২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের পর বারবার একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে, আন্দোলনে বিপুলসংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ সত্ত্বেও সরকার, সংস্কার কমিশন, টাস্কফোর্স, এমনকি পাবলিক আলোচনায় নারীদের অংশগ্রহণ কম কেন? এ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে অস্বস্তিতে পড়ে অনেক ক্ষেত্রে  প্রতিনিধি হিসেবে এক–দুজন নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাও ঘটেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে নারীরা যোগ্য হলেও কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে, কোনো ক্ষমতা না দিয়ে টোকেন হিসেবে তাঁদের রাখা হয়েছে।

নারীরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও নীতিনির্ধারণে বা রাজনীতিতে অংশ নিলেও তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন অনেক ক্ষেত্রেই অবমাননাকর। তবে আশার বিষয়, এসব সত্ত্বেও আমাদের দেশের নারীদের অনেকেই এ ধরনের কটূক্তি উপেক্ষা করে চলেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের কাজে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারী ক্ষমতায়নের প্রশ্ন এলে এই যে শহুরে নাগরিক সংস্কৃতিতে নারীর আধিক্যকে নারী ক্ষমতায়ন হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে এই আধিক্যকে কি সব ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন বলা যাবে?

আরও পড়ুনগণ-অভ্যুত্থান সফল হলেও নারীর লড়াই এখনো থামেনি১৬ ঘণ্টা আগে

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রংপুরে বাংলাদেশ কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের আয়োজনে কৃষক কনভেনশনে আলোচক হিসেবে গিয়েছিলাম। আসন গ্রহণ করতে গিয়ে দেখি, সমাবেশে অধিকাংশই নারী। একজন নারী হিসেবে যেকোনো জায়গায় নারীদের উপস্থিতি যে একাত্মবোধ তৈরি করে, সেই বোধ আমাকেও অনুপ্রাণিত করেছিল। ফেসবুকে সমাবেশের ছবি দিয়ে যখন লিখি ‘অধিকাংশই নারী’, অনেকেই আমার
মতো ভেবেছিলেন, কৃষিতে নারীরা অগ্রসর ভূমিকা পালন করছেন।

এর আগেও রংপুরে আখচাষিদের সমাবেশে গিয়েছি, কিন্তু এত নারী কৃষক দেখিনি। এবার উপস্থিতি ছিল ভিন্নধরনের কৃষকদের। এর ফলে মনে প্রশ্ন জাগে, কৃষিকাজে এত নারী কোথা থেকে এলেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, দেশজুড়ে কৃষি খাত যে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, তাতে কাজের সন্ধানে ভূমিহীন পুরুষ কৃষক ও খেতমজুরেরা গ্রাম ছেড়ে শহরে বা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এনজিও ও মহাজনদের কাছে ঋণভারে জর্জরিত হয়ে কেউ কেউ পরিবার রেখে পালিয়ে গেছেন। অথবা ঋণ পরিশোধ করতে কৃষিকাজ ছেড়ে শহরে রিকশা চালাতে বা দিনমজুরের কাজ করতে চলে গেছেন। আর বাড়িতে রয়ে গেছেন নারীরা।

সভা–সমিতিতে নারীর সংখ্যা গুনে নারীর ক্ষমতায়নের প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে না। কতজন নারী কাজের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন, একই কাজ করে পুরুষের সমান বেতন পাচ্ছেন কি না, শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন থেকে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন কি না—এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

এই নারীরাই একই সঙ্গে সন্তান লালন–পালন করছেন, আবার নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে খেতমজুরের কাজ করছেন। দেখা হলো কুঁজো হয়ে যাওয়া এক প্রৌঢ় নারীর সঙ্গে; ১০ থেকে ১১ বছর বয়সী এক নাতনির কাঁধে ভর দিয়ে মিছিলে হাঁটছেন। জানা গেল, তাঁর ছেলেও কাজের সন্ধানে অন্যত্র গিয়েছেন। কিন্তু সংসার চালানোর জন্য টাকা পাঠাতে পারছেন না।

বাধ্য হয়েই এই নারীরা এসেছেন কৃষিকাজে। আমরা মনে করি, নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বাড়াই উচিত। তবে কৃষকসমাবেশে দূরদূরান্ত থেকে আসা এই নারীদের পেছনের কাহিনি প্রশ্ন তৈরি করে, শুধু অংশগ্রহণ বাড়াই কি নারীর ক্ষমতায়ন? নারী ক্ষমতায়ন বলতে তাহলে আমরা কী বুঝব? 

