ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাইনচ্যুত হওয়ার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রামগামী ডাউনলাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকামুখী আপলাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এতে শিডিউলের বিপর্যয় ঘটে দেরিতে ট্রেন চলাচল করছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার জসিম উদ্দিন ও স্টেশনমাস্টার আবদুস সাকির প্রথম আলোকে জানান, লাইনচ্যুত হওয়া বগিসহ দুটি বগি রেখে বাকি বগিগুলো নিয়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। রিলিফ ট্রেন উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। ডাউনলাইন বন্ধ থাকায় আপলাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শতাধিকের বেলি স্লিপার ভেঙে গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন গতকাল শনিবার রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের আউটারের মেইন লাইন থেকে লুব লাইনে ঢোকার সময় একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এতে চারটি চাকা রেললাইনের স্লিপারের ওপর ঘেঁষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছায়। ওই চারটি চাকা ট্রলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভেঙে যায়। স্টেশনে থামার পর ট্রেনের যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়েন।

ওই ট্রেনের যাত্রী আরেফিন শোভন বলেন, ‘প্রথমে মনে হয়েছে ট্রেনে আগুন ধরেছে। কারণ, ধোঁয়া উড়ছিল মনে হয়েছে। বাঁক নেওয়ার সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়েছিল ট্রেন। আমরা অনেক ভয় পেয়েছি!’

মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার (এলএম গ্রেড-১) সেন্টার খালেদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লুব লাইনে ১৬ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলছিল। ট্রেন থামার পর গার্ড প্রথম জানিয়েছেন যে পাওয়ার কারে আগুন। তিনি না বলা পর্যন্ত ট্রেন চলবে না। নেমে দেখতে পাই, ট্রেনের ৯ নম্বরের পরের বগির সামনের ৪টি চাকা লাইনচ্যুত হয়েছে। বাঁক নেওয়ার সময় ঝাঁকুনি খেয়ে চাকা লাইনচ্যুত হওয়াসহ ট্রলি ভেঙে যায়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড ল ইনচ য ত প রথম ত হওয

এছাড়াও পড়ুন:

ডিলারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ব্যবসা গুটিয়েছেন ৫১ বিক্রেতা

সাদুল্লাপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলন আসার আগ পর্যন্ত জমিতে তিনবার ইউরিয়া সার দিতে হবে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্বে সার পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এ কৃষককে। 

জাহিদুল ইসলাম জানান, ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে ইউরিয়া সার কিনতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয় হয়। 
জাহিদুল ইসলামের মতো সার কিনতে অনেক কৃষককে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এলাকাভিত্তিক খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য তারা ডিলারদের অসহযোগিতার কথা বলছেন। 

খুচরা ইউরিয়া সার বিক্রেতা বড় জামালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম মিঠু ও নলডাঙ্গার দশলিয়া বাজারের বিপুল হোসেন জানান, এ ব্যবসায় প্রাপ্য সম্মানটুকু নেই। তাদের প্রতিপক্ষ মনে করেন বিসিআইসি ডিলাররা। তারা কমিশন দিতে টালবাহানা করেন। নানা ছুতোয় সার দিতে দেরি করেন। নানা ঝক্কি পোহানোর পর সার নিয়ে নির্ধারিত পয়েন্টে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ দিতে হয়। এতে লাভ থাকে না। 

অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভাতগ্রাম ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মণ্ডলসহ কয়েকজন ডিলার। তাদের ভাষ্য, খুচরা বিক্রেতারা বাকিতে সার নেওয়ার আশায় থাকেন। বিনা পয়সায় সার নিয়ে মজুত করে রাখেন। সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। তাদের এ সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে ব্যবসায় টিকতে পারেননি। এসব কারণে আমরাও কৃষকের কাছে সরাসরি সার বিক্রি করতে আগ্রহী। 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ হয়েছে। এসব জমির জন্য চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৫০০ টন। উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ১৮ জন ডিলার আছে। তারা এগারো ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে সার বিক্রি করেন। বরাদ্দ সারের ৭৫ ভাগ থাকবে ডিলারের কাছে। ২৫ ভাগ পাবেন খুচরা বিক্রেতারা। কৃষকদের সুবিধার জন্য এখানে ৯৯ জন খুচরা সার বিক্রেতা (সাব ডিলার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা কৃষি বিভাগের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জামানত রেখে ডিলারদের কাছ থেকে কমিশনে ইউরিয়া নেন। সেই সার নির্ধারিত পয়েন্টে নিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। ডিলারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা ছেড়ে জামানত ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মাত্র ৪৮ জন খুচরা বিক্রেতা আছেন। তারাও ব্যবসা ছেড়ে জামানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছেন। এসব কারণে কৃষকের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। 

কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সার বিক্রির বিধান রাখা হয়েছে। এখানে ডিলারের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্ব প্রকট। তাদের ঝামেলায় কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারের জন্য দূরে যেতে হচ্ছে কৃষকদের।

জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ইউনিয়নটি বড় এলাকাজুড়ে। অথচ এখানে সার বিক্রির জন্য ডিলার মাত্র একজন। তিনি দোকান খুলে বসেন নির্ধারিত একটি বাজারে। দূরের গ্রামের অনেক কৃষক ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সার নিতে আসেন। এখানে সার বিক্রির জন্য খুচরা বিক্রেতা বাড়ানো প্রয়োজন।

কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের সরবরাহ আছে। ডিলার আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলে কৃষক পর্যায়ে সহজে সার পৌঁছানো যেত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