শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ মাদ্রাসার নিরাপত্তাপ্রহরীকে গণপিটুনি
Published: 9th, March 2025 GMT
নরসিংদীতে ছয় বছর বয়সী এক শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদ্রাসার নিরাপত্তাপ্রহরীকে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা এসে আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।
শনিবার (৮ মার্চ) রাত ৮টার দিকে শহরতলীর গাবতলি এলাকার একটি মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত নিরাপত্তাপ্রহরী সাইফুল ইসলাম (৫০) কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দুলাল মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিশুটি মাদ্রাসার শিক্ষক সামসুল ইসলামের কাছে যৌন হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করলে স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত নিরাপত্তাপ্রহরীকে গণপিটুনি দেয়।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ উত্তেজিত জনতার হাত থেকে নিরাপত্তাপ্রহরীকে উদ্ধারে এলে ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পরে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আহতাবস্থায় নিরাপত্তাপ্রহরীকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেন।
মাদ্রাসার শিক্ষক সামসুল ইসলাম বলেন, ‘‘শিশুটি আমার কাছে অভিযোগ করেছিল। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু, স্থানীয়রা জেনে উত্তেজিত হয়ে ওই নিরাপত্তাপ্রহরীকে গণপিটুনি দেয়।’’
নরসিংদী সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, ‘‘যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযুক্ত নিরাপত্তাপ্রহরীকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণচেষ্টা মামলার প্রস্তুতি চলছে।’’
ঢাকা/হৃদয়/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চীন ও ইউরোপ কীভাবে মার্কিন শুল্ক ঝড় রুখবে
অ্যাডাম স্মিথের লেখা বিখ্যাত বই দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস অর্থনীতির জগতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। স্মিথ বলেছিলেন, ভাগ ভাগ করে কাজ করলে উৎপাদন ও দক্ষতা বাড়ে। দেশগুলোর মধ্যেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। যে দেশ যেটা সবচেয়ে ভালো করতে পারে, সেটাই উৎপাদন করবে এবং অন্য দেশের সঙ্গে বিনিময় করবে। কিন্তু শুল্ক বা ট্যারিফের মতো বাধাগুলো এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, অর্থনীতিকে করে তোলে অকার্যকর এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষতিই বেশি হয়।
এই সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও শুল্কনীতির পক্ষে সওয়াল করছেন। তিনি দাবি করেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ‘আমেরিকাকে আবার মহান’ করে তোলা যাবে। ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’ অনুযায়ী, যেসব দেশ আমেরিকান পণ্যে শুল্ক বসায়, তাদের পণ্যের ওপর আমেরিকাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। এতে নাকি আমেরিকার শিল্প এবং চাকরি রক্ষা পাবে এবং রাজস্বও বাড়বে।
শুল্ক আসলে কী করেকিন্তু বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। শুল্ক মূলত ভোক্তা ও ব্যবসার ওপর একধরনের করের মতো কাজ করে। এতে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ে, যার ফলাফল হয় মূল্যস্ফীতি। যেসব শিল্প বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহার করে, তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় আর এই বাড়তি খরচ পড়ে সাধারণ ক্রেতার ঘাড়ে। অন্যদিকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক বসিয়ে অন্যান্য দেশও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। ফলে মার্কিন রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিদেশি বাজার হারায় এবং এর প্রভাবে চাকরি হারান বহু মানুষ। এককথায়, সাময়িক যে রাজস্ব আসে, তা এই আর্থিক ক্ষতির তুলনায় নেহাতই সামান্য।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রাজিল এবং ভারতকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মূল লক্ষ্য ইউরোপের এমন সব খাত, যেগুলোর প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে ইউরোপের গাড়িশিল্প এই শুল্কের বড় শিকার হতে পারে।
সেই সঙ্গে যন্ত্রপাতি, ওষুধ এবং মহাকাশপ্রযুক্তি—এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতও মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে শুল্কসংক্রান্ত উত্তেজনা চলতে থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক সহযোগিতা ও মুক্তবাণিজ্যের বদলে যদি দেশগুলো একে অপরের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দেয়, তাহলে ক্ষতিটা সবারই হবে।
আরও পড়ুনবিশ্ব চালাবে কে—চীন নাকি ইউরোপ২০ ঘণ্টা আগেইউরোপ যে ঝামেলায় পড়েছেএই মুহূর্তে ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতারা কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। একদিকে বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদনে চীন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপও ক্রমেই বাড়ছে। চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবন ও উৎপাদনদক্ষতা ইউরোপীয় গাড়িশিল্পের জন্য একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ইউরোপ এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
এর মধ্যে আরও চাপ তৈরি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বড় বড় ইউরোপীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনকেন্দ্র সরিয়ে আনার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাঁর যুক্তি, এতে আমেরিকায় চাকরি তৈরি হবে এবং অর্থনীতি মজবুত হবে।
অথচ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা শিক্ষিত পেশাজীবীদের অভিবাসনের মাধ্যমেও যুক্তরাষ্ট্র অনেক লাভবান হচ্ছে। ইলন মাস্কের কথাই ধরা যাক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বড় হয়েছেন, পড়ালেখা করেছেন কানাডায় এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে এসে টেসলা ও স্পেসএক্সের মতো বৈপ্লবিক কোম্পানি গড়ে তুলেছেন।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট, চীনা প্রধান মন্ত্রী ও ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট বেইজিং-এ এক সংবাদ সম্মেলনে, জুলাই ২০১৮