চলমান অস্থিরতার সুযোগ নিয়েছে হিযবুত তাহ্রীর
Published: 9th, March 2025 GMT
দেশে চলমান অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা আগে ঘোষণা দিয়ে গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো বিশাল জমায়েতের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখায়। এখনই শক্ত হাতে মোকাবিলা না করা হলে এ ধরনের গোষ্ঠীর আস্ফালন ভবিষ্যতে আরও দৃশ্যমান হবে। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে থেকে ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি শুরু করে হিযবুত তাহ্রীর। প্রথমদিকে পুলিশের দুর্বল বাধা অতিক্রম করে তারা পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগরের দিকে এগিয়ে যায়। এর পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধের ঘাটতি ছিল বলে মনে করছেন বিশিষ্টজন।
অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো.
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসলামের নামে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সংগঠনে যুক্ত করে হিযবুত তাহ্রীর।
ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয় কথিত জিহাদে। বিগত সরকারের সময় নিষিদ্ধ অবস্থাতেই হিযবুত গোপনে কার্যক্রম ও বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৭ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে খিলাফতের দাবি সংবলিত ব্যানার লিফলেট নিয়ে সভা করে তারা। একই দিনে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনেও সভা করে। আগস্টে বন্যার সময় ‘ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ’ শীর্ষক ব্যানারে ঢাকায় বড় বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনটি। ৯ সেপ্টেম্বর তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আবেদন করে তারা। এসব কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ায় তারা আরও সাহসী হয়ে শুক্রবারের কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
পুলিশ সদরদপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর সমকালকে বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। শুক্রবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের কোনো গাফিলতি বা শৈথিল্য ছিল না। এর আগে তারা কোনো কোনো সময় হঠাৎ করেই কর্মসূচি পালন করায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
উগ্রবাদ নিয়ে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কয়েক কর্মকর্তা জানান, শুক্রবারের মিছিলে হিযবুতের বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। এত মানুষকে শুধু আইন প্রয়োগ করে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উগ্রবাদের পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
আরও শক্ত পদক্ষেপের আহ্বান
গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশে যে অস্থিরতা চলছে, তা থেকে এখনও আমরা বের হতে পারিনি। এর ফলে কিছু মানুষ সংগঠিত হয়ে যে কোনো বাড়িতে লুট করতে পারে, মব জাস্টিসের নামে পিটিয়ে মারতে পারে, মামলায় যে কাউকে আসামি করতে পারে, সেটা নিয়ে বাণিজ্যও করতে পারে। হিযবুত তাহ্রীরের এত বড় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট পরিষ্কার। নানা গোষ্ঠী এটার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। নিষিদ্ধ সংগঠন বা নতুন নতুন নামে কেউ হাঙ্গামা বাধানোর পাঁয়তারা করতেই পারে। অনেক পক্ষেরই মদত থাকতে পারে, যারা একটা অস্থিরতা তৈরি করতে চাচ্ছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আরও শক্ত পদক্ষেপ আশা করছি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি– এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। সেনাবাহিনী বা অন্য বাহিনী তো সহায়তাকারী ফোর্স। পুলিশ যদি কর্মক্ষম না হয়ে ওঠে, ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, অন্যরা তো আর বেশি পুলিশিং করতে পারবে না। মব জাস্টিসের নামে যা হচ্ছে, এটা যদি সরকার দৃশ্যত কঠোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারে, তাহলে কোনো ইস্যুতেই সফলতা দেখানোর সম্ভাবনা কম।
হিযবুত তাহ্রীরের ৩৬ সদস্য গ্রেপ্তার
গত শুক্রবার থেকে হিযবুত তাহ্রীরের অন্তত ৩৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অন্যতম সংগঠক সাইফুল ইসলামও রয়েছেন। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, আমরা সমাবেশের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। হিযবুত তাহ্রীরের অনেক সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। সংগঠনটির সদস্যদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে পুলিশ।
পল্টন থানার মামলায় রিমান্ডে ১৭
পল্টন এলাকায় হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ২ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর ও উত্তরখান থেকে হিযবুত তাহ্রীরের আরও চার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
হিযবুত তাহ্রীরের মিছিল থেকে গ্রেপ্তার ১৭ জনকে গতকাল পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর আগে আসামিদের কাঠগড়ায় নেওয়ার সময় আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ স গঠন গ র প ত র কর শ ক রব র সদস য সরক র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম নগরে জেলা প্রশাসনের অভিযান
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্পেশাল মোবাইল কোর্ট।
রবিবার (৯ মার্চ) জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানমের নির্দেশনায় নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজার ও চকবাজার-এ এই অভিযান পরিচালিত হয়।
কাজীর দেউড়ি বাজার-এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), বাকলিয়া সার্কেল এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা আক্তার কণা। অভিযান চলাকালে সয়াবিন তেল, খেজুর, ডিম, ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার পরিদর্শন করা হয়।
এসময় ভোজ্যতেল ধার্যকৃত মূল্যের অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় করা এবং বিএসটিআইয়ের অনুমোদন বিহীন পণ্য বিক্রয়, পণ্যের মোড়ক ঠিকমতো না থাকার অভিযোগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে মোট ৩টি মামলায় মোট ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এসময় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যবৃন্দ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
একই দিনে মহানগরীর চকবাজার কাঁচা বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর সার্কেল এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মাহমুদ ডালিম। অভিযান চলাকালে ওজনে কারচুপি ও মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার অভিযোগে ওজন ও পরিমাণ মানদণ্ড আইনে ৫টি মামলায় মোট ছয় হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রির দোকানসমূহে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয় এবং মজুদদারি রোধে সকল বিক্রেতাকে সতর্ক করা হয়। বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্সের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পুরো রমজান মাসব্যাপী চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
ঢাকা/রেজাউল/এস