সুন্দরবনে ট্রলার ফেলে পালালেন জেলেরা, ৩০ কেজি পারশে মাছের পোনা উদ্ধার
Published: 9th, March 2025 GMT
তখনো ভোরের আলো ফোটেনি। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খাল থেকে অবৈধভাবে পারশে মাছের পোনা আহরণ করে ফিরছিলেন জেলেদের একটি দল। বনের ভেতর দিয়ে তাঁদের দ্রুতগতির ট্রলার এগোচ্ছিল লোকালয়ের দিকে। এমন সময় সেখানে হাজির হন বনরক্ষীরা। তাঁদের দেখে মাছ ফেলে পালিয়ে যান জেলেরা।
পরে ট্রলার থেকে ৩০ কেজি পারশে মাছের পোনা উদ্ধার করেন সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা। আজ রোববার ভোরে সুন্দরবনের খুলনার কয়রা উপজেলার চরামুখা গ্রামসংলগ্ন কপোতাক্ষ নদে এ ঘটনা ঘটে।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা পারশে মাছের পোনা নিয়ে কয়রা বন আদালতে নিয়ে আসতে দুপুর হয়ে যায়। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়রার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উদ্ধার করা পারশে মাছের পোনাগুলো আদালতে আনা হয়েছে। আদালত ভবনের কাছে গর্ত খোড়া হচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন বনকর্মী। তাঁরা জানান, আদালতের নির্দেশে মৃত পারশে মাছের পোনাগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে।
সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোপন সংবাদে জেনেছিলাম, সুন্দরবন থেকে অসাধু জেলেরা অবৈধভাবে পারশে মাছের পোনা আহরণ করে লোকালয়ে ফিরছেন। এরপর কয়েকজন বনরক্ষীকে নিয়ে সুন্দরবনের আড়পাঙ্গাসী নদী ও কপোতাক্ষ নদের মাঝামাঝি এলাকায় আমরা ওত পেতে থাকি। আমরা ভোরের আবছা আলোয় দেখতে পাই, একটি ট্রলার খুব ধীরগতিতে কপোতাক্ষ নদ ধরে লোকালয়ের দিকে যাচ্ছে। টর্চলাইটের আলো ফেলতেই জেলেরা ট্রলারের গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। আমরা তাঁদের পিছু নিই। কিছুদূর গিয়ে জেলেরা ট্রলার ফেলে পালিয়ে যান।’
আনোয়ার হোসেন জানান, ওই ট্রলার তল্লাশি করে ৩০ কেজি পারশে মাছের পোনা ও নিষিদ্ধ ঘন ফাঁসের জাল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
পোনা ধরার জন্য ব্যবহৃত জালের কারণে নষ্ট হয় লাখ লাখ প্রজাতির জলজ প্রাণী। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাইকগাছা লোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি পারশে পোনা আহরণের বিপরীতে ১১৯ চিংড়ি, ৩১২ প্রাণিকণা ও ৩১টি অন্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হয়।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনে ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র বনের ভেতর ও পাশের নদ-নদীতে পারশে মাছের পোনা ধরছে। আহরণ করা পোনা আনা-নেওয়ার নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কপোতাক্ষ নদ ও শিবসা নদী। এক কেজি পারশে পোনার দাম দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা।
পোনা শিকারে জড়িত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুন্দরবন অভয়ারণ্যের নদীতে তাঁদের পোনা ধরতে প্রতিটি ট্রলারে ৮ থেকে ১০ জন জেলে আর ঘন দীর্ঘ মশারি জাল থাকে। জাল একবার টানলে দুই থেকে তিন মণ পারশে পোনা পাওয়া যায়। দুই দিন পরপর এসব ট্রলার পোনা নিয়ে বন থেকে লোকালয়ে ফিরে আসে। সুন্দরবনে কোনো অভিযান পরিচালনার আগেই রিয়াছাদ আলী নামের একজন দালাল জেলেদের জানিয়ে দেন। সতর্কসংকেত পেয়ে তাঁরা বনের মধ্যে পালিয়ে থাকেন। অভিযান শেষ হলে আবার তাঁরা পোনা ধরতে শুরু করেন।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কোথাও পারশে পোনা ধরার সুযোগ নেই। তারপরও অসাধু কিছু ব্যক্তির কারণে সুন্দরবন সুরক্ষায় আমাদের ভালো উদ্যোগগুলো নষ্ট হচ্ছে। জনবলসহ নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা পারশে পোনা নিধন বন্ধে চেষ্টা করছি। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে ট্রলার ফেলে পালালেন জেলেরা, ৩০ কেজি পারশে মাছের পোনা উদ্ধার
