কালজয়ী উর্দু কবি মির্জা গালিব ছিলেন খুব রসিক। কবিতার মতো তাঁর খুনসুটিভরা কৌতুকগুলোও ছিল চমকপ্রদ
পৃথিবীতে কান্নার বয়স বেশি নাকি হাসির? বেদনা কি আনন্দের যমজ? নাকি বুঝতে পারার ক্ষমতাই মানুষের কাল হলো? মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিবের কাছে এ হচ্ছে এক জাল। শ্রবণের জাল। সেই জাল পেতেছে চৈতন্য। আর বেদনার জন্ম তো সৃষ্টির মধ্যেই। বিষয়টা তিনি খোলাসা করেছেন তাঁর উর্দু কাব্য সংকলনের একেবারে প্রথম পঙ্ক্তিতেই। প্রথা অনুযায়ী, কাব্য সংকলনের প্রথম কবিতা হবে স্রষ্টার প্রশস্তি। কিন্তু গালিব সেই অছিলায় একটা বড় প্রশ্ন করলেন। এই সৃষ্টিজগৎ যেন একটা কাগজের পৃষ্ঠা। আমরা সবাই সেই কাগজে কারও হাতে লেখা কিছু অক্ষর। আমাদের কী বলার থাকে তাহলে? বলার কথা থেকেও বলতে না পারার বেদনা। সেই বলতে না পারার বেদনাই আমাদের জীবন।
তবু কিছু বলতে চান? তাহলে গালিবের কথাটাও মনে রাখতে পারেন:
‘ক্ষতের মুখে ভাষা না দিতে পারে
কেউ যতক্ষণ
তোমার সঙ্গে কথোপকথন
বড় কঠিন ততক্ষণ।’
আর গালিবের পৃথিবীটার কথাও ভাবুন। প্রবল পরাক্রান্ত মোগল সাম্রাজ্য কী বেহাল হয়ে পড়েছে! হিন্দুস্তানজোড়া সাম্রাজ্যের বাদশাহের সীমা আটকা পড়েছে দিল্লি শহরের ভেতরে। এককালের বেনিয়া ইংরেজ এখন ক্ষমতার মালিক। ১৮৫৭ সালের পর দিল্লি শহর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ইংরেজরা নিজেদের মতো করে নতুন সব স্থাপনা তৈরি করছে। আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে সার্ত্রের মনে হয়েছিল, এই দেশের শহরগুলো মানুষ থাকার অস্থায়ী ছাউনিমাত্র। ইউরোপের শহরগুলোর সঙ্গে ইতিহাস নিজেকে জড়িয়ে রাখে। এখানে তো এমন নয়।
পুরোনো মোগল আমলের স্থাপত্যগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে ইংরেজদের তৈরি করা স্থাপত্যগুলো দেখেও বোধ হয় গালিবের এমনই মনে হয়েছিল। স্থাপত্য তো হবে বৃক্ষের মতো। তার যতটা মাটির ওপরে, মাটির নিচেও থাকতে হবে ততটা। এর ঘুলঘুলিতে থাকবে পায়রার বাসা। তাদের ডানার হাওয়ায় ভবনের চেহারা চারপাশের সঙ্গে মিলে এক হবে।
ওদিকে ১৮৫৭-এর সংগ্রামের পর গালিব লিখেছিলেন:
‘দিনের বেলায় ঘর লুট না হলে রাতে এমন নিশ্চিন্ত হতাম?
