চাঁদপুরে গ্যাস লিকেজের আগুনে একই পরিবারের ছয়জন দগ্ধ হয়েছেন। আজ রোববার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে শহরের কোড়ালিয়া রোড এলাকায় রুস্তম ব্যাপারী বাড়ির ছয়তলা ভবনে এ ঘটনা ঘটেছে।

অগ্নিদগ্ধ হন ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া চাঁদপুর লঞ্চঘাটের ফল ব্যবসায়ী আবদুর রহমান (৬৫), তাঁর স্ত্রী শানু বেগম (৫৫), তাঁদের বড় ছেলে ইমাম হোসেন (৪০), তাঁর স্ত্রী খাদিজা আক্তার (৩০), মেজ ছেলের স্ত্রী নববধূ দিবা আক্তার (২০) ও ছোট ছেলে মঈন হোসেন (২০)। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত আবদুর রহমান, শানু বেগম, খাদিজা আক্তার ও মঈন হোসেনকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুজন ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবদুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওই ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। আজ ভোরে তাঁরা সাহ্‌রি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। খাবার গরম করার জন্য তাঁরা চুলায় আগুন ধরাতে যান। তখন গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে তিনটি কক্ষে থাকা ছয়জন দগ্ধ হন। অন্য একটি কক্ষে থাকা তিনজনের কোনো ক্ষতি হয়নি। আশপাশের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন।

আজ ভোরে গিয়ে দেখা যায়, রান্নাঘরের জিনিসপত্র অনেকটা অক্ষত রয়েছে। কিন্তু এর দুই পাশের তিনটি কক্ষের অনেক আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। আবদুর রহমানের নাতনি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিহা আক্তার বলেন, ‘আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। আগুন আগুন চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। আমি, আমার ছোট ভাই এবং আমার এক মামা ঘর থেকে বের হয়ে যাই। এ সময় আমার নানা–নানু, মামা–মামিসহ ছয়জন অগ্নিদগ্ধ হন। আশপাশের লোকজন এসে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যান।’

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি দগ্ধ ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী রান্নাঘরের সামনে ডাইনিংরুমে ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু কীভাবে ঘরে ভেতর আগুন লেগেছে আমরা কিছু বলতে পারব না।’ একই হাসপাতালে ভর্তি অগ্নিদগ্ধ দিবা আক্তারও বলেন, ‘কীভাবে আগুন লেগেছে আমিও কিছুই জানি না।’

পাশের ফ্ল্যাটের প্রত্যক্ষদর্শী খোরশেদ আলম ঢালি বলেন, ‘আমরা ভোর চারটায় সাহ্‌রি খেতে উঠি। এ সময় বিকট আওয়াজ হয়ে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। এ সময় পাশের ঘরে আগুন আগুন চিৎকার শুনে দৌড়ে যাই। আমরা তখন পানি ও কাঁথা–কম্বল দিয়ে তাদের ঘরের আগুন নিয়ন্ত্রণ করে সবাইকে উদ্ধার করি।’

ভবনমালিকের ছেলে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস আসেনি।’

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আগুনে দগ্ধ ছয়জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আশঙ্কাজনক চারজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সবার শরীরের অনেকাংশ পুড়ে যায়। অন্য দুজন আশঙ্কামুক্ত; তাঁদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

পিকআপ-অটোরিকশা সংঘর্ষ প্রাণ গেল ছয়জনের

রাঙামাটির কাউখালীতে পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে মুন্সীগঞ্জে পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তিনজনের। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মাইক্রোবাসের চাপায় এক শিশু নিহত হয়েছে।

রাঙামাটিতে নিহতরা হলেন– চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কাজীপাড়ার সোয়ার আলীর ছেলে তৈয়ব অলী (৪৫), একই উপজেলার সুলতানপুরের সিরাজুল হকের ছেলে জয়নাল আবদিন (৬০), অটোরিকশাচালক সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারীর ইজাজুল (২৫), হাটহাজারী উপজেলার মিরহাটের মাহাবুবুর রহমান বাচ্চু (৫৫), রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার আব্দুর রহিমের স্ত্রী নুরুনাহার বেগম (৪০) ও একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডাবুয়া এলাকার মংসিপ্রু মারমার স্ত্রী মিনু মারমা (৩৫)।

জানা গেছে, গতকাল বেতবুনিয়া ইউনিয়নের চায়েরী বাজারের সাপ্তাহিক হাট ছিল। বাজার শেষে রাউজান অভিমুখী অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন পাঁচ যাত্রী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেতবুনিয়ার চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে চালকসহ চারজন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। অন্য দু’জন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। 
নিহত নুরুনাহারের স্বামী আব্দুর রহিম জানান, ছয় মাসের শিশু নুরীকে ঘুম পাড়িয়ে বেতবুনিয়ার চায়েরী বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়েছিলেন নুরুনাহার। বাজার শেষে স্টেশন থেকে অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন। পথে কাঠবোঝাই পিকআপের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষে তাঁর প্রাণ যায়। ছোট নুরী এখন তার মাকে খুঁজছে আর কাঁদছে। 
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপ ও অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। পিকআপচালক ঘটনার পর থেকে পলাতক। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদীখানে শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে পৃথক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন চারজন। নিহতরা হলেন পায়েল ব্যাপারী (২৪), আলিমুর রহমান (২৭) ও ইউসুফ খান (৫২)।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, শুক্রবার রাত ৩টার দিকে শ্রীনগরের হাসাড়ায় একটি ট্রাক পেছন থেকে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন রংপুরের বাসিন্দা আলিমুর। এ সময় আহত হয় তাঁর সঙ্গী আবদুর রহমান (১৭)। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্রীনগরের সমষপুর এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পথচারী পায়েল ব্যাপারী নিহত হন। এতে আহত হন দু’জন।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সিরাজদীখানের নিমতলা রেলস্টেশনের সামনে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ইউসুফ নিহত হন। তিনি ফরিদপুরের সালথার বাউশখালী গ্রামের বেদন খানের ছেলে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা পানি জাদুঘরের সামনে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের চাপায় ইব্রাহিম জাবের নামে সাত বছরের শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সে কুয়াকাটা-সংলগ্ন হুইছেনপাড়া গ্রামের আফজাল হাওলাদারের ছেলে। জাবের কয়েক দিন আগে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসে।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধি)
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পিকআপ-অটোরিকশা সংঘর্ষ প্রাণ গেল ছয়জনের