মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে জড়িতদের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন মাগুরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ জনতা। 

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা নানা স্লোগান দিয়ে আদালতে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে সেনাবাহিনী তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে। বিক্ষুব্ধরা আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। 

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বায়োজিদ হোসেন জানান, নির্মম এই শিশু ধর্ষণের ঘটনায় আমরা ক্ষব্ধ। যে কারনে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে প্রতিবাদ জানাতে এসছেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ জনগণও যোগ দিয়েছে। তারা ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানান। 

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম সমকালকে জানান, শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার ৪ আসামি আগেই হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। চার আসামি হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব (১৮), সজীবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগম (৪০)।

তিনি আরও বলেন, শিশুটির মা ঢাকা থেকে স্বামী ও বড় মেয়েকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)-এর ক/ ৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়।

এজাহারে শিশুটির মা উল্লেখ করেন, বড় মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি হিটুর স্ত্রী ও আরেক ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, চার মাস আগে বড় মেয়ের সঙ্গে সজিবের বিয়ে হয়। এর পর থেকে বড় মেয়েকে তার শ্বশুর অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি ওই পরিবারের সবাই জানলেও প্রতিবাদ করেননি।

মামলায় বলা হয়েছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে শিশুটি ঘুমায়। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই। মেঝেতে পড়ে আছে। তখন সে বড় বোনকে জানায়, গোপনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। বিষয়টি হালকাভাবে নেন তিনি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে একই কথা জানান। তখন তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে শিশুটি জানায়, রাতে দুলাভাই দরজা খুলে দিয়েছিল। তখন তার বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় চিৎকার করার চেষ্টা করলে গলা চেপে ধরা হয়েছিল। পরে তাকে বোনের কক্ষে ফেলে রেখে যায় হিটু শেখ। বোন বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মাকে জানাতে গেলে সজীব ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন। পরে দুই বোনকে দুই কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে সজিবের মা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তিনি।

মেয়েটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার ২০ দিন আগে সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। তিনি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যান। সেখান থেকে ফিরে দেখেন ঘরে আলো বন্ধ। এ সময় হঠাৎ একজন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে তিনি বুঝতে পারেন, জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি তার শ্বশুর হিটু শেখ। বিষয়টি স্বামী সজিবকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। পরে বাবার বাড়ি চলে যান। আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন না। বাবা-মা বুঝিয়ে ছোট বোনকে সঙ্গে করে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়ি।

পরিবার জানায়, আট বছরের শিশুটিকে গত বুধবার ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।

অবস্থার আরও অবনতি হলে বিকেল ৫টার দিকে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ র বড় ম য় ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

সংকটাপন্ন বনাঞ্চলে আবার পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ 

কক্সবাজারে ৭০০ একর বনভূমিতে এবার ডিজিটাল পার্ক স্থাপন করতে চায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনটিতে রয়েছে ৫৮ প্রজাতির দুর্লভ বৃক্ষ এবং বিপন্ন হাতি, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বাস। তার পরও তাতে চলছে পার্ক স্থাপনের তোড়জোড়।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে ঝিলংজা মৌজার এ জমি স্থায়ী লিজ, ভাড়াভিত্তিক অথবা চুক্তিভিত্তিক লিজ নেওয়ার জন্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বি-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানটি। গত রোববার এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি বন অধিদপ্তর থেকে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। চিঠিতে সরেজমিন তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ নভেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সিইও নাদিরা আক্তার এ আবেদন করেন।

মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির এ এলাকাটি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। শুধু তাই নয়, ৭০০ একর এ বনভূমি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নামে বন্দোবস্ত দিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ভূমি মন্ত্রণালয় বনভূমির এই বরাদ্দ বাতিল করে।

চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ৭০০ একর বনভূমি লিজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা আবেদনে জমিটি পতিত বলে উল্লেখ করেছে। বাস্তবে পুরো জায়গাটি প্রাকৃতিক বনসমৃদ্ধ পাহাড়ি এলাকা। 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বি-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও নাদিরা আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে আবারও ফোন করলে একজন রিসিভ করে এ প্রতিবেদককে জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য জনস্বার্থে পার্কটি নির্মাণে আবেদনটি করা হয়েছে। সরকার জায়গাটি দিলে করব, না দিলে আমরা করব না। 

তাঁর এ বক্তব্যটি নাদিরা আক্তারের বক্তব্য বলেও জানান তিনি। নিজেকে ঢাকার একজন ব্যবসায়ী দাবি করে তিনি নাম বা বিস্তারিত পরিচয় দেননি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ১৯৯৯ সালে ওই ঝিলংজা মৌজার বনভূমিসহ কক্সবাজার সদর ও সাগর সৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুসারে ইসিএ এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিবেশ-পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো নিষেধ। কিন্তু ২০২১ সালে ওই বনভূমিকে খাস জমি দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়।

কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) তথ্যমতে, ‘কক্সবাজার জিয়াউর রহমান ডিজিটাল পার্ক’ স্থাপনের জন্য আবেদনকৃত জায়গায় ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এর মধ্যে আছে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেরাসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীর মধ্যে এশীয় বন্যহাতি, বানর, বন্যশূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি রয়েছে এ বনভূমিতে। 

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান উপদেষ্টা আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা মৌজাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে বনভূমির গাছ কাটাসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন নিষিদ্ধ করা হয়। ৭০০ একর রক্ষিত বনও এই সংকটাপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদে বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার রয়েছে। দেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় নতুন করে এ বনভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া জনস্বার্থবিরোধী।

১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার এ এলাকাটি রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্যহাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমিতে। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার শুধু বন বিভাগের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