কৃষি ও শিল্প খাতে নারীর অংশগ্রহণ

নারীর শ্রমকে সস্তায় কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা কাঠামোগতভাবে তৈরি করা হয়েছে কৃষি খাতকে অবহেলার মধ্য দিয়ে। প্রায়ই শোনা যায়, খেতমজুরের মজুরি বেশি, তাই ফসল উৎপাদনের খরচ বেশি। অথচ বিদ্যুতের খরচ, সারের দাম, সেচের খরচ বেড়েছে, ঋণের সুদও বেশি। হিমাগারের (কোল্ডস্টোরেজ) প্রভাবশালী মালিকেরা ভাড়া দ্বিগুণ করেছেন। এসব ব্যাপারে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

সেচ, সার, বীজ, কোল্ডস্টোরেজের খরচ বাড়ায় উৎপাদনের খরচ কমানোর দায় এখন মজুরের ঘাড়ে এসে পড়েছে; এর ফলে নিরুপায় পুরুষ শ্রমিকেরা কম মজুরিতে কাজ না করে কাজের খোঁজে অন্যত্র তো যাবেনই। আর তাঁরা চলে গেলে সস্তা শ্রম আর কে দেবেন নারীরা ছাড়া?

সারা বিশ্বে যখন কৃষকের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন বাংলাদেশের কৃষির টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে কৃষকের ফসলের মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারপ্রদত্ত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কোনো কথা নেই। বেসরকারি মালিকানার কোল্ডস্টোরেজে প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে, কিন্তু টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কোল্ডস্টোরেজ চালুর কোনো প্রস্তাব নেই; বরং বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর ভরসা করার সুপারিশ এসেছে।

আরও পড়ুননারীকে ট্রমাগ্রস্ত করার দায় রাষ্ট্রপক্ষকেই নিতে হবে১৯ ঘণ্টা আগে

গ্রামে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যেসব কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছিল—যেমন পাট, চিনি ও খাদ্যশিল্প—সেগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক ও মজুর। আশির দশক থেকে কলকারখানাগুলো বন্ধ হওয়ায় তখন থেকে শ্রমিকদের ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীরা কাজের খোঁজে দলে দলে শহরের দিকে আসতে থাকেন। এই সস্তা শ্রমকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল গার্মেন্টসশিল্প।

অন্যদিকে আদমজী পাটকলের শ্রমিকদের জন্য খেলার মাঠে এখন র‍্যাব-২–এর হেড কোয়ার্টার, কলোনি ও বাগানবাড়িতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের আঞ্চলিক কার্যালয়। শ্রমিকের স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, চিকিৎসা, বিনোদন—এগুলো নির্মূল করে দিয়ে তাঁদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে অনিশ্চয়তার দিকে। আর এই অনিশ্চিত জীবিকার সফরে তাঁরা পেয়েছেন নামমাত্র মজুরি।  

২০২০ সালের ৯টি পাটকল বন্ধের আগে ৫০ হাজার স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকের মধ্যে একটি বড় অংশ ছিল নারী। পুরুষেরা রিকশা চালিয়ে, সবজি বিক্রি করে, বিভিন্ন পেশায় কাজ করার সুযোগ পেলেও নারীরা পড়েছেন বিপদে। ভঙ্গুর দশায় পড়ে নারীরা বাধ্য হয়েছেন কম মজুরিতে দিনমজুরের কাজ করতে। এখন বেসরকারি পাটকলে মজুরি দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় পাটকলের তিন ভাগের এক ভাগ। সেখানেও নারীরা বৈষম্যের শিকার।

সত্যি বলতে কি, নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো দৃশ্যমান চেষ্টা নেই। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী আলাপ চলছে এমন আইন প্রবর্তনের, যেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লোকসান হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা থাকে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার, একীভূতকরণের অথবা বেসরকারীকরণের।

