কর্মবিরতি প্রত্যাহার, কাজে ফিরেছেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
Published: 9th, March 2025 GMT
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসেছেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শনিবার (৮ মার্চ) রাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানায়।
রবিবার (৯ মার্চ) সকাল থেকে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগদান করেছেন। আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএসইসি কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে জানান, আজ সকাল থেকেই বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগদান করেছেন। তবে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তারা কেউই অফিস করছেন না।
বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) কর্মবিরতি পালন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগেরদিন বুধবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দেয় বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
গত ৫ মার্চ বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করেন সেখানকার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। একপর্যায়ে তারা কমিশনের মূল ফটকে তালা দেন; সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, লিফট বন্ধ করে দেন এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন বিকেল ৫টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান (পুলিশ সদস্য) মো.
মামলার আসামিরা হলেন—বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম (৫৭) ও রেজাউল করিম (৫৪), পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা (৫১), অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম (৫০), যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম (৪৮), উপ-পরিচালক বনী ইয়ামিন (৪৫), আল ইসলাম (৩৮), শহিদুল ইসলাম (৪২), ও তৌহিদুল ইসলাম (৩২), সহকারী পরিচালক জনি হোসেন (৩১), রায়হান কবীর (৩০), সাজ্জাদ হোসেন (৩০) ও আব্দুল বাতেন (৩২), লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী (৩১) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ (২৯)।
ঢাকা/এনটি/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র ক ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সিলভা ফার্মার আর্থিক সক্ষমতা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পাঁচ বছরের সম্পদ, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও আর্থিক সক্ষমতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এ লক্ষ্যে ১৫টি শর্ত নির্ধারণ করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
সূচকের পতন, কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দাম
টেলিস্যাটের সঙ্গে এডিএন টেলিকমের চুক্তি
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. মাওদুদ মোমেন, সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমার ঘোষ এবং মো. মারুফ হাসান।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিষয়গুলোর তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। গত পাঁচ বছরের সম্পদ, আর্থিক সক্ষমতা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখির করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ বছরের সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা। সম্পদের ভারসম্য যাচাই এবং তথ্য অনুযায়ী তা নিশ্চিত করা (ভূমি ও জমির উন্নয়ন, ভবন, ভবন সজ্জা, উদ্ভিদ ও যন্ত্রপাতি, সমস্ত সরঞ্জাম, মূলধনের কাজ চলছে, বাণিজ্য এবং অন্যান্য প্রাপ্য, তালিকা, সমস্ত ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, নগদ এবং নগদ সমতুল্য ইত্যাদি)।
মূলধন ও দায়ের ভারসম্য যাচাই এবং তথ্য অনুযায়ী তা নিশ্চিত করা (ভূমি ও জমির উন্নয়ন, ভবন, ভবন সজ্জা, উদ্ভিদ ও যন্ত্রপাতি, সমস্ত সরঞ্জাম, মূলধনের কাজ চলছে, বাণিজ্য এবং অন্যান্য প্রাপ্য, তালিকা, সমস্ত ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, নগদ এবং নগদ সমতুল্য ইত্যাদি)। আইপিওর আগে মূলধন সংগ্রহ এবং প্রাক-আইপিও পরিশোধিত মূলধনের ব্যবহার নিরীক্ষা করা।
প্রসপেক্টাসে প্রকাশ করা (প্রাক-আইপিও সম্পদের মালিকানা জমি, বিল্ডিং, গাছপালা এবং যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) এবং প্রকৃত দখলে আছে কি-না সে তথ্য তথ্য নিরীক্ষা করা। আর্থিক প্রতিবেদনে নগদ অর্থের প্রবাহ যাচাই করা।
ব্যাংক ব্যালেন্স, বিক্রিত পণ্যের মূল্য, আয় এবং ব্যয় ইত্যাদির নিশ্চিতকরণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ বিক্রয় থেকে আয় যাচাই করা। কাঁচামাল সংগ্রহ প্রক্রিয়া এবং কাঁচামালের ব্যবহার যাচাই করা।
সরবরাহকারীদের সাথে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে প্রদেয় কাঁচামালের কোনো মিথ্যা/অতিরিক্ত ক্রয় এবং সরবরাহকারী বা সংশ্লিষ্ট ক্লায়েন্টকে অতিরিক্ত/মিথ্যা পেমেন্ট আছে কিনা তা পর্যালোচনা করা এবং সমস্ত এলসি পরীক্ষা করা। বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল মজুত থাকা সত্ত্বেও কাঁচামাল ক্রয়ের ন্যায্যতা যাচাই করা।
২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত বছরের জন্য কর্মীদের নিয়োগপত্র এবং উপস্থিতি পত্র বিবেচনা করে সমস্ত বেতন/মজুরি/ভাতার বিপরীতে অর্থ প্রদান যাচাই করা। অ্যাকাউন্টিং নীতি, আর্থিক প্রতিবেদন এবং প্রকাশিত তথ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস), ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অন অডিটিং (আইএসএ) অনুসারে করা হয়েছে কিনা তা যাচাই ও নিশ্চিত করা।
সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন এবং তার প্রকাশিত তথ্য যাচাই করা। ২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত বছরের জন্য স্ট্যাটুটরি অডিটরদের ভূমিকা পর্যালোচনা করা। অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় তদন্ত করা।
আইপিওর অর্থ ব্যবহারে অক্ষমতা
তালিকাভুক্তির পর থেকে বিগত ৬ বছরেও আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। এরই মধ্যে আইপিওর অর্থ ব্যবহারে কোম্পানিটি ৫ দফা সময় বাড়িয়েছে। তবুও ওই অর্থ ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটি। এবার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইপিওর অর্থ ব্যয়ে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারিতে আইপিওর অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিরীক্ষা করেছে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস আইন লঙ্ঘনের তথ্য জানিয়েছে।
আর্থিক অবস্থা
২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নামমাত্র ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.৪৭) টাকা। আগের হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.২৪) টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৫৩ টাকা।
সর্বশেষ চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর,২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.১৯) টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.০৬) টাকা। অন্যদিকে, অর্ধবার্ষিক বা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.৪৩) টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.১২) টাকা। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১৬.০২ টাকা।
ব্যবসায়িক অবস্থা
সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি হয় ২০১৮ সালে। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ১৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ কোটি ৬৫ লাখ। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪৫.২১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৫.৭৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির স্বল্প মেয়াদি ঋণ রয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।
ঢাকা/এসবি