একাত্তরের মার্চ মানেই অগ্নিঝরা সময় আর বাংলাদেশ স্বপ্নের আবাহন। এ মাসেই মুক্তির সংগ্রাম জোরালো হতে থাকে। সেই সঙ্গে আসন্ন সহিংসতার ধ্বনিও শোনা যাচ্ছিল। একাত্তরের ৭ মার্চ জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। সেখানে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো ছাড়াও ছিল পূর্ব বাংলার মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা। ৮ মার্চ থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়। ব্রিটেনপ্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি এদিন লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

সরকারি এক প্রেস নোটে সেদিন দাবি করা হয়, আন্দোলনে ১৭২ জন নিহত হয়েছেন; আহত ৩৫৮ জন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ আরেকটি বিবৃতিতে সামরিক কর্তৃপক্ষের ওই প্রেস নোটের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সেখানে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণ করা হয়েছে’ বলে কথিত বক্তব্য সত্যের অপলাপ। নিজেদের অধিকারের সপক্ষে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভরত নিরস্ত্র বেসামরিক অধিবাসীদের ওপরই নিশ্চিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ ও ইপিআর গুলিবর্ষণ করেছে বলে যে প্রচারণা করা হয়েছে, তা বাঙালির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।’ 

পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে লে.

জেনারেল টিক্কা খানকে শপথ পাঠ করাতে অস্বীকৃতি জানান পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী। তিনি অসুস্থতার অজুহাত দিলেও এ অস্বীকৃতি প্রকারান্তরে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি তাঁর সমর্থন বলে মনে করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল পল্টনে মওলানা ভাসানীর বিশাল জনসমাবেশ।

পল্টনের জনসভায় ভাষণ দিতে মওলানা ভাসানী ৯ মার্চ সকালে সন্তোষ থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান। তিনি যখন মঞ্চে উপস্থিত হন, তখন জনসভা প্রকম্পিত হচ্ছিল– ‘বাংলায় একই কথা; স্বাধীনতা, স্বাধীনতা।’ সমাবেশে তিনি ব্রিটিশ বাহিনীর জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার নজির টেনে বলেন, “একদিন ভারতের বুকে নির্বিচার গণহত্যা করিয়া জালিয়ানওয়ালাবাগের মর্মান্তিক ইতিহাস রচনা করিয়া অত্যাচার অবিচারের বন্যা বহাইয়া দিয়াও প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশ সরকার শেষ রক্ষায় সক্ষম হয় নাই। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকেও তাই বলি, অনেক হইয়াছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নাই। ‘লা-কুম দ্বীনুকুম অলইয়াদ্বীন’-এর নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া লও।”

পাকিস্তানের সামরিক শাসকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভাসানী বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান, তোমার যদি পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচ কোটি মানুষের জন্য দরদ থাকে, তাহলে তুমি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করো। এতে করে দুই পাকিস্তানে ভালোবাসা থাকবে, বন্ধুত্ব থাকবে। কিন্তু এক পাকিস্তান আর থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না!’

মওলানা ভাসানীর ওই সমাবেশ সম্পর্কে জাহানারা ইমাম লিখেছেন, “ছেলে-ছোকরারা স্বাধীনতা-স্বাধিকারের তর্কে একমতে আসতে পারছে না, ওদিকে আশি বছরের বৃদ্ধ ভাসানী গতকালকার পল্টন ময়দান মিটিংয়ে স্বাধীনতার দাবি ঘোষণা করে বসে আছেন। গতকাল বিকেল তিনটেয় পল্টন ময়দানে ‘স্বাধীন বাংলা আন্দোলন সমন্বয় কমিটি’র উদ্যোগে যে জনসভা হয়, তাতে সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার যদি ২৫শে মার্চের মধ্যে আপসে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা না দেয়, তা হলে ’৫২ সালের মতো মুজিবের সঙ্গে একযোগে বাংলার মুক্তিসংগ্রাম শুরু করব।’

তথ্যসূত্র: ১৯৭১ সালের ৯ ও ১০ মার্চের দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান, আজাদ, রয়টার্স, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আর্কাইভ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধ, দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মওল ন ভ স ন মওল ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘অন্য সিনেমার নেগেটিভ রিভিউ দাগির নামে চালিয়ে দিচ্ছে একটা চক্র’

ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোকে ঘিরে দর্শকদের ব্যাপক উন্মাদনা লক্ষ্য করা গেছে। সিঙ্গেল হল থেকে শুরু করে মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে টিকিট নিয়ে চলছে হাহাকার। এরই মধ্যে ‘দাগি’ সিনেমা নিয়ে ঘটলো বিরূপ ঘটনা। অন্য এক সিনেমার নেতিবাচক রিভিউ দাগি বলে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়েছে একটি গ্রুপ। যা দৃষ্টিগোচর হয়েছে দাগি টিমের। তাই অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল।

সোমবার রাতে রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডের সেন্টারপয়েন্ট শপিং মল স্টার সিনেপ্লেক্সে বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিল ‘দাগি’ টিম। প্রদর্শনীর আগে কথা বলেন ‘দাগি’ সিনেমার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলসহ নিনেমার কথা কুশলীরা।

শাহরিয়ার শাকিল বলেন, “আমরা দেখেছি কোনো একটি সিনেমার রিভিউ ‘দাগি’ সিনেমার বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং সেটা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটি ভিডিওতে দেখেছি যেখানে বলা হচ্ছে, এটি একটি জঘন্য সিনেমা। আমরা টিকিট না পেয়ে এই সিনেমা দেখেছিলাম। পাশে দাগির পোস্টার, যেন এটা দাগির রিভিউ।”

এরপর হুঁশিয়ারি দিয়ে এই প্রযোজক বলেন, ‘এতদিন ধরে একটাও নেগেটিভ রিভিউ পেলাম না, হঠাৎ করে কেন এই ধরনের রিভিউ যে, এত খারাপ সিনেমা! এটা পরিকল্পিত অপপ্রচার। আবারো যদি কেউ এরকম ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে আমরা অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’

পরে বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক এবং সাংবাদিকরা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে মৌন প্রতিবাদে অংশ নেন।

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ৭ এপ্রিল সারা বিশ্বে ডাকা হয় ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক’। এতে সমর্থন জানান এদেশের সাধারণ মানুষ। পূর্ব পরিকল্পিত হওয়ায় একইদিনে অনুষ্ঠিত হয় ‘দাগি’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী। তবে শিল্পী ও সাংবাদিক সমাজের যারা এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন তারা সেই প্রতিবাদকে সমর্থন করতে ভোলেননি। গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে এক মিনিট নীরবতার মাধ্যমে অংশ নিয়েছেন বিশেষ প্রদর্শনীতে।

আলফা আই প্রযোজিত ‘দাগি’ নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন। এতে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো, তমা মির্জা, সুনেরাহ বিনতে কামাল, শহিদ্দুজামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হামলা-লুটপাটের প্রতিবাদ: সিলেট নগরের হাসান মার্কেট আজ ১ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে
  • খুলনায় ভাঙচুরের ঘটনায় দুই মামলা
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাসদের সমাবেশ
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ লেজিসলেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের
  • কক্সবাজারে রেস্তোরাঁ ভাঙচুরের ঘটনায় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, তরুণ গ্রেপ্তার
  • ছয় দফা দাবিতে ৭০ ফুট ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা
  • দফা দফা দাবিতে ৭০ ফুট ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা
  • দফা দাবিতে ৭০ ফুট ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা
  • গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ
  • ‘অন্য সিনেমার নেগেটিভ রিভিউ দাগির নামে চালিয়ে দিচ্ছে একটা চক্র’