করোনাকালে ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন–জীবিকায় আঘাত হানা হয়েছিল। সেসব অঞ্চলে কৃষকেরা আগে জানতেন, সরকার নির্ধারিত দামে তাঁরা আখ বিক্রি করতে পারবেন। এখন নিশ্চয়তা বলে কিছু নেই। অন্য সব ফসলের দাম ফসল তোলার মৌসুমে কমে যায়। কৃষকেরা পড়েন বিপদে। এসবের ভার এসে শেষ পর্যন্ত পড়ে নারীদের ওপর। ঘরে–বাইরে নারীদের কাজ করাকে মহিমান্বিত করা হলেও বাস্তবে তাঁদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন হচ্ছে না। 

গার্মেন্টসে নারী শ্রমিকের আধিক্যের কারণ, কম মজুরিতে তাঁদের দক্ষতার চাহিদা রয়েছে। বছরের পর বছর কম মজুরি দিয়ে, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার না দিয়ে, ন্যায্য মজুরির আন্দোলনে শিল্প পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের বড়াই করা হচ্ছে। শ্রমিকদের আপত্তি সত্ত্বেও শ্রম কমিশনের সুপারিশ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ তহবিল ও গ্র্যাচুইটি বাধ্যতামূলক না করে, স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার না দিয়ে, মাতৃত্বকালীন ছুটি, চাকরির নিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকালে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের দায় নিশ্চিত ছাড়াই এ সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে—এমন খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।  

এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খরচ কমানোর নামে অস্থায়ীভাবে যেসব নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁরাও মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে বঞ্চিত। ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ ভিত্তিতে কাজ করেন অল্প মজুরিতে। যেমন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত অস্থায়ী নারী কর্মীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না, সংসারের প্রয়োজনে ছুটি নিতে হলে মজুরি ছাড়া কাজ করতে হয়।

নারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের যেটুকু নিশ্চয়তা ছিল, সেটাও মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ কোটার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নার্সিং ও শিক্ষকতা পেশায় নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ছিল বলে এত দিন এসব পেশায় নারীদের আধিক্য লক্ষ করা গেছে। ৯৩ শতাংশ মেধাভিত্তিক কোটা আরোপ করা হলে শ্রমবাজারে নতুন করে রদবদল হবে।

দীর্ঘদিন ধরে এসব পেশায় নারীদের অংশগ্রহণের পেছনে কিছু আর্থসামাজিক কারণ ছিল। নারীরা বাস্তব কারণেই অনেক পেশা বেছে নিতে পারেন না। যেমন ফায়ার সার্ভিস, পরিবহন খাত, প্রতিরক্ষা খাত, ভারী শিল্পকারখানা, নির্মাণ খাতসহ অনেক খাতেই নারীদের অংশগ্রহণ কম।

সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। এত দিন প্রাথমিক শিক্ষক পদে নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ চাকরি নির্ধারিত ছিল। ৯৩ শতাংশ মেধাভিত্তিক কোটা নির্ধারণের পর এখন থেকে নতুন নিয়মে নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারীদের আধিক্য বেশি হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি আর্থসামাজিক কারণ ছিল। যেমন প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুরা নারীদের সঙ্গে যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, নারীরা সংবেদনশীলতার কারণে শিশুদের প্রতি অধিক যত্নবান হন, মেয়েশিশুদের মাসিকের সময় তারা নারী শিক্ষকদের সঙ্গে সমস্যার কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এখন প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাভিত্তিক নিয়োগের প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্য যেসব পেশায় নারীদের আধিক্য ছিল, সেসব ক্ষেত্রেও সুযোগ সংকুচিত হবার আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন এ দেশের নারীরা। 

