রোজার পণ্য থলে ভরে বাসায় নিয়েছেন আপনি। আপনার থলেতে হয়তো জায়গা করে নিয়েছে দেশি নানা ব্র্যান্ডের তেল, চিনি, ডাল কিংবা আটা–ময়দা। আপনার ধারণা, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোই শুধু ব্যবসা করছে। তবে এই ধারণা আংশিক। কারণ, এই পণ্য যারা সরবরাহ করেছে, তাদের হাতেও রয়েছে বড় ব্যবসা। আর এবার রোজার পণ্যের এই সরবরাহ ব্যবসায় এগিয়ে আছে ইউরোপের দুই বহুজাতিক কোম্পানি।

কোম্পানি দুটি হলো ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি (এলডিসি) ও নেদারল্যান্ডসের ভিটেরা। কোম্পানি দুটি বাংলাদেশের রোজার পণ্যের ১৮ শতাংশ সরবরাহ করেছে। এই দুটি কোম্পানি পেছনে ফেলেছে চীন, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন কোম্পানিগুলোকে। গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত বন্দর দিয়ে খালাস হওয়া রোজার পণ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

রোজার পণ্যের মধ্যে তেল ও তেল উৎপাদনের কাঁচামাল, চিনি, গম, ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুরের আমদানির হিসাব ধরা হয়েছে। এ সময়ে এই ছয়টি পণ্য আমদানিতে ২৫৩ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। এই হিসাব পাওয়া গেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের আমদানির তথ্য থেকে।

এনবিআরের হিসাবে, গত তিন মাসে সুইজারল্যান্ডের এলডিসি বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে ২৩ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য সরবরাহ করে শীর্ষস্থানে রয়েছে, যা মোট পণ্যের ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। কোম্পানিটি ছোলা, মসুর ডাল, গম, সয়াবিন তেল ও সয়াবিন বীজ এবং চিনি সরবরাহ করেছে। অবশ্য কোম্পানিটির নিজ দেশ সুইজারল্যান্ডের কোনো পণ্য ছিল না। বিশ্বের সাতটি দেশ থেকে তারা এই পণ্য সরবরাহ করেছে বাংলাদেশে। এই সাতটি দেশ হলো আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, ইউক্রেন, প্যারাগুয়ে ও অস্ট্রেলিয়া।

রোজার পণ্য সরবরাহে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের ভিটেরা। ইউরোপিয়ান এই কোম্পানিটি বাংলাদেশে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন রোজার পণ্য সরবরাহ করেছে। এতে তাদের আয় হয়েছে ২২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। তারাও ৯ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করেছে। কোম্পানিটির সরবরাহের তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার সয়াবিন তেল, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন বীজ, অস্ট্রেলিয়ার মসুর ডাল ও কানাডার মটর ডাল।

রোজার পণ্য সরবরাহের পরের তালিকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার সরবরাহকারী কোম্পানি। যেমন এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রোকর্প। তারা সরবরাহ করেছে ১৯ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য। সিঙ্গাপুরের উইলমার সরবরাহ করেছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য। চীনের কফকো সরবরাহ করেছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের পণ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল ও আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ড (এডিএম) বাংলাদেশে রোজার পণ্য সরবরাহে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি এবার। বিশ্বে কৃষিপণ্য সরবরাহে মোগলের আসনে থাকলেও এবার বাংলাদেশে রোজার পণ্য সরবরাহে পিছিয়ে ছিল তারা। কোম্পানি দুটির অবস্থান শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় নেই। এর মধ্যে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের ব্যবসা করে ১২তম অবস্থানে রয়েছে কার্গিল। আর ৪ কোটি ২৫ লাখ ডলারের ব্যবসা করে ১৫তম অবস্থানে রয়েছে এডিএম। নেদারল্যান্ডস থেকে যাত্রা করা যুক্তরাষ্ট্রের বুঙ্গিও খুব ব্যবসা করতে পারেনি এবার।

রোজার নিত্যপণ্য বা কৃষিপণ্যের ব্যবসা শুরু হয় মূলত উৎপাদনকারী দেশগুলো থেকে। বহুজাতিক এই কোম্পানিগুলো কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশে পণ্য সংগ্রহের জন্য বিনিয়োগ করে। আবার মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে নিজেদের শস্যগুদামে রেখে দেয়। এরপর সময়মতো সেখান থেকে নানা দেশে এসব পণ্য সরবরাহ করে তারা। অর্থাৎ পণ্য সংগ্রহ থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত কৃষি, বন্দরসেবা ও সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনেও তাদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে।

বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা মূলত এদেশীয় ভোগ্যপণ্যের বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে। গত এক দশকে বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলারের শিল্পগোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে। বাংলাদেশের এই বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলোই মূল গ্রাহক বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। যাদের কাছ থেকে দেশের কোম্পানিগুলো জাহাজভর্তি পণ্য আমদানি করে।

