মায়ের কোলে ফিরল হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু
Published: 9th, March 2025 GMT
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চুরি হওয়া ২ মাস ৭ দিন বয়সী এক শিশুকে র্যাব উদ্ধার করেছে। চুরির ঘটনার সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের বেচার দোকান এলাকার একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানে চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক নারীকেও আটক করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া শিশুটির নাম আবদুর রহমান। সে উপজেলার মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের চৌকিদার বাড়ি এলাকার লিটন মিয়া ও জান্নাতুল ফেরদাউসের ছেলে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শিশুটিকে চুরির ঘটনা ঘটে। শিশুটিকে উদ্ধারের পর গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই শিশুটি তার মাসহ থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় আটক নারীর নাম সামছুন নাহার (৪০)। তিনিও মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। র্যাব জানিয়েছে, লালন–পালনের উদ্দেশ্যেই ওই নারী শিশুটিকে চুরি করে ঘরে নিয়ে যান।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশু চুরির বিষয়টি জানাজানি হলে তাৎক্ষণিক শিশুটিকে উদ্ধারে নানা তৎপরতা শুরু করে পুলিশ, র্যাব ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে অভিযান শুরু করা হয়।
র্যাব-১১, নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) মিঠুন কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানের একপর্যায়ে রাতে তাঁরা জানতে পারেন, মীর ওয়ারিশপুর এলাকার একটি বাড়িতে চুরি হওয়া ওই শিশু রয়েছে। তাৎক্ষণিক সেখানে অভিযান পরিচালনা করে তথ্যের সত্যতা মেলে এবং শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। মিঠুন কুমার কুণ্ডু আরও বলেন, এ ঘটনায় আটক নারী জানিয়েছেন তাঁর একমাত্র সন্তান প্রতিবন্ধী। তাই তিনি লালন-পালনের উদ্দেশ্যে ওই শিশুটিকে চুরি করেন।
উদ্ধার করা শিশুটিকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁর মা জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি বলেন, ‘হারানো মানিক ফিরে পেয়েছি এর চেয়ে খুশির কিছু নেই। আমার ছেলেকে উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরের দিকে শিশুটির মা জান্নাতুল ফেরদাউস তাঁর শিশুকে নিয়ে জ্বরের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে যান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর (জান্নাতুলের) মা তাজনেহার বেগম। তিনিও চক্ষু চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। শিশুটির মা ও নানি টিকিট সংগ্রহের জন্য দুটি লাইনে দাঁড়ান। এ সময় জরুরি বিভাগের সামনে থাকা আরেক নারী জান্নাতুলকে সহযোগিতার কথা বলে তাঁর শিশুটি নিজের কোলে নিয়ে বেঞ্চে বসেন। মায়ের কাছ থেকে নেওয়ার পর কয়েক মিনিট ওই নারী শিশুটিকে নিয়ে বেঞ্চে বসা ছিলেন। এরপর ওই নারী শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন। ওই নারীর সঙ্গে আনুমানিক ছয়-সাত বছরের একটি মেয়েশিশুও ছিল।
জান্নাতুল টিকিট সংগ্রহ করার পর যখন সন্তানকে নিতে আসেন, তখন দেখেন ওই নারী নেই। তখন তাঁর চিৎকার ও আহাজারিতে ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, অপরিচিত ওই নারী জান্নাতুলের শিশুপুত্রকে নিয়ে হাসপাতালের সীমানা অতিক্রম করে ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের দিকে চলে গেছেন।
বেগমগঞ্জ মডেল থানায় কর্তব্যরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা শিশুটি তাঁর মাসহ থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। একইভাবে শিশু চুরির ঘটনায় জড়িত নারীও থানায় আছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটক নারী ও উদ্ধার হওয়া শিশুকে আদালতে পাঠানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র র ঘটন ওই ন র গতক ল ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে ছাত্রদলের দু’পক্ষে সংঘর্ষ, আহত ৯
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পদবঞ্চিত এক ছাত্রদল নেতার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে সংগঠনের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেগমগঞ্জ থানার ওসি লিটন দেওয়ান ও ছাত্রদলের নেতারা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাকের আহমেদ সবুজ চৌমুহনী সরকারি সালেহ আহমেদ কলেজ ছাত্রদলের নতুন ঘোষিত কমিটির সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে কমেন্ট করেন কলেজ ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ইয়াসিন হৃদয়। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি হৃদয়ের নেতৃত্বে কলেজ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে প্রতিপক্ষ ছাত্রদল নেতা প্রান্ত, রাফি ও তমাল কলেজ প্রাঙ্গণে পাল্টা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাকের আহমেদ সবুজের অভিযোগ, ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির জেরে হৃদয় তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন। তাঁরই নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর (সবুজ) দোকানে হামলা চালিয়ে তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন। পুলিশ এলে তাদের সামনে হৃদয়ের অনুসারী ছাত্রদল নেতা তারেকুল ইসলাম তারেক তাঁর ওপর আবার হামলা চালান।
অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ইয়াসিন হৃদয় দাবি করেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে আজ সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে বহিরাগত সবুজের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে তিনিসহ ছাত্রদলের তিনজন নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজিম সুমন বলেন, বহিরাগত একদল যুবক ছাত্রদলের নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেন।
বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস বলেন, ‘বহিরাগত কয়েকজন যুবক কলেজে ছাত্রদল নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায় বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ থানার ওসি লিটন দেওয়ান বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। তবে কতজন আহত হয়েছে, এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।