মাগুরার ঘটনা গোটা মানবতার ওপর ছুরিকাঘাত: জামায়াতের আমির
Published: 9th, March 2025 GMT
মাগুরায় আট বছরের একটা শিশুর সঙ্গে তার আপনজনেরা যে আচরণ করেছে, বিশ্বাসে ছুরিকাঘাত করেছে, এটা গোটা মানবতার ওপর তারা ছুরিকাঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে পশুত্বের শিক্ষা।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই শিক্ষা থেকে বের করে এনে আমরা দিতে চাই আল্লাহর দেওয়া মানবিক শিক্ষা। এখানে আমাদের কোনো সংকীর্ণতা নেই। এ ব্যাপারে আমরা ভেরি ডেসপারেট।’
আজ রোববার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষক প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
মাগুরার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই সমাজে পাশবিক হৃদয়বিদারক অনেক দৃশ্য দেখতে হয়, শুনতে হয়। হৃদয় ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।’
সম্মেলনে জামায়াতের আমির বলেন, ‘৯১ ভাগ মুসলমানের দেশে অবশ্যই শিক্ষা হতে হবে ধর্মের ভিত্তি এবং চেতনাকে ধারণ করে। এর বাইরে কোনো শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানাতে পারবে না। দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল নাগরিক বানাতে পারবে না, যা এখন প্রমাণিত সত্য।’
জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রথমে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করবেন বলে সম্মেলনে জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যদি কোনো দিন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন, কবুল করেন, এটা আল্লাহর ইচ্ছা। জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে যদি আমরা যাই (ক্ষমতায়), তাহলে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হবে শিক্ষার সংস্কার সাধন করা।’
জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘শিক্ষককে শিক্ষকের মর্যাদার আসনে বসানো, আর ছাত্রদের দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে তৈরি করা। যাতে একজন ছাত্রের হাতে তাঁর শিক্ষার পাঠ চোকানোর পর যেভাবে কাগজের সার্টিফিকেট আসবে, ঠিক সেভাবে আসবে কাজের অফার লেটার। এই দুইটা একসঙ্গে তাঁর হাতে পৌঁছাবে। এমনকি তার গ্র্যাজুয়েশন অথবা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট আসার আগেই দুনিয়ায় বহু জায়গায় ছাত্রদের কাছে কাজের অফার লেটার চলে আসে। আমরা নৈতিক শিক্ষাকে বিকশিত করে ওই শিক্ষাই এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করব। তাহলে মানুষগুলো আর পশু হবে না।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র
এছাড়াও পড়ুন:
নিরাপদ অঞ্চলেও অরক্ষিত গাজাবাসী
বাড়ি, আশ্রয়শিবির কিংবা ইসরায়েল ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চল কোথাও যেন নিরাপত্তা মিলছে না গাজাবাসীর। গতকাল বুধবার রাতের অন্ধকারে নুসেইরাহ শরণার্থী শিবির ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষিত আল-মাওয়াসি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত চারজন নিহতের সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে নিহত হয়েছেন দু’জন পুরুষ এবং গুরুতর আহত হয়েছেন সাতজন। এ ছাড়া আল-মাওয়াসি আশ্রয়কেন্দ্রে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রাণ গেছে এক নারী ও এক শিশুর। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার ৪৫টি স্থাপনায় হামলার কথা স্বীকার করেছে আইডিএফ। নিজেদের এক প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজার কোথাও এখন নিরাপত্তা নেই। আছে শুধুই মৃত্যু আর ধ্বংস। খবর আলজাজিরা ও এএফপির
এদিকে গাজার পূর্বাঞ্চলের শুজাইয়া অঞ্চলে একাধিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ৫৫ জন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৮০ জন। এসব হামলায় অন্তত ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এলাকাটি। জীবিত বাসিন্দারা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া নারী ও শিশুদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে উদ্ধারকাজ চালানোর সময় এলাকাটিতে উড়ছিল ইসরায়েলি ড্রোন। উদ্ধারকারীরা জানান, ভারী বোমায় মৃতদেহগুলো এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছে, সেগুলো শনাক্ত করাও কষ্টকর। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮৪৬ জনে। তবে গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭শর বেশি।
গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চালানো ব্যাপক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলমান হত্যাযজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য কলঙ্ক।’ এদিকে গাজাকে ‘মৃত্যু উপত্যকা’ হিসেবে সম্বোধন করে ইসরায়েলের অবরোধ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
তিনি বলেন, ‘গাজা এখন একটি মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে এবং সেখানকার বেসামরিক জনগণ মৃত্যুর গোলক ধাঁধায় আটকে পড়েছে।’ গুতেরেসের এই মন্তব্যের আগে জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থার প্রধানরা বিশ্বনেতাদের কাছে গাজার অধিবাসীদের জন্য জরুরি সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, গাজায় খাদ্য সরবরাহের কোনো সংকট নেই এবং গুতেরেস ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার’ করছেন।
অন্যদিকে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হোসাম বদরান মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ চিরকাল চলতে পারে না। তাই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো অত্যাবশ্যক।’
গাজায় ইসরায়েল খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যাপকভাবে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে শিশুরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টির ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক হুমকির কারণে ২১টি পুষ্টি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ৩৫০ গুরুতর অপুষ্ট শিশু।