মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে মাগুরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার দাবিতে মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে আজ বেলা সোয়া এগারোটার দিকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

গতকাল শনিবার শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। এতে শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের গতকাল বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়।

মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার গতকাল বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) ভর্তি করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

আলাউদ্দিন আজ বেলা একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার আসামি কারাগারে আছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এখনো রিমান্ড শুনানি হয়নি, প্রক্রিয়া চলছে।’

আরও পড়ুনবোনের স্বামীর সহায়তায় শিশুটিকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ১৯ ঘণ্টা আগে

আদালতফটকের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
অন্যদিকে বেলা ১১টার দিকে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ভেতর থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় মূল ফটক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চৌরঙ্গী মোড় থেকে নতুন বাজার সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেপ্তার ৪২২ ঘণ্টা আগে

শিক্ষার্থীরা ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। বিদ্যমান আইনে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায় বলে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। না হলে আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে ‘মার্চ টু মাগুরা’ কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করেন তাঁরা। বেলা একটার পর ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনীর একটি দল। পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের আশ্বাস পেয়ে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা আদালতের ফটক থেকে সরে যান।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে দেখতে সিএমএইচে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বললেন দোষীরা যেন ছাড় না পায় ২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ‘শিশু ধর্ষণে’ মীমাংসার সালিস থেকে অভিযুক্ত বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

কুমিল্লা লালমাইয়ে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। পরে গ্রামের কয়েকজন মাতবর ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সালিসে আয়োজন করেন। সেখানে ধর্ষণের ঘটনায় ওই বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। তবে সালিসের এক পর্যায়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত ওই বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করে। 

জানা যায়, শনিবার রাত ১০টায় লালমাইয়ে ভুক্তভোগী শিশুটির বাড়িতে সালিস বসে। সেখানে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু গভীর রাতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সেখানে পৌঁছে শিশুটির মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শুনে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে আটক করে। পরে রোববার বিকেলে শিশুটির মা বাদী হয়ে ওই বৃদ্ধের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে লালমাই থানায় মামলা দায়ের করেন।

শিশুটির চাচা বলেন, নির্যাতিত শিশুটির ধর্ষণের অভিযোগের বর্ণনা শুনে গ্রামের মাতবরেরা অভিযুক্ত বৃদ্ধকে সালিস বৈঠকে নিয়ে আসতে বললে গতকাল রাত ১০টার দিকে গ্রামের কয়েকজন ছেলে তাকে একটি চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। বৈঠকে দুই পক্ষের লোকজন একমত হয়ে ওই বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় তার পক্ষে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে রায় কার্যকরও করা হয়েছিল। খবর পেয়ে রাত দুইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে এলে সালিস বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়, পরে পুলিশও আসে। অভিযোগের বর্ণনা শুনে তারা বৃদ্ধকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। 

সালিসে উপস্থিত ফজলুর রহমান মিন্টু বলেন, গ্রামের গণ্যমান্যদের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে শনিবার রাতে সালিস বৈঠক হয়েছে। শিশুটির ওষুধ খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা রায় করেছিল সালিসের বিচারকরা। বৃদ্ধের পক্ষে মাতবরের কাছে ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে রায়ও কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু রাত ২টায় সেনাবাহিনীর টিম গিয়ে বৃদ্ধকে আটক করে নিয়ে গেলে সালিস বৈঠক সমাপ্ত হয়।

স্থানীয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই রেদোয়ান হোসেন বলেন, লালমাই আর্মি ক্যাম্পের একটি টিম যাওয়ার পর খবর পেয়ে আমরা শিশুটির বাড়িতে যাই। ভিকটিম ও তার পরিবারের কথা শুনে আমরা বৃদ্ধকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। 

লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে শিশুটির মা মামলা করেছেন। এ মামলায় ওই বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় ভিকটিম ওই শিশুটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য রোববার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