আর চুরির ভয় নেই, ডাকাতকে আশীর্বাদ করি।’
এদিকে তাঁর বাস্তব অবস্থা মোটেও সুবিধার নয়। সাবেকি সব আয়-রোজগার বন্ধ। ঘরে খাওয়ার লোক ২০ জন। আয় মাসে টাকা পঞ্চাশেক। একের পর এক মারা গেছে সাত সন্তান। তবু খুনসুটি করছেন গালিব। সবার সঙ্গে। নিজের সঙ্গেও।
‘জগৎ তেমন কঠোর নয়,
প্রাণ এখনো স্বাধীন আসাদ
আমি এর চেয়ে কঠিন কিছুর জন্য
প্রস্তুত ছিলাম।’
গালিবের তরুণ অনুরাগীদের অন্যতম ছিলেন মওলানা আলতাফ হুসেন হালি। তিনি আধুনিক উর্দু কাব্যতত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা। গালিবকে কাছ থেকে দেখেছেন। সেই সুবাদে লিখেছেন য়াদগারে গালিব। সেখানে তাঁর কথার জাদু নিয়ে হালি বলেছেন, ‘মির্জা সাহেবের কথায় তাঁর কবিতার চেয়ে কম মজা ছিল না। লোকে তাই তাঁর কথা শুনতে, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ব্যাকুল থাকত। কথা তিনি খুব বেশি বলতেন না। তবে যা বলতেন, তাতে বুদ্ধি আর রসবোধ ভরা থাকত। কথার মিষ্টতা, হাজির জবাবি, কথায় কথায় নতুন কথা তৈরিতে এমন দক্ষ ছিলেন যে তাঁকে “বুদ্ধিমান জীব” না বলে যদি “বচনবাগীশ জীব” বলি, তাহলে ভুল হবে না।’
মওলানা হালি তাঁর বইয়ে গালিবের অনেকগুলো কৌতুক তুলে ধরেছেন। উর্দু সাহিত্যের প্রথম আধুনিক ইতিহাস লিখেছেন মওলানা মুহাম্মদ হুসেইন আজাদ। বইয়ের নাম আবে হায়াত। সেখানে গালিবের কবিতার ব্যাখা করতে গিয়ে এ কবির কৌতুকগুলো গুরুত্ব দিয়ে কাজে লাগিয়েছেন আজাদ। পরে গালিবের এমন আরও কৌতুক নিয়ে ইন্তিজামউল্লাহ শাহাবি সংকলন করেন মির্জা গালিবকে লতিফে। গালিবের কৌতুক। প্রকাশিত হয়েছিল দিল্লির হালি পাবলিশিং হাউস, কিতাব ঘর, দিল্লি থেকে, ১৯৪৭ সালের জুন মাসে। এর ঠিক এক মাস পরই দেশভাগ হয়।
বইটির মধ্যে গালিবের নামে প্রচলিত বিভিন্ন রসিকতার বাইরের গল্পও পাওয়া যায়। ইংরেজদের নতুন ডাকব্যবস্থা মির্জার খুব পছন্দ হয়েছিল। বন্ধুদের কাছে চিঠি লিখতেন প্রতিদিন। পাঁচ খণ্ডে সংকলিত সেই সব চিঠিতেও পাওয়া যায় অনেক রসঘন বুদ্ধিদীপ্ত কথা আর গল্প। যেমন এক বন্ধু অনেক দিন চিঠি না লেখায় মির্জা লিখেছিলেন, ‘চিঠি যদি না–ই লিখবে, তাহলে কেন লিখবে না, তা অন্তত লিখে জানাও।’
উমরাও সিং জওহর নামে এক কবি ছিলেন মির্জা গালিবের আরেক শিষ্য হরগোপাল তুফতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জওহরের দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ গালিব পেলেন তুফতার চিঠিতে। জবাবে লিখলেন, ‘উমরাও সিংয়ের খবর পেয়ে ওর জন্য ঈর্ষা আর নিজের জন্য মায়া হলো। আল্লাহ আল্লাহ! এক উমরাও দুই–দুইবার বেড়ি কেটে স্বাধীন হয়ে গেল। আর এদিকে আমি! পঞ্চাশ বছরের বেশি গলায় ফাঁসির দড়ি। দড়িও ছেঁড়ে না। প্রাণও বের হয় না।’
বোঝা যায় স্ত্রীর সঙ্গে গালিবের সংসার সুখের ছিল না। এক বন্ধুকে চিঠিতে তিনি লিখছেন, ‘১২২৫ হিজরিতে আমার ওপর যাবজ্জীবন কারাবাসের হুকুম হলো। এক বেড়ি (মানে বিবি) আমার পায়ে পরিয়ে দিল্লিকে জেলখানা সাব্যস্ত করে সেই জেলখানায় কয়েদ করা হলো আমাকে।’
একদিন দুপুরবেলা। গালিবের ঘরে খাবার এল। পরিচারক কাল্লুকে তিনি ডাকতেন ‘দারোগা’ বলে। দারোগা খাবার নিয়ে এসেছে। বহু থালাবাসন। কিন্তু খাবার নিতান্ত সামান্য। পরিমাণে আর পদেও। সেদিকে তাকিয়ে মির্জা বললেন, ‘থালাবাসনের পরিমাণের দিকে তাকালে মনে হয়, আমার খাবার এজিদের। আর খাবারের পরিমাণ দেখলে মনে হয়, এই খাবার বায়েজিদের।’
এজিদ মহা বিলাসি, অমিতব্যয়ী ইমাম হুসেইনের ঘাতক। আর বায়েজিদ একজন মহা তপস্বী।
১৩ বছর বয়সে আগ্রা ছেড়ে বাকি জীবন গালিব দিল্লিতে ভাড়া বাড়িতেই কাটান। প্রথম বাড়ি ছিল মসজিদের পাশেই। এক বন্ধুকে ঠিকানা বলতে গিয়ে লিখেছিলেন:
‘মসজিদের শীতল ছায়ায়
