Prothomalo:
2025-04-09@22:31:22 GMT

ইফতারের পর ঘুম পায় কেন

Published: 9th, March 2025 GMT

রমজানে দীর্ঘ সময় না-খেয়ে থাকার পর ইফতার শরীরকে পুনরায় শক্তি ও উদ্যম ফিরিয়ে দেওয়ার একটি সুযোগ নিয়ে আসে। তবে ইফতারের পরপরই অনেকে ক্লান্তি, মাথাব্যথা বা ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন এবং জেগে থাকতে রীতিমতো লড়াই করতে হয়। কেন ইফতারের পর হঠাৎ করে ঘুম পায়? কারণগুলো কী এবং কীভাবে এই ঘুম এড়ানো সম্ভব—তা নিয়ে আজ কথা বলব।

ইফতারের পর ঘুম আসার কারণ

খাবার খাওয়ার পর কিছুটা ক্লান্তি অনুভব করা স্বাভাবিক এবং এতে উদ্বেগের কিছু নেই। চিকিৎসা পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ইমান জামাল ব্যাখ্যা করেন, ‘ইফতারের পর শরীর আরাম অনুভব করে এবং অলসতা বেড়ে যায়, এর মূল কারণ অন্ত্রের হজম প্রক্রিয়া।’ তিনি বলেন, ‘ইফতারে হঠাৎ বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণের ফলে আমাদের হজমের গতি দ্রুত বেড়ে যায়। তাই মস্তিষ্ক অন্ত্রের দিকে বেশি পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করে, যাতে হজম প্রক্রিয়াটি সহজ হয়। ফলে শরীরের অন্যান্য অংশ, বিশেষ করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কিছুটা কমে যায়। এ কারণেই ইফতারের পর আমরা ক্লান্তি ও তন্দ্রাচ্ছন্ন অনুভব করি।’

আরও পড়ুনসুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত০৭ মার্চ ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘মেডিকেল নিউজ টুডে’র তথ্য অনুযায়ী, ইফতারের পর শরীরে ক্লান্তির অন্যতম কারণ হলো ‘সেরোটোনিন’ নামক রাসায়নিকের উৎপাদন বৃদ্ধি, যা ঘুম ও প্রশান্তি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। ‘ট্রিপটোফ্যান’ নামে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে পাওয়া যায়, এটি সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করে। আবার কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার শরীরে ট্রিপটোফ্যান শোষণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে যদি ইফতারে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হয়, তবে এটি ঘুমের প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্ভাবনা

 ‘হেলথ লাইন’ ওয়েবসাইটের মতে, কিছু ক্ষেত্রে ইফতারের পর ক্লান্তি বা সারা দিন ঘুম ঘুম অনুভব করা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। যেমন: ডায়াবেটিস, খাবারে অ্যালার্জি, রক্তাল্পতা, থাইরয়েডজনিত সমস্যা ইত্যাদি। 

আরও পড়ুনশয়তানের ধোঁকার কাহিনি০৭ মার্চ ২০২৫

ঘুম এড়াতে

 ১.

কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন: পুষ্টিবিদ ইমান জামাল পরামর্শ দেন, ইফতারে কিছু খাবার পরিহার করলে বা কম খেলে ঘুমের সমস্যা কমানো যেতে পারে। যেমন ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার ও ফলের জুস (যা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়), সাদা চালের ভাত, পাস্তা, সাদা আটার তৈরি খাবার (যেমন সাদা পাউরুটি ও অন্যান্য বেকারি আইটেম), সাদা চিনি ও উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার ইত্যাদি।

 ২. স্বাস্থ্যকর উপায়ে ইফতার করুন: ইমান জামাল বলেন, ‘ইফতার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে করলে আকস্মিক ঘুম ঘুম ভাব এড়ানো সম্ভব।’ তার মতে ইফতারের সঠিক পদ্ধতি হলো:

 ক) একটি খেজুর ও এক গ্লাস পানি দিয়ে রোজা ভাঙা,

 খ) এরপর মাগরিবের নামাজ আদায় করা

 গ) নামাজের পর প্রথমে স্যুপ দিয়ে মূল খাবার শুরু করা।

 তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘খেজুর খেলে শরীর প্রয়োজনীয় ফাইবার ও প্রাকৃতিক চিনি পায়, যা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। স্যুপ খাওয়া হজমের জন্য উপকারী, কারণ এটি পাকস্থলীকে খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে।’

 ৩. ‘প্লেট রুল’ অনুসরণ করুন: পুষ্টিবিদরা ইফতারের সময় সুষম খাবার গ্রহণের গুরুত্ব ওপর জোর দেন। পুষ্টিবিদ ইমান জামাল পরামর্শ দেন, ‘কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি, এবং ইফতারের শুরুতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে সালাদ খাওয়া উচিত।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘সালাদ শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও লবণ সরবরাহ করে, যা দীর্ঘ সময় রোজা রাখার ফলে শরীরে ঘাটতি দেখা দেয়। এটি পাকস্থলী ভরিয়ে রাখার অনুভূতি দেয়, ফলে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য ভারী খাবার গ্রহণ কমানো সম্ভব হয়।’ তাই তার মতে ‘প্লেট রুল’ অনুসরণ করা যেতে পারে। প্লেট রুল হলো, প্লেটের অর্ধেক অংশ সবজি বা সালাদ দিয়ে পূরণ করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক দুই ভাগে বিভক্ত হবে—এক ভাগ প্রোটিন, আর অন্য ভাগ স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট (যেমন গমের রুটি বা লাল চাল)।