নারীর ক্ষমতায়ন কীভাবে বুঝব

শ্রমবাজারে অধিক নারী শ্রমিকের উপস্থিতি আমাদের চাওয়া হলেও সব সময় তা নারীর ক্ষমতায়ন ঘটায় না। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণকে মহিমান্বিত করার পেছনে থাকে সস্তা শ্রম কাজে লাগানোর আকাঙ্ক্ষা। নীতিনির্ধারণ ও রাজনীতিতেও নারীদের অধিক অংশগ্রহণ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সব সময় তা নারীর অধিকার নিশ্চিত করবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই; বরং নারী হোক, পুরুষ হোক, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাঁকে কতটুকু স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশে দুজন নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন নারী। তাঁর আমলে নারী মন্ত্রীদের হাত ধরেই কৃষি ও শিক্ষায় জনস্বার্থবিরোধী নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে চারজন নারী উপদেষ্টা রয়েছেন। এ সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে মানসিক নিপীড়ন যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে গেছে। পাবলিক পরিসরে নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। সাইবার স্পেসে নারীদের হেয় করার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা পথে বসেছেন।

এটা স্পষ্ট, নারীর ক্ষমতায়ন শুধু রাজনৈতিক দল বা সভায় নারীদের অংশগ্রহণ দিয়েই নিশ্চিত হয় না, বরং তাঁদের ভূমিকা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, বাস্তবায়নে কতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়, দৃষ্টিভঙ্গি কেমন এবং তাঁরা কার স্বার্থে কাজ করেন—এগুলো নারীর স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রশ্ন তোলার মানে এই নয় যে সব পুরুষের হাতে দিয়ে দিতে হবে। এসব প্রশ্ন তোলার অর্থ, কৃষিনীতি, শিল্পনীতি, খাদ্যনীতি, সামাজিক নিরাপত্তানীতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিনীতি থেকে শুরু করে শ্রমনীতি, সমাজকল্যাণনীতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষানীতি—সব ক্ষেত্রেই নারীর মঙ্গল জড়িত।

সভা–সমিতিতে নারীর সংখ্যা গুনে নারীর ক্ষমতায়নের প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে না। কতজন নারী কাজের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন, একই কাজ করে পুরুষের সমান বেতন পাচ্ছেন কি না, শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন থেকে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন কি না—এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

মোশাহিদা সুলতানা সহযোগী অধ্যাপক, অ্যাকাউন্টিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ক ক ষ ত র শ রমব জ র দ র জন য র ক জ কর ব সরক র ন শ চয়ত সব ক ষ মন ত র অন শ চ সব প র জন ন র প টকল র খরচ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

যবিপ্রবিতে পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীকে পাস করানোর অভিযোগ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিএ এর এক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও তাকে উত্তীর্ণ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি মর্মে স্বীকারোক্তি দিলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাকে পাশ দেখিয়ে ফলাফল প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উপস্থিতি পত্রে তার স্বাক্ষর না থাকলেও বিভাগ থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো পত্রে তাকে উপস্থিতি দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়টি গুরুতর অপরাধ বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ শান্তি হিসেবে চাকুরিচ্যুতেরও বিধান রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত সপ্তাহে মার্কেটিং বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিএ প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে এমবিএ-২২২৩০৯ রোলধারী এক শিক্ষার্থী এমকেটি-৫১০৭ কোর্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও তাকে পাস দেখানো হয়েছে।

টাইপিং মিস্টেক হয়েছে কি-না যাচাইয়ে দেখা যায়, ঐ পরীক্ষার্থীর নাম্বারের সঙ্গে পরবর্তী শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নাম্বারের কোন মিল নেই। এতে প্রমাণিত হয়, এটি টাইপিং মিস্টেক নয়। এছাড়াও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উপস্থিতি পত্রে তার স্বাক্ষর না থাকলেও বিভাগ থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো পত্রে তাকে উপস্থিতি দেখানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে টাইপিং মিস্টেক হওয়ারও সুযোগ নেই। আবার বিভাগে থাকা উপস্থিতিপত্রে তার স্বাক্ষর না থাকলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে পাঠানো উপস্থিতি পত্রে কিভাবে উক্ত শিক্ষার্থীকে উপস্থিত দেখানো হলো? এটি অনেক বড় প্রশ্ন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান এসএম শরীফুল হক এবং ওই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি মো. সালিউদ্দীন সাংবাদিকদের কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণক মো. আমিনুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, “আমি বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। যদি এ ধরনের কোন অপরাধ সংগঠিত হয়, তবে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