জানতে চাইলে নিত্যপণ্য বাজারজাতকারী শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বে কৃষিপণ্য সরবরাহের একচেটিয়া বাজার ইউরোপ–আমেরিকার বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে। পণ্যের গুণগত মান ও সময়মতো সরবরাহের অঙ্গীকার ঠিক রাখে তারা। ফলে এসব বহুজাতিক কোম্পানি থেকে পণ্য আমদানি হয় বেশি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরবর হ র র ব যবস অবস থ ন ইউর প আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার প্রভাব কী হতে পারে

রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য কী, তা স্পষ্ট কারণেই কখনো বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়নি।

তবে অধিকাংশ বিশ্লেষক এ ব্যাপারে একমত, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ করছে। এর একটি, এটি রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের আক্রমণের পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করছে। অন্যটি রাশিয়ার সম্ভাব্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মোকাবিলায় কিয়েভকে আগাম সতর্কতা দিচ্ছে।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও সংকেত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর অবস্থান, তাঁদের গতিবিধি ও সম্ভাব্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও ধারণা দেয়।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও সংকেত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর অবস্থান, তাঁদের গতিবিধি ও সম্ভাব্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও ধারণা দেয়।

আবার মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমার্স লঞ্চার বা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সরবরাহ করা স্টর্ম শ্যাডোর মতো দূরপাল্লার পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র ঠিকঠাক ব্যবহার করতে সক্ষম হবে না ইউক্রেন।

ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে রাজি হয়, তবে আবার দেশটিতে সামরিক সহায়তা শুরু করা হতে পারে।মাইক ওয়াল্টজ, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ওয়াশিংটনের রিয়েল-টাইম তথ্য ইউক্রেনকে পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের এমন সক্ষমতা প্রদান করা ছাড়াও দেশটির সামরিক, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো ও বেসামরিক জনগণকে আসন্ন হুমকি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আগাম তথ্য দিয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটের দেওয়া প্রাথমিক সতর্কতামূলক তথ্যের ভিত্তিতেই ইউক্রেনের অধিবাসীরা কমবেশি বিমান হামলার সাইরেন ও মুঠোফোনের সতর্কবার্তা জানতে পারেন। রুশ ভূখণ্ডের একেবারে ভেতর থেকে উড্ডয়ন করা যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণও শনাক্ত করতে পারে এসব স্যাটেলাইট।

দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে তা ইউক্রেনের সুরক্ষা সক্ষমতার ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কয়েক মাস আগেও ইউক্রেন আশা করছিল, তারা অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাবে এবং এটি দেশের বিভিন্ন শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ রুশ হামলার আরও বেশিসংখ্যক সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুর সুরক্ষায় কিয়েভের সক্ষমতা বাড়াবে।

কয়েক মাস আগেও ইউক্রেন আশা করছিল, তারা অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাবে এবং এটি দেশের বিভিন্ন শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ রুশ হামলার আরও বেশিসংখ্যক সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুর সুরক্ষায় কিয়েভের সক্ষমতা বাড়াবে।

কিন্তু ইউক্রেনের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে। সম্প্রতি ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনকে স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউক্রেনকে কিছু হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে এটি। তবে রাশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে এটি সুরক্ষা দিতে পারবে না।

এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়কে আরেকটি কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে রাজি হয়, তবে আবার দেশটিতে সামরিক সহায়তা শুরু করা হতে পারে।

আরও পড়ুনইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র২২ ঘণ্টা আগে

ওয়াল্টজ ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি, যদি আমরা এ সমঝোতাকে ফলপ্রসূ করতে পারি ও একে এগিয়ে নিতে পারি...তবে প্রেসিডেন্ট স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।’

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ ফক্স বিজনেসকে বলেন, এ স্থগিতাদেশ ‘কেটে যাবে’।

তবে এ কেটে যাওয়ার বিনিময়ে হোয়াইট হাউস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে কী চায়, তা পরিষ্কার।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিতে বিপদে ইউক্রেন ০৪ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই পানি শোধনাগার প্রকল্প ১০ বছর ধরে আটকা, প্রধান উপদেষ্টার বিস্ময়
  • যমুনা সার কারখানার উৎপাদন শুরু, গ্যাসের চাপ কম
  • মানিকগঞ্জে রমজানে তৃষ্ণা মেটায় ‘সাহিদুলের মাঠা’
  • খুঁটির জোরবিহীন ইউক্রেন
  • ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ২৫ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি
  • ১ ঘণ্টার বাজারে কোটি টাকার দুধের বাণিজ্য
  • নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকায় স্বস্তি
  • হুঁশিয়ারির পরও নির্ধারিত দামে মিলছে না সয়াবিন তেল
  • ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার প্রভাব কী হতে পারে