স্বামী হারানোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি সুমী আক্তার। তাঁর স্বামী সেলিম তালুকদার জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর সাত মাস পর সুমী আক্তারের কোলজুড়ে এসেছে এক শিশু। সন্তানকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন সুমী।

ঝালকাঠি শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে সুমী আক্তার কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। পরে রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তাঁর স্মৃতি হিসেবে এই সন্তানই আমার কাছে রয়ে গেল। আমি চাই, আমার সন্তান যেন কখনো কারও কাছে হাত না পাতে। আমি যত দিন বাঁচব, শহীদ সেলিমের স্ত্রী পরিচয় নিয়েই বাঁচতে চাই।’

নিহত সেলিম তালুকদারের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে। গত বছর ১৮ জুলাই রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম। ১৩ দিন পর ৩১ জুলাই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা সেলিম নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট সেলিম তালুকদার ও সুমী আক্তারের হয়।

ছেলে হারানোর শোকে এখনো পাথর মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘যদি সেলিম বেঁচে থাকত, প্রথম সন্তানের জন্মে কত আনন্দ পেত! কিন্তু সে তা দেখার সুযোগ পেল না।’ তিনি রাষ্ট্রের কাছে সেলিম তালুকদারের যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মাননার দাবি জানান।

জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, ‘শহীদ সেলিম তালুকদারের পরিবারের জন্য আজ (গতকাল) এক আবেগঘন দিন। সেলিমের এই আত্মত্যাগের কথা আমরা কখনো ভুলব না। আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর পরিবারের কল্যাণ ও নবজাতকের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে ২০০ কোটি ডলার আয় করছে—ট্রাম্পের এ দাবি কি সত্য

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে শুল্কের খড়্গ চাপানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে বারবারই যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ‘অন্যায্য বাণিজ্যের’ শিকার হচ্ছে, সেই দাবি করছেন।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশে বিদেশি পণ্য প্রবেশের ওপর শুল্ক বা আমদানি কর ধার্য করেন। এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পণ্যে আরোপ করেছেন সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। প্রতিশোধ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্যে ধার্য করেছে বড় অঙ্কের শুল্ক।

শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করা দাবিগুলোর কিছু প্রমাণিত নয় বা এমনকি সেসব মিথ্যা। বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে বিবিসি ভেরিফাই।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও সম্প্রতি দাবি করেছেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে দেশটির আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।যুক্তরাষ্ট্র কি দৈনিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় করছে

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তাঁর নতুন শুল্ক ঘোষণার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আমরা শুল্ক দিয়ে প্রচুর আয় করছি—দিনে (২ বিলিয়ন) ২০০ কোটি ডলার।’

ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে সমর্থন করে, এমন কোনো প্রকাশিত তথ্য বিবিসি ভেরিফাই খুঁজে পায়নি। যদিও শুল্ক থেকে পাওয়া কত অর্থ ফেডারেল সরকারে পাঠানো হয়, তা নিয়ে প্রতিদিন বিবৃতি দেয় মার্কিন অর্থ বিভাগ।

৭ এপ্রিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক আয় সর্বোচ্চ ২১৫ মিলিয়ন (২১ কোটি ৫০ লাখ) ডলার। এটি ট্রাম্পের দাবি করা অঙ্কের চেয়ে অনেক কম।

অবশ্য ট্রাম্পের ওই দাবি শুল্ক থেকে বছরের সামনের দিনগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অনুমেয় আয়ের ভিত্তিতে হতে পারে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র দৈনিক ৯ বিলিয়ন (৯০০ কোটি) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। কিছু বিশ্লেষক হিসাব কষে দেখেছেন, গত ২ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাম্পের আরোপ করা গড় শুল্কহার ছিল ২২ শতাংশ। সে হিসাবে আমদানি করা পণ্য থেকে দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয় হতে পারে ২ বিলিয়ন (তবে নতুন শুল্ক ঘোষণায় দেশটিতে পণ্য আমদানি কমতে পারে)। এখানে যে আয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির পরিমাণ আগের মতোই ধরা হয়েছে।

ট্রাম্পের ওই দাবির ভিত্তি ৬ এপ্রিল তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও হতে পারে।

আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেন ট্রাম্প, এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ১৬ ঘণ্টা আগে

বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও দাবি করেছিলেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।

ট্রাম্পের দাবির পক্ষে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য জানতে চেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই।

আপনারা জানেন, আমরা তাদের (ইইউ) কাছ থেকে লাখ লাখ গাড়ি নিই। তারা কোনো গাড়ি নেয় না। তারা আমাদের কৃষিপণ্যও নেয় না। তারা কিছুই নেয় না।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টচীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কি ১ লাখ কোটি ডলার

একটি দেশ যখন অন্য দেশের কাছে থেকে রপ্তানির তুলনায় পণ্য আমদানি বেশি করে, তখন বাণিজ্যঘাটতি দেখা দেয়। ট্রাম্পের দাবি, চীনের সঙ্গে তার এ ঘাটতির পরিমাণ বিশাল।

৭ এপ্রিল ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের ১ লাখ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি।’

রপ্তানি বাণিজ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে, ঠিক। তবে ট্রাম্প যেমনটা দাবি করেছেন, তেমনটা নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