এক ঘর বানিয়ে নিয়েছি
এই পাপী বান্দা এখন খোদার প্রতিবেশী!’
সেবার দিল্লিতে টানা কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টি হলো। সাধারণত এমন হয় না। ভাড়া বাড়ির ছাদ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। বন্ধুকে মির্জা লিখছেন, ‘এমন বৃষ্টি.
বাড়ি নিয়ে একটা গল্প চালু আছে গালিবের নামে। যদিও এর কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে গল্পটা মির্জার ক্ষেত্রেই জুতসই। ভাড়া ঠিকমতো দিতে না পারায় বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। বিবিসহ সবাইকে কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে চারপাশে মালসামান ছড়িয়ে গালিব বসে আছেন পথের পাশে। বিপদ দেখলে পরিচিত লোকেরা সহানুভূতির ছলে নুন ছেটাতে আসবেই। কেউ আটকাতে পারবে না। তেমনই এক সমব্যথী জিজ্ঞাসা করল, ‘এ কী মির্জা! আপনার এই হাল? হয়েছে কী?’
মির্জা মুচকি হেসে বললেন:
‘খোদার পাঠানো সব বিপদ পৃথিবীতে এসেই
জিজ্ঞাসা করে, গালিবের ঘরটা কোথায়?’
গালিবের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক প্রথম থেকেই। বড় ঘরের ছেলে। তাই চাকরির কথা কখনো ভাবেননি। পারিবারিক পেনশনের টাকা বাৎসরিক ১০ হাজার থেকে কমতে কমতে কয়েক শ টাকায় এসে ঠেকেছে। সেই টাকা দাবি করে মামলা নিয়ে গেলেন ইংরেজদের নতুন রাজধানী কলকাতায়। নতুন শহরের বাতি, চওড়া রাস্তা, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা দেখে তিনি অভিভূত। সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন বোধ হয় বাঙালিদের দেখে। লিখেছিলেন, ‘এই বাঙালিরা আজব জাতি। এরা শত বছর ভবিষ্যতেও বাস করে। আবার শত বছর অতীতেও বাস করে।’
কলকাতা থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছিলেন গালিব। বাজারে তখন তাঁর বেসুমার দেনা। এত দিন আশায় থাকা দেনাদারেরা কবিকে এবার ছেকে ধরল। রাতদিন গালিবের ঘরের সামনে তাঁদের ভিড় লেগেই থাকে। এমন পরিস্থিতিতেও কৌতুক থামে না গালিবের। চিঠিতে তিনি লিখছেন, ‘অন্যের বিপদে মানুষ আনন্দ পায়, এ তো পুরোনো প্রথা। আমিও এই অপমান থেকে বাঁচার একটা পথ খুঁজে বের করেছি। পাওনাদারেরা বাড়িতে এসে অপমান করে। আর আমি নিজেকে আরেকজন বলে ধরে নিয়ে সেই অপমান দেখে হাসি।’
মির্জা গালিবের জীবনের শেষ দিনগুলো অভাবের মধ্যেই কেটেছে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে একজন জানতে চাইল, ‘কেমন আছেন মির্জা?’ শেষ মুহূর্তেও তাঁর রসবোধ কমেনি! চেতন-অচেতনের মাঝামাঝি অবস্থায়ই গালিব জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমাকে আর জিজ্ঞেস করছ কেন? দু–এক দিন পর আমার প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসা কোরো।’
হালকা চালে বলা গালিবের এই কৌতুকগুলো গভীর জিজ্ঞাসার সামনে দাঁড় করায় আমাদের। মনে পড়ে, জগতে আমরা সবাই–ই তো ঠুনকো, শেরের মধ্যে মির্জা যেমন বলেন, ‘সব বিপদই কেটে গেছে গালিব/ মৃত্যু নামের হঠাৎ বিপদ শুধু বাকি আছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সংকটাপন্ন বনাঞ্চলে আবার পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ
কক্সবাজারে ৭০০ একর বনভূমিতে এবার ডিজিটাল পার্ক স্থাপন করতে চায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনটিতে রয়েছে ৫৮ প্রজাতির দুর্লভ বৃক্ষ এবং বিপন্ন হাতি, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বাস। তার পরও তাতে চলছে পার্ক স্থাপনের তোড়জোড়।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে ঝিলংজা মৌজার এ জমি স্থায়ী লিজ, ভাড়াভিত্তিক অথবা চুক্তিভিত্তিক লিজ নেওয়ার জন্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বি-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানটি। গত রোববার এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি বন অধিদপ্তর থেকে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। চিঠিতে সরেজমিন তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ নভেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সিইও নাদিরা আক্তার এ আবেদন করেন।
মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির এ এলাকাটি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। শুধু তাই নয়, ৭০০ একর এ বনভূমি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নামে বন্দোবস্ত দিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ভূমি মন্ত্রণালয় বনভূমির এই বরাদ্দ বাতিল করে।
চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ৭০০ একর বনভূমি লিজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা আবেদনে জমিটি পতিত বলে উল্লেখ করেছে। বাস্তবে পুরো জায়গাটি প্রাকৃতিক বনসমৃদ্ধ পাহাড়ি এলাকা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বি-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও নাদিরা আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে আবারও ফোন করলে একজন রিসিভ করে এ প্রতিবেদককে জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য জনস্বার্থে পার্কটি নির্মাণে আবেদনটি করা হয়েছে। সরকার জায়গাটি দিলে করব, না দিলে আমরা করব না।
তাঁর এ বক্তব্যটি নাদিরা আক্তারের বক্তব্য বলেও জানান তিনি। নিজেকে ঢাকার একজন ব্যবসায়ী দাবি করে তিনি নাম বা বিস্তারিত পরিচয় দেননি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ১৯৯৯ সালে ওই ঝিলংজা মৌজার বনভূমিসহ কক্সবাজার সদর ও সাগর সৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুসারে ইসিএ এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিবেশ-পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো নিষেধ। কিন্তু ২০২১ সালে ওই বনভূমিকে খাস জমি দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়।
কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) তথ্যমতে, ‘কক্সবাজার জিয়াউর রহমান ডিজিটাল পার্ক’ স্থাপনের জন্য আবেদনকৃত জায়গায় ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এর মধ্যে আছে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেরাসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীর মধ্যে এশীয় বন্যহাতি, বানর, বন্যশূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি রয়েছে এ বনভূমিতে।
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান উপদেষ্টা আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা মৌজাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে বনভূমির গাছ কাটাসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন নিষিদ্ধ করা হয়। ৭০০ একর রক্ষিত বনও এই সংকটাপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদে বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার রয়েছে। দেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় নতুন করে এ বনভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া জনস্বার্থবিরোধী।
১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার এ এলাকাটি রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্যহাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমিতে। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার শুধু বন বিভাগের।