ইতিহাস বলছে নিউজিল্যান্ডের কথা। দু’বার আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়ে দু’বারই জিতেছে কিউইরা। কিন্তু ক্রিকেটীয় বিবেচনায় ভারত ফেভারিট। হোম ভেন্যু বানিয়ে ফেলা দুবাইয়ে অপরাজিত ভারত। তাই মরুর বুকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরের ফাইনালে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হবে বলেই ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা। ভারতের কাছে আজকের ফাইনালে আবেগের উপলক্ষও আছে।

গুঞ্জন রয়েছে, এ ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে থেকে বিদায় নিতে পারেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। ট্রফি জিতে হাসিমুখে দুই কিংবদন্তিকে বিদায় দিতে নিশ্চিতভাবেই সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে ভারত। এই আবেগ চাপ হয়েও আসতে পারে তাদের ওপর। ভারতের আবেগে মাখামাখির সুযোগে ট্রফি ছিনিয়ে নিতে পারেন মিচেল স্যান্টনার-কেন উইলিয়ামসনরা।

আবেগে ভেসে ভারতীয় শিবির যে তালগোল পাকাতে পারে, সে ইঙ্গিত গতকালের সংবাদ সম্মেলনেই মিলেছে। রোহিত শর্মার ওয়ানডে ছাড়ার প্রশ্নে সহ-অধিনায়ক শুভমান গিল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ড্রেসিংরুমে কিংবা আমার সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমার মনে হয় না, রোহিত ভাইও এটা নিয়ে খুব একটা ভাবছেন। আমাদের কালকের ম্যাচ শেষ হলে হয়তো তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।’ শেষ লাইন নিয়েই বাধে বিপত্তি। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে শুভমানের মনে হয়, শেষ বাক্যটা বলা তাঁর উচিত হয়নি। সেটা গণমাধ্যমকর্মীদের বুঝিয়ে বলতে পরে আবার সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ফিরে আসেন। এমনকি প্রেস বক্সে লোক পাঠিয়েও এই অনুরোধ জানানো হয়।

এসব বলে তো আর রোহিত-কোহলির অবসরের গুঞ্জন চাপা যাবে না। বিশেষ করে ফর্মে না থাকলেই রোহিতের অবসরের গুঞ্জন ওঠে। রান না পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রথম একাদশের বাইরে বসতে হয়েছিল তাঁকে। তখনও এমন গুঞ্জন উঠেছিল। কোহলির ব্যাপারটি অবশ্য ভিন্ন। দুরন্ত ছন্দে আছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে রান তাড়ায় দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছেন। সেমিতেও ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছেন তিনি। আজকের ফাইনালেও ভারতের অন্যতম ভরসা তিনি। এ আসরে বড় রান পাওয়া রোহিত অবশ্য গতকাল স্পেশাল ব্যাটিং সেশন করেছেন। ভারত অবশ্য ব্যাটিং নিয়ে মোটেই চিন্তায় নেই। শুভমান গিল, শ্রেয়াস আয়ার, লোকেশ রাহুলরা দারুণ ফর্মে আছেন। তাই তো সংবাদ সম্মেলনে শুভমান বলে গেলেন, তাঁর দেখা এটাই ভারতের সেরা ব্যাটিং লাইন।

ব্যাটিংয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই নিউজিল্যান্ডও। দেড় বছর পর ওয়ানডেতে ফেরা কেন উইলিয়ামসন দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। উইলি ইয়াং, টম লাথামরাও দারুণ খেলছেন। শেষ দিকে গ্লেন ফিলিপস, মিচেল ব্রেসওয়েলরাও রান পাচ্ছেন। তবে ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র স্বরূপে ফেরায় কিউই ব্যাটিং অন্য মাত্রায় চলে গেছে। ভারতীয়রা এগিয়ে থাকবেন স্পিন আক্রমণে। কুলদীপ, বরুণ, জাদেজা ও অক্ষর; এই স্পিন চতুষ্টয়ের সামনে দুবাইয়ের মন্থর উইকেটে টেকা কঠিন। কিউই স্পিনাররাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। আসরে ভারতীয় স্পিনাররা যেখানে ২১ উইকেট শিকার করেছেন; সেখানে স্যান্টনার, ব্রেসওয়েলরা নিয়েছেন ১৭ উইকেট। স্পিনে কিঞ্চিৎ পিছিয়ে থাকাটা নিউজিল্যান্ড কাভার করে দিচ্ছে পেস দিয়ে। তবে যাঁর পেসে কাভার হয়েছে, সেই ম্যাট হেনরি ফাইনালে অনিশ্চিত।

আসরের সর্বোচ্চ শিকারি এ পেসার সেমিতে ক্যাচ ধরতে গিয়ে কাঁধে চোট পেয়েছেন। তাঁর জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কিউইরা। শেষ পর্যন্ত তাঁকে না পাওয়া গেলে জ্যাকব ডাফি একাদশে আসবেন। একটা জায়গায় নিউজিল্যান্ড বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে, সেটা হলো ফিল্ডিং। ভারতীয়দের হাত থেকে যখন অসংখ্য ক্যাচ পড়ছে; ফিলিপস-রাচিনরা সেখানে অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ ধরছেন।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ যে পিচে হয়েছিল, সেই পিচেই ফাইনাল হবে। তবে দুবাইয়ের আকাশ আজ কিছুটা মেঘলা থাকবে। এই কন্ডিশনে পিচের আচরণ বদলাবে না বলে জোরের সঙ্গে বলেছেন শুভমান গিল। পিচ আগের ম্যাচের মতো মন্থর থাকবে। এখানে ৩০০ রান হবে না বলেও মনে করছেন শুভমান গিল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ফ ইন ল গ ঞ জন

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে দীর্ঘসূত্রতা!

কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুল মিলে ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা স্তরের অন্তত সাড়ে ৬০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ প্রক্রিয়ায় আনা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ‘কাঠখড় পুড়িয়ে’ দীর্ঘদিনে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদায়নসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নানা কারণ ও অজুহাতে এখনও অনেক পিছে পড়ে রয়েছে।   

মন্ত্রণালয়-দপ্তর-বিভাগ; এ টেবিল-ও টেবিল; বড় কর্তা-মাঝারি কর্তা-ছোট কর্তা– সবার মন রক্ষা করা কঠিন হলেও তা করার জন্য সাধ্যানুসারে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রক্রিয়াটি ৮-৯ বছরেও সম্পন্ন করা গেল না! তাহলে কী লাভ হলো এমন সরকারীকরণে? এ দীর্ঘ সময়ে সরকারীকরণের কোনো সুবিধা না পেয়েই অনেকে অবসরে চলে গেছেন। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। 

অনেক প্রতিষ্ঠানে এক বা দেড়-দুই বছর আগে অর্ধেক সংখ্যক (প্রতিষ্ঠানভেদে কম-বেশি হতে পারে) শিক্ষক-কর্মচারীর পদায়ন হয়েছে, বাকিগুলো ঝুলন্ত। 
না সরকারি-না বেসরকারি অবস্থায় তাদের রীতিমতো গলদ্ঘর্ম হতে হচ্ছে।
পদায়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভিন্ন রকমের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়া কিংবা অবসরে গিয়েও শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘ম্যানেজ সংস্কৃতি’ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এ যেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে বসবাস! তা ছাড়া এটি যে কতটা মানসিক পীড়ার কারণ, তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে অনুমান করা কঠিন। 
সেই ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে কতবার যে মূল সনদপত্র এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এর কোনো হিসাব নেই। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; আমার মতো অনেকে অবসরে গেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কারও রেহাই নেই। ফটোকপি আর ফটোকপি। চরম অস্বস্তিকর এক ব্যাপার।
একটি দপ্তরে (তা না হলে দুই জায়গায়) মূল সনদ ও নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হলে বাকিগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী কিংবা প্রতিষ্ঠানকে না ডেকে ‘আন্তঃদাপ্তরিক যোগাযোগ’-এর মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা উচিত ছিল।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে বলতে গেলে ভেঙে পড়ার উপক্রম, এর একটি বড় কারণ অপরিকল্পিতভাবে এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের সরকারীকরণ।
সরকারি হওয়া তিন-সাড়ে তিনশ কলেজের মধ্যে কমপক্ষে দুইশ কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ নেই। কোনোটি তিন বছর, কোনোটি আবার পাঁচ-সাত বছর, এমনকি আট-দশ বছর ধরে অধ্যক্ষশূন্য। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ভারে কলেজগুলো বলতে গেলে ন্যুব্জ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে কলেজগুলোয় চলা ভিন্ন রকমের খেলা এখনও শেষ হয়নি। অবসরে গেছেন কিংবা মৃত্যু হয়েছে, এমন শিক্ষকের স্থলে গত সাত-আট বছরে বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন অধ্যক্ষহীন সরকারি হওয়া কোনো কোনো কলেজে শিক্ষা ক্যাডার থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিলেও মাত্র দুই-চার মাস কিংবা বড়জোর এক বছরের মধ্যেই তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন– এমন উদাহরণ এক-দুটি নয়, অনেক। এক কথায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা লাটে উঠতে বড় বেশি বাকি বলে মনে হয় না। 
সবচেয়ে ভয়াবহ ও দুর্ভাবনার বিষয় হলো, সংশ্লিষ্টদের উপেক্ষা ও অবহেলা। এভাবেই পার হয়েছে অন্তত আটটি বছর। এ নিয়ে ভালো কোনো আলোচনা নেই। দেশে এখন রাজনীতি, নির্বাচন আর গদি ছাড়া যেন আর কোনো বিষয়ই নেই আলোচনার।
মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়ে গেছে। শুধু হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী নন, তাদের পরিবার ও নিকটজনও এ নিয়ে স্বস্তিতে নেই। দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও বিড়ম্বনার নিরসন না হলে এমন সরকারীকরণের সার্থকতা কোথায়?   

বিমল সরকার: কলাম লেখক, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে দীর্ঘসূত্রতা!
  • কনকাশন সমস্যায় মাত্র ২৭ বছর বয়সে অবসরে পুকোভস্কি
  • বারবার মাথায় আঘাত, ২৭ বছরেই ক্রিকেট ছাড়লেন সেই পুকোভস্কি
  • কনকাশনের কাছে হার মেনে ২৭ বছরেই ক্রিকেট ছাড়লেন সেই পুকোভস্কি