তখনো ভোরের আলো ফোটেনি। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খাল থেকে অবৈধভাবে পারশে মাছের পোনা আহরণ করে ফিরছিলেন জেলেদের একটি দল। বনের ভেতর দিয়ে তাঁদের দ্রুতগতির ট্রলার এগোচ্ছিল লোকালয়ের দিকে। এমন সময় সেখানে হাজির হন বনরক্ষীরা। তাঁদের দেখে মাছ ফেলে পালিয়ে যান জেলেরা।
পরে ট্রলার থেকে ৩০ কেজি পারশে মাছের পোনা উদ্ধার করেন সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা। আজ রোববার ভোরে সুন্দরবনের খুলনার কয়রা উপজেলার চরামুখা গ্রামসংলগ্ন কপোতাক্ষ নদে এ ঘটনা ঘটে।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা পারশে মাছের পোনা নিয়ে কয়রা বন আদালতে নিয়ে আসতে দুপুর হয়ে যায়। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়রার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উদ্ধার করা পারশে মাছের পোনাগুলো আদালতে আনা হয়েছে। আদালত ভবনের কাছে গর্ত খোড়া হচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন বনকর্মী। তাঁরা জানান, আদালতের নির্দেশে মৃত পারশে মাছের পোনাগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে।
সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোপন সংবাদে জেনেছিলাম, সুন্দরবন থেকে অসাধু জেলেরা অবৈধভাবে পারশে মাছের পোনা আহরণ করে লোকালয়ে ফিরছেন। এরপর কয়েকজন বনরক্ষীকে নিয়ে সুন্দরবনের আড়পাঙ্গাসী নদী ও কপোতাক্ষ নদের মাঝামাঝি এলাকায় আমরা ওত পেতে থাকি। আমরা ভোরের আবছা আলোয় দেখতে পাই, একটি ট্রলার খুব ধীরগতিতে কপোতাক্ষ নদ ধরে লোকালয়ের দিকে যাচ্ছে। টর্চলাইটের আলো ফেলতেই জেলেরা ট্রলারের গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। আমরা তাঁদের পিছু নিই। কিছুদূর গিয়ে জেলেরা ট্রলার ফেলে পালিয়ে যান।’
আনোয়ার হোসেন জানান, ওই ট্রলার তল্লাশি করে ৩০ কেজি পারশে মাছের পোনা ও নিষিদ্ধ ঘন ফাঁসের জাল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
পোনা ধরার জন্য ব্যবহৃত জালের কারণে নষ্ট হয় লাখ লাখ প্রজাতির জলজ প্রাণী। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাইকগাছা লোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি পারশে পোনা আহরণের বিপরীতে ১১৯ চিংড়ি, ৩১২ প্রাণিকণা ও ৩১টি অন্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হয়।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনে ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র বনের ভেতর ও পাশের নদ-নদীতে পারশে মাছের পোনা ধরছে। আহরণ করা পোনা আনা-নেওয়ার নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কপোতাক্ষ নদ ও শিবসা নদী। এক কেজি পারশে পোনার দাম দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা।
পোনা শিকারে জড়িত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুন্দরবন অভয়ারণ্যের নদীতে তাঁদের পোনা ধরতে প্রতিটি ট্রলারে ৮ থেকে ১০ জন জেলে আর ঘন দীর্ঘ মশারি জাল থাকে। জাল একবার টানলে দুই থেকে তিন মণ পারশে পোনা পাওয়া যায়। দুই দিন পরপর এসব ট্রলার পোনা নিয়ে বন থেকে লোকালয়ে ফিরে আসে। সুন্দরবনে কোনো অভিযান পরিচালনার আগেই রিয়াছাদ আলী নামের একজন দালাল জেলেদের জানিয়ে দেন। সতর্কসংকেত পেয়ে তাঁরা বনের মধ্যে পালিয়ে থাকেন। অভিযান শেষ হলে আবার তাঁরা পোনা ধরতে শুরু করেন।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কোথাও পারশে পোনা ধরার সুযোগ নেই। তারপরও অসাধু কিছু ব্যক্তির কারণে সুন্দরবন সুরক্ষায় আমাদের ভালো উদ্যোগগুলো নষ্ট হচ্ছে। জনবলসহ নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা পারশে পোনা নিধন বন্ধে চেষ্টা করছি। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’