মার্কিন নীতিতে হতভম্ব ইউরোপে নতুন যুগ
Published: 9th, March 2025 GMT
যুগ যুগ ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে বিভক্ত করা। তাদের ভাবনা ছিল, এ বিভক্তির কারণে ভেঙে পড়বে পশ্চিমা জোট, যারা ইউরোপের প্রুশিয়া অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্যাঙ্ক প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক উপহার মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছেন, যার জন্য তারা ‘শীতল যুদ্ধ’ বা তারও আগে থেকে অপেক্ষা করছিল।
শনিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের সামগ্রিক আচরণে ইউরোপ কার্যত হতভম্ব। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভিত্তি স্বাধীনতা। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এলেও এখন মিত্রতে পরিণত হয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। এতে ইউরোপ নিজেদের উপেক্ষিত ভাবছে। তারা আবারও নিজেদের শক্তি-সক্ষমতা (সামরিক) বাড়ানোয় নজর দিচ্ছে। তারা মার্কিন নীতিতে বিস্মিত ও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
ইউরোপের বিভিন্ন নেতার মুখে উঠে আসছে বিষয়টি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্যপন্থি রিনিউ ইউরোপ গ্রুপের সভাপতি ভ্যালেরি হায়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সেই স্তম্ভ, যাকে কেন্দ্র করে শান্তির ব্যবস্থাপনা হয়। কিন্তু তারাই এখন অবস্থান পরিবর্তন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন যে অপপ্রচার চালান, সেটাই এখন ট্রাম্পের মুখে। আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি।’
ইউরোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ ও আচরণের আবেগি প্রভাব অনেক গভীর। ১৯৪৫ সালে শেষ হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে সমৃদ্ধ ও মুক্ত মহাদেশের দীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার মূলে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ‘পশ্চিম’ বলতে যা বোঝায় তা ক্রমেই পাল্টাচ্ছে। বহু বছর ধরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানা উত্তেজনার মধ্যেও একটি বিষয়ে ছিল মতৈক্য, তা হলো– উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। বর্তমানে এ প্রশ্নে ইউরোপ, রাশিয়া, চীন আর যুক্তরাষ্ট্র– প্রত্যেকেই আলাদা। ‘পশ্চিম’ এখন কেবল এক ধারণা। কীভাবে শূন্যতা পূরণ হবে, তা পরিষ্কার নয়। তবে সহিংসতার বিষয়টি নিশ্চিত। কারণ, পরাশক্তিগুলো এটা চাচ্ছে।
প্যারিসের পো ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোল বাচারন বলেন, ‘ট্রাম্প যেটা করছেন এর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, উদার গণতন্ত্রের অবদমন।’
ইউরোপের পপুলিস্টরা বিপাকে
ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপের কারণে ইউরোপের জনপ্রিয় রাজনীতিকরা (পপুলিস্ট) পড়েছেন বিপাকে। শনিবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রাজনীতিকরা ইউক্রেন প্রশ্নে কতটা ট্রাম্পের সঙ্গে থাকবেন, বা কতটা দূরত্বে– তা নির্ণয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান থেকে একেবারেই দূরে থাকার কথা ভাবছেন। যেভাবে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। নরডিক দেশসহ পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়ার প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে ব্যাপক। এর বিপরীতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় রুশ সহমর্মীদের পাওয়া যায়।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাটো জোটকে আক্রমণ করেন। তিনি ইউরোপের মিত্রদের সতর্ক করে বলেন, যদি তারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যয় না করে, তাহলে ওয়াশিংটন তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না। গত বৃহস্পতিবার তিনি ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা তো কমন সেন্স, তাই না। যদি তারা খরচ না করে, আমি তাদের সুরক্ষা দিতে যাব না। না, আমি সুরক্ষা দেব না।’ ট্রাম্প জানান, ন্যাটো নিয়ে তাঁর এমন দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বছরের। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের প্রথম মেয়াদে তাঁর এ দৃষ্টিভঙ্গি ন্যাটো মিত্রদের কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, এ জন্য ৭৫ বছর পুরোনো ট্রান্সআটলান্টিক জোটের অন্য সদস্যরা প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়িয়েছে, যদিও এখনও তা পর্যাপ্ত নয়। তাদের আরও খরচ করা উচিত।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নিউজ প্রকাশের জেরে জাবি সাংবাদিককে হুমকি, প্রতিবাদে মানববন্ধন
ছাত্রদলের অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জাগোনিউজ২৪.কম এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর ১টায় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন করেন জাবিতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। এ সময় তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অপেশাদার শব্দচয়নের প্রতিবাদ করেন।
এতে জাবি সাংবাদিক সমিতির সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মেহেদী মামুনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দসহ অনেকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
আরো পড়ুন:
জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
জাবিতে অবিলম্বে নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি
জাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ওয়াজহাতুল ইসলাম বলেন, “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা ছাত্র রাজনীতির মৌলিক সংস্কার এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে একজন সাংবাদিককে হুমকির প্রতিবাদ জানাতে। কোনো সংবাদে ত্রুটি থাকলে সেটি সংশোধনের জন্য যথাযথ প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা না করে সংবাদপত্রের ওপর পেশিশক্তি প্রয়োগ করে প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলা ফ্যাসিস্ট আচরণের বহিঃপ্রকাশ।”
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে যে অশোভন ও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি বড় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন অপেশাদার আচরণ হলে, সারাদেশে থাকা অন্যান্য নেতাকর্মীদের আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে বলছি, ছাত্রদল তাদের বক্তব্যের ভাষা সংশোধন এবং দলের অপকর্মের সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “গত ১৫ বছর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা তাদের কলম চালিয়ে গেছে। আপনারা যারা নব্য ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছেন, আপনাদের ভয়-ভীতি তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্রদল যে ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হস্তক্ষেপ।”
তিনি বলেন, “ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ যে বিবৃতি দিয়েছে তা অন্যান্য ইউনিটগুলোকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আরো উদ্বুদ্ধ করবে। তার সংবাদ প্রকাশের কোনো ধরনের ভুল থাকলে তার জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়। আপনারা যদি ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীরা রুখে দাঁড়াবে।”
গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “আমাদের ভাই সাংবাদিক সৈকত ইসলাম ছাত্রদলের ভ্যাকসিন কর্মসূচি নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছিল, সে বিষয়ে অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে একটি বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিল। সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সৈকত শুধু একা নয়। আমরা হাজার হাজার সৈকত এখনো বেঁচে আছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা সৈকতের পাশে আছি। শুধু সৈকত নয়, সব সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবসময়ই তাদের পাশে আছি।”
গত ২৪ এপ্রিল জাগোনিউজ২৪.কম-এ ‘আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন: ভাগ বাটোয়ারার দ্বন্দ্বে জাবিতে ছাত্রদলের ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিতের কারণ হিসেবে অর্থ বণ্টন নিয়ে শাখা ছাত্রদলের একজন যুগ্ম-আহ্বায়ক, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং অনুদানের আড়ালে সাবেক এক আওয়ামী লীগ এমপিকে পুনর্বাসন চেষ্টার বিষয় উঠে আসে।
প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে সাব্বির আহমেদ নামে সময়ের আলোর জনৈক স্টাফ রিপোর্টার জাগোনিউজ২৪.কম এর জাবি প্রতিবেদক সৈকত ইসলামকে নানাভাবে জেরা করেন ও হুমকি দেন। পরে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পত্রিকা অফিসে চাপ প্রয়োগ করে প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়া হয় ও রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অপেশাদার শব্দচয়ন করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাবি প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতিসহ দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী