অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে ঝড়-বন্যায় তিন লাখের বেশি মানুষ অন্ধকারে
Published: 9th, March 2025 GMT
শক্তি হারিয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেড। ঝড়ের তাণ্ডবে কুইন্সল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে তিন লাখের বেশি মানুষ আজ রোববারও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন।
ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিতে কোনো কোনো এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বন্যার পানি থেকে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের মধ্যে একটি সামরিক যান দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হয়েছেন ১৩ সেনাসদস্য।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া আলফ্রেড গতকাল শনিবার উপকূলের কাছাকাছি এসে শক্তি হারিয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। পরে ক্রান্তীয় ঝড়ে রূপ নিয়ে কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী ব্রিসবেনের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে।
ঝড়ের কারণে বিপদের ঝুঁকি ‘এখনো কাটেনি’ জানিয়ে কর্মকর্তারা আজও স্থানীয় লোকজনকে বাড়ির ভেতর সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলেছেন।
ঝড়ে অনেক গাছ উপড়ে গেছে, অনেক এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, নিচু এলাকার রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল তারা ৬১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। তিনি আগের দিন নিখোঁজ হয়েছিলেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের ডোরিগোতে বন্যার পানিতে তাঁর গাড়ি আটকে গিয়েছিল।
জরুরি উদ্ধারকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে তাঁর গাড়ি থেকে বের হয়ে নদীর তীরের একটি গাছে উঠতে দেখেছিলেন। কিন্তু পানির তোড় বেশি থাকায় উদ্ধারকর্মীরা তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারেননি। একপর্যায়ে পানির তোড়ে ভেসে যান তিনি।
এ ঘটনার পরদিন গতকাল পুলিশ ওই এলাকায় একটি মৃতদেহ খুঁজে পায়। ধারণা করা হচ্ছে, মৃতদেহটি ভেসে যাওয়া ব্যক্তির।
গতকাল পৃথক দুর্ঘটনায় ১৩ সামরিক সদস্য আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ব্রিসবেন থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর লিসমোরে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেন, একটি সরু সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক উল্টে যায় ও সেটি আরেকটি ট্রাককে আঘাত করে।
রাজ্যের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা থেকে শুরুতে বলা হয়েছিল, এ দুর্ঘটনায় তাঁরা ৩৬ জনকে চিকিৎসা দিয়েছেন। পরে বলা হয়, সেখানে ৩৬ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন আহত হয়েছেন।
ঝড়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য সামরিক বাহিনীর একটি দলকে লিসমোরে মোতায়েন করা হয়েছিল। আহত ব্যক্তিরা ওই দলের সদস্য।
আলফ্রেডের প্রভাবে গত শুক্রবার রাত থেকেই ব্রিসবেনে ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। তবে গতকাল ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ব্রিসবেন ভয়াবহ এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়। এর আগে ১৬ দিন ধরে সমুদ্রে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছিল আলফ্রেড।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র সব ন আলফ র ড দ র ঘটন উপক ল গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিষ দিয়ে তিনটি গরুকে মেরে ফেলার অভিযোগ
মাটির দেয়ালে জং ধরা টিনের চাল। সেই চালের এক পাশে পোষা তিনটি গাভি, আরেক পাশে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বসবাস। গাভির দুধ বিক্রি করে চলত সংসার। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গাভি তিনটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আজিজুল ইসলাম।
আজিজুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর গরু তিনটিকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবেশী মজনু মিয়ার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি কেন গরু মারতে যাব! আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা তথ্য রটানো হচ্ছে।’
আজিজুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁর ঘরে থাকা গাভি তিনটি মারা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মারা যাওয়া গরু তিনটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্ত করছে।
আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। দরিদ্র হওয়ায় আজিজুল ইসলামের শ্বশুর মহির উদ্দিন ১০ বছর আগে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা বাছুর দেন। সেই বাছুর লালন–পালন করার পর পূর্ণবয়স্ক হয়ে অনেকগুলো বাছুর জন্ম দেয়। এর মধ্যে তিনটি বকনা বাছুর পালন করে গাভিতে পরিণত করেন আজিজুল। সেই গাভির দুধ বিক্রি করে পাঁচ সদস্যের সংসার চলত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাড়ির অদূরেই বাঁশঝাড়ে গাভি তিনটি বেঁধে রাখার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর গতকাল শনিবার রাতে তিনটি গাভি মারা যায়। তিনটি গাভির মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একসঙ্গে তিনটি গরু মারা যাওয়া আজিজুল ইসলামের বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড়। উঠানের সামনে ময়নাতদন্ত করছে প্রাণিসম্পদের দল।
বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন আজিজুলের স্ত্রী স্বপনা বেগম। এ সময় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘হামার গ্রামের মজনুর সাথে মোর ঝগড়া চলছে। মজনু ২০ দিন আগোত হুমকি দিছিল, মোক নিঃস্ব করি দিবে, মোর সংসার ফকির করতে যা করা লাগে করবে। মজনু ওর কথা পালন করছে, মোক ফকির বানাইল। এ্যালা মুই নিঃস্ব। ওয় মোর গরু বিষ দিয়ে মারি ফেলাইছে। গরুগুলার কী দোষ? ওয় মোক মারত। মুই ওর বিচারের জন্যে থানায় অভিযোগ দিছি। মুই সঠিক বিচার চাই।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখায়ের বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর টিম নিয়ে আজিজুল ইসলামের বাড়িতে যাই। গাভিগুলোর প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনটি গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় মালিক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।