খাওয়ার পর সাবান দিয়ে হাত না ধুলে ননি লেগে থাকে। ইলিশিয়ার দই এমনই ঘন আর ননিযুক্ত। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লাল ব্রিজ এলাকায় পাওয়া যায় এই দই। নাম ইলিশিয়ার মহিষের দই। বিক্রেতারা বলেন খুব ঘন হওয়ায় এই দই ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয় না। পাঁচ-ছয় দিন অনায়াসে বাইরেই রাখা যায়।

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা বাসস্টেশন থেকে পেকুয়ার দিকে ১৮ কিলোমিটার গেলে লাল ব্রিজ এলাকা। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পাশাপাশি বেশ কিছু দোকানে টেবিলের ওপর সাজানো মহিষের দইভর্তি শত শত মাটির হাঁড়ি। কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ইলিশিয়ার দইয়ের কদর আছে। বিদেশেও যাচ্ছে এ দই। কক্সবাজারের নামীদামি হোটেল–রেস্তোরাঁর খাবারের মেনুতে যেমন এই দই রাখা হয়, তেমনি বিয়ে কিংবা কোনো সামাজিক উৎসবেও এ দই দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। এবার পবিত্র রমজান উপলক্ষে বেড়েছে ইলিশিয়ার দই বিক্রি।

তবে লাল ব্রিজ এলাকায় বিক্রি হওয়া দইয়ের নাম কেন ইলিশিয়ার দই, সে বিষয়ে জানতে চাইলে এখানকার দই বিক্রেতারা বলেন, ইলিশিয়া এলাকাটি লাল ব্রিজ থেকে অন্তত চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে। ৩০-৪০ বছর আগে শুধু ইলিশিয়া এলাকায় মহিষের দই পাওয়া যেত। তখন থেকেