গাজীপুরের শ্রীপুরে আট বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ ও সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণের অভিযোগ উঠেছে আরমান মিয়া (৩৫) নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা আরমান মিয়াকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলার বরমী ইউনিয়নের দরগারচালা গ্রামের গভীর শালবনের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত আরমান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের শামসুল হকের ছেলে। তিনি দরগারচালা গ্রামের মাঝেরটেক এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরের পর থেকে শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বনের ভেতর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় স্থানীয়রা। পরে বনের ভেতর গিয়ে শিশুসহ আরমানকে দেখতে পায় তারা। এ সময় শিশুটি বিস্তারিত বললে আরমানের মোবাইল চেক করে আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া যায়। পরে এলাকাবাসী আরমানকে গণধোলাই দিয়ে থানায় খবর দেয়।

আরমান ক্ষুব্ধ জনতাকে বলেন, ‘‘ধর্ষণের পর আমি নিজেই ভিডিও ধারণ করেছি। আমাকে কয়েকজন মিলে ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করিয়েছে। এজন্য আমার মাথা ঠিক ছিল না।’’

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আকতার বলেন, ‘‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে অভিযুক্ত ধর্ষককে। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও উদ্ধার ও ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।’’

ঢাকা/রফিক/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আরম ন

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরার সেই শিশুর বুকে বসানো হলো টিউব

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুর জ্ঞান চার দিনেও ফেরেনি। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ। সিএমএইচের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়ায় শিশুটির ফুসফুসের বিভিন্ন জায়গায় বাতাস জমে গেছে। রোববার দুপুরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অতিরিক্ত বাতাস বের করে বুকে টিউব বসানো হয়েছে। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তার মস্তিষ্কেও ক্ষতি হয়েছে।

শিশুটির মা ফোনে সমকালকে জানান, হাসপাতালে মেয়ের শয্যাপাশে আছেন তিনি। কোনো নড়াচড়া নেই। সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

রোববার সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শিশুটিকে দেখতে সিএমএইচে যান। খোঁজখবর নিয়ে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। দোষীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন উপদেষ্টা।

মাগুরা আদালতের সামনে অবস্থান, ফাঁসি দাবি

ধর্ষণে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে রোববার মাগুরা আদালত চত্বরের সামনে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করেন। ফলে নিরাপত্তা শঙ্কায় আসামিদের আদালতে হাজির এবং রিমান্ড আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব হোসেন।

ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, বোনের স্বামী, ভাশুর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে জেলা আদালত চত্বরের সামনে অবস্থান নেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটকে অবস্থান নেন। তারা আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মূল ফটকে তারা বিক্ষোভ করেন। যৌথ বাহিনীর আশ্বাসে বেলা ৩টার দিকে সেখান থেকে সরে ভায়নার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এখানে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে কর্মসূচি।

আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। এর ব্যত্যয় হলে আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন তারা।

শিশুটির ছবি-ভিডিও অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশ

হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম, অনলাইন পোর্টালসহ যেসব জায়গায় শিশুটির ছবি ও ভিডিও ছড়িয়েছে, তা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব মাধ্যমে শিশুটির ছবি প্রকাশ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও তিন দিনের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ১৩ মার্চের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এসব নির্দেশনা দেন। আদেশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই আদেশে ভুক্তভোগী শিশু ও তাঁর ১৪ বছর বয়সী বড় বোনের স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির পক্ষে জনস্বার্থে রিট এবং শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান। পরে সৈয়দ মাহসিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্ট দুইজন সমাজসেবা কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকায় একজন শিশুটির দেখাশোনা করবেন; অন্যজন মাগুরায় তাঁর বোনকে দেখাশোনা করবেন। কারণ শিশুটির বিবাহিত বোনও শিশু। তার শ্বশুরবাড়ি হচ্ছে ঘটনাস্থল। সেখানে সেও নিরাপদ নয়। তাদের কল্যাণ নিশ্চিতে দুই কর্মকর্তা কাজ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