 ৪. চা-কফি খাওয়ার সময় ঠিক করুন: পুষ্টিবিদদের মতে, ‘ইফতারের পরপরই চা বা কফি পান না করাই ভালো।’ কারণ চা ও কফিতে থাকা ‘ট্যানিন’ উপাদান আয়রনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীরের আয়রন শোষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রক্তাল্পতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই ইফতারের এক থেকে দুই ঘণ্টা পর চা বা কফি পান করা উচিত।

আরও পড়ুনযে সাহাবির মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল ০৮ মার্চ ২০২৫

৫. ইফতার ধাপে ধাপে করুন: ইফতার করার ধরনও ঘুমের প্রভাব কমাতে পারে। পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, ইফতারের মূল খাবার খানিকটা দেরিতে খেলে শরীরকে খাবার ও পানীয় গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ পাওয়া যায়। যেমন:

 ক) প্রথমে একটি খেজুর ও এক গ্লাস পানি পান করুন।

 খ) তারপর ১০-১৫ মিনিট বিরতি নিন, নামাজ আদায় করুন।

 গ) এরপর ধীরে ধীরে ইফতার করুন, শুরুতে হালকা খাবার বা স্যুপ খাওয়া উত্তম।

 ধাপে ধাপে ইফতার গ্রহণ করলে হজমতন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না এবং শরীরে রক্তপ্রবাহের ভারসাম্য বজায় থাকে, ফলে ইফতারের পর হঠাৎ ঘুম ঘুম ভাব কম হয়।

 ৬. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়াও ইফতারের পর ঘুম ঘুম ভাবের অন্যতম কারণ। ইফতারের পর শরীর আরাম অনুভব করে এবং পরিপূর্ণ পাকস্থলীর কারণে অলসতা বেড়ে যায়, বিশেষত যদি আগের রাতে ভালো ঘুম না হয়। তাই ঘুমের রুটিন ঠিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনআল্লাহ যেভাবে গুনাহ ক্ষমা করেন১৫ ঘণ্টা আগে

৭. ব্যায়াম করতে ভুলবেন না: ব্যায়াম শরীরকে দিনের মধ্যে চাঙা রাখতেও সাহায্য করে। ফলে খাবারের পর অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অলসতা কম হয়। এছাড়া, সক্রিয় না থাকলে শরীর সংরক্ষিত শক্তি জমিয়ে রাখে, যা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যায়। অন্যদিকে, ব্যায়াম করলে শরীরে শক্তির প্রবাহ নিশ্চিত হয়, যা সারা দিন চাঙা থাকতে সহায়তা করে।

 সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম ও শরীরচর্চা নিশ্চিত করলে রমজানে ইফতারের পর ঘুম ঘুম ভাব কমিয়ে শরীরকে আরও সক্রিয় রাখা সম্ভব।

 সূত্র: আল জাজিরা ডট নেট

আরও পড়ুনউয়ায়েস করনির কাহিনি১০ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ ব র গ রহণ পর য প ত অন য ন য গ রহণ র র অন য পর ম ণ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

দুপুরে খাওয়ার পরই ঘুম পায়? মেনে চলুন কিছু টিপস

দুপুরবেলা ভরপেট ভাত খাওয়ার পর অনেকেরই ঘুমানোর অভ্যাস আছে। অফিস থাকলেও ঘুম ঘুম লাগে। কাজে মন বসে না। বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে হয়। 

পুষ্টিবিদরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনলেই খাওয়ার পর ফুরফুরে থাকতে পারবেন। যেমন-

ব্যালেন্সড ডায়েট: দুপুরের খাদ্য তালিকা থেকে পাস্তা, পেস্ট্রি, কোল্ড ড্রিঙ্ক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। এসব খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে শরীরে ক্লান্তি আনে। এর  ফলে শরীরে আলস্য বাড়ে। এই পরিস্থিতি এড়াতে দুপুরের খাদ্যতালিকায় সাদা ভাত বা ব্রাউন রাইস, রুটি, চিকেন, মাছ, সবজি, পনির, অ্যাভোকাডো-এসব রাখতে পারেন।  খাদ্য তালিকায় শর্করা-ফ্যাট ও প্রোটিনের ভারসাম্য থাকলে অলসতা কাটবে।

ভারী ও তৈলাক্ত খাদ্য বর্জন: অলসতা কাটাতে যেকোনও ধরনের ভারী ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এসব খাবার যেমন হজমের গোলমাল ঘটায় তেমনি শরীরকে অলস করে দেয়। এছাড়া এই ধরনের খাকার খেতে সুস্বাদু হলেও তা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। 

খাওয়ার আগে ও পরে পানি পান: শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। খাওয়ার আগে ও পরে নিয়ম করে পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে। 

নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস: দুপুরবেলা ভরেপেট না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খাবার খান। তাহলে সহজে অলসতা ভর করবে না। 

খাওয়ার পর হাঁটা: দুপুরে খাওয়ার পর ১০- ১৫ মিনিটের হাঁটা শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। এতে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়। সেই সঙ্গে দেহে রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রেখে সতেজ থাকতে সাহায্য করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুপুরে খাওয়ার পরই ঘুম পায়? মেনে চলুন কিছু টিপস