বিএসইসির সংকটের দ্রুত সমাধান, স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান অংশীজনদের
Published: 9th, March 2025 GMT
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংকটের দ্রুত সমাধান চেয়েছে বাজার অংশীজনেরা। তাঁরা বলেছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় গত কয়েক দিনে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত। এতে দেশ-বিদেশে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই দ্রুত এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে আজ রোববার সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনারের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বেশি আলোচনার পর এই আহ্বান জানান অংশীজনেরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম ও পরিচালক মিনহাজ মান্নান। এর আগে বিএসইসির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএসইসির কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিসিবিএলসহ শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা। বেলা ১১টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে।
বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনেরা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে ও সংহতি জানাতে এসেছিলেন। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ও স্বার্থে তাঁরা আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কাজে ফিরে এসেছেন। আমরা কর্মীদের সবাইকে কাজে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এদিন দুপুর পর্যন্ত তাঁর কোনো আলোচনা হয়নি।
বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত কয়েক দিনের ঘটনায় পুঁজিবাজারের মতো সংবেদনশীল একটি বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি কীভাবে দ্রুত সমাধান করা যায়, এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বিএসইসির যে সুনাম ও মর্যাদা, সেটা রক্ষার দায়িত্ব বাজার–সংশ্লিষ্ট সবার। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কমিশনের সিদ্ধান্তে যদি ক্ষুব্ধ হয়, তাহলে আইন ও নিয়ম মেনে তাদের কমিশন বা সরকারের কাছে আবেদন সুযোগ রয়েছে। আইনের আশ্রয় নেওয়ারও বিধান আছে। কিন্তু একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরির মাধ্যমে যেভাবে দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, সেটি কাম্য নয়। পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে বিগত দিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিশদ তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি। সেই সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান কমিশনের তদন্ত কার্যক্রমের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি।’
ডিএসইর চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিএসইসিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত। তবে সংস্থাটিতে অনেকে আছেন, যাঁরা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করেন। এসব সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা যাতে আতঙ্কিত না হয়ে তাঁদের দৈনন্দিন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন, সে জন্য পদক্ষেপ নিতে কমিশনকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ সময় ডিএসইর চেয়ারম্যান আরও জানান, বিএসইসির বর্তমান সংকটের সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে বাজারে কোনো ধরনের অঘটন ঘটানোর সুযোগ না পান, সে জন্য ডিএসইর বাজার সার্ভেইল্যান্স জোরদার করা হয়েছে। এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ডিএসই বাজার তদারকিতে যুক্ত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের বাজারের ওপর আস্থা না হারানোরও অনুরোধ জানান ডিএসই চেয়ারম্যান।
বৈঠক শেষে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা অনুরোধ করেছি, যত দ্রুত সম্ভব বিএসইসিতে কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ যেন অবিচারের মুখোমুখি না হন এবং ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে না পড়েন, সে জন্য উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি।’ বিএসইসির গত কয়েক দিনের ঘটনায় বাজারে কোনো নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মিনহাজ মান্নান বলেন, ‘যা বার্তা যাওয়ার এরই মধ্যে চলে গেছে। যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে আহ্বান জানাতেই আমরা বৈঠক করেছি। বিনিয়োগকারীদেরও উদ্বেগের বিষয়টিও আমরা বৈঠকে তুলে ধরেছি।’
এদিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে আজ সকাল থেকে কাজে ফিরেছেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছিল একধরনের অস্বস্তি। সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই অস্বস্তি বিরাজ করছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।
গত বুধবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরকে কেন্দ্র করে বিএসইসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এই দাবি আদায়ে বিএসইসির কার্যালয়ের বিদ্যুৎ–সংযোগ, সিসিটিভি–সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মূল ভবনের ফটক বন্ধ করে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর সেনাসদস্যরাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। এই উদ্ধার অভিযানকালে বিএসইসির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন। এর প্রতিবাদে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কর্মবিরতির কারণে বৃহস্পতিবার বিএসইসিতে অচলাবস্থা ছিল। এই অচলাবস্থার মধ্যে ওই দিন বেলা তিনটায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে কার্যালয়ে আসেন চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা।
এদিকে বুধবারের ঘটনায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যানের গানম্যান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার এ মামলা করেন। এই মামলার পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি বাদ দিয়ে স্বাভাবিক কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের পুঁজিবাজারের স্বার্থে ও বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কমিশনের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দপ্তরের কাজে নিয়মিতভাবে যোগদানের উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর মকর ত ব এসইস র ক ড এসইর অ শ জন ড এসই
এছাড়াও পড়ুন:
সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেন বিএসইসি চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছেন, আজকে এখানে গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডাররা এসেছিলেন। তারা আমাদের সহমর্মিতা ও সহানুভবতা জানিয়েছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজে ফিরে এসেছেন। আমরা সবাইকে বলেছি, কাজে যোগদান করতে। আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবো। সবাই কাজে যোগদান করলে, কাজ স্বাভাবিক নিয়মে চলে চলবে।
রবিবার (৯ মার্চ) ঢাকার আগারগাঁওয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাব বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, “এখনো সেই সময় হয়নি। পরবর্তীতে আলোচনা করে আরো বিস্তারিত আপনাদের জানানো হবে।”
এদিকে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, “অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের যে তদন্ত কার্যক্রম চলছে এই কাজের সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করছি। সংকট পরিস্থিতিতে কীভাবে বাজারের আস্থা ধরে রাখা যায় এবং অতি দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী যেভাবে বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে দাবি দাওয়া আদায়ের প্রচেষ্টা করেছিল সেটি কোনভাবেই কাম্য নয়, আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিগত বছরগুলোতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার বিশদ তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলমান যে বিচার কার্যক্রম এর সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমরা মনে করি, বিএসইসিতে অনেকে আছেন যারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা চেয়ারম্যান ও কমিশনারবৃন্দের কাছে অনুরোধ করেছি এই সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা যাতে এই মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয় তারা যেন তাদের দৈনন্দিন কাজটি সুষ্ঠুভাবে করতে পারে সেটার বিষয় তারা যেন পদক্ষেপ নেন। উনারা আশ্বস্ত করেছেন ওই কাজটি অলরেডি শুরু হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা তাদের বলেছি, আপনারা শক্ত হাতে হাল ধরেন। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে এটা মোকাবিলা করবো।”
সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, “আমরা বাজারের সাথে আছি, ছিলাম এবং থাকবো। এই বাজার আমাদের। বাজারে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।”
তিনি বলেন, “কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি বিচারিক বিষয়, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তবে আমরা অনুরোধ করেছি কারো প্রতি যেন অবিচার না করা হয়। আমরা দাবি জানিয়েছি, নির্দোষ কাউকে যেন সাজা দেওয়া না হয়। একই সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগদান করেছেন এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। তারা যেন কাজটা চালু রাখেন এবং কমিশন ধীরে ধীরে সকল ভয় ভীতি কাটিয়ে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক সঙ্গে কাজ করেন সেই অনুরোধ আমরা তাদের কাছে জানিয়েছি।”
বৈঠকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এনটি/ইভা