাপাশি এখন থেকে নিয়মিত নর্থ আমেরিকা (এসকে ফিল্মস ইউএসএ) এবং গলফে (এসকে ফিল্মস ইউএই) সিনেমা পরিবেশনা করবে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় এসকে ফিল্মস ইউএসএ-এর আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরুর বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন এসকে ফিল্মস ইউএসএ-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা বদরুজ্জজা সাগর, ফারজানা আক্তারসহ অনেকে।
এসকে ফিল্মস ইউএসএ জানায়, আগামী ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও ১৯ এপ্রিল কানাডায় ‘বরবাদ’ মুক্তির মাধ্যমে এসকে ফিল্মস ইউএসএ আন্তার্জাতিকভাবে ফিল্ম ডিসট্রিবিউশন শুরু করছে। অচিরেই মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া-তে এসকে ফিল্মস ফিল্ম ডিসট্রিবিউশন শুরু করবে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ঈদুল ফিতরে বাংলাদেশের ১২০টি সিনেমা হলে মুক্তির পর ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে ‘বরবাদ’। মুক্তির ১০দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও দর্শকদের এ সিনেমা নিয়ে আগ্রহ করেমি। সিনেপ্লেক্স, মাল্টিপ্লেক্স থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিন; হাউজফুল যাচ্ছে। বাংলাদেশের দর্শকদের ‘বরবাদ’ দেখে সেই উল্লাস আগ্রহ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রবাসী বাঙালীদের। শাকিব খানের প্রিয়তমা, রাজকুমার, তুফান দেখে মুগ্ধ হওয়া প্রবাসী দর্শকরা এখন বরবাদের জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
এসকে ফিল্মস ইউএসএ-এর পক্ষে বদরুদ্দোজা সাগর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার প্রবাসীরা ‘বরবাদ’ দেখার জন্য অনেক আগ্রহী। এসকে ফিল্মস ইউএসএ এসব দর্শকদের আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও ১৯ এপ্রিল কানাডায় বরবাদ অফিশিয়ালি ইন্টারন্যাশনালি রিলিজ করছে।
যেসব স্টেটে বাঙালী কমিউনিটি রয়েছে সেসব স্থানের থিয়েটারগুলোকে চলবে 'বরবাদ'। প্রথম সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০টি থিয়েটারে 'বরবাদ' চলবে।
১৮ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব শহরে ‘বরবাদ’ চলবে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নিউইউর্ক, বোস্টন, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, আটলান্টা, মিশিগান, সানফ্রান্সিসকো, লস এঞ্জেলেস, ম্যারিল্যান্ড, বাফেলো, ফিলাডেলফিয়া। এবং ১৯ এপ্রিল কানাডার বাঙালী জনবসতিপূর্ণ মন্ট্রিয়াল, অটোয়া এবং টরেন্টো এই তিন শহরে চলবে 'বরবাদ'।
মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত ‘বরবাদ’ ছবিতে শাকিব খানের নায়িকা ইধিকা পাল। আরও আছেন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, যীশু সেনগুপ্ত, শ্যাম ভট্টাচার্য, মানব সাচদেভ প্রমুখ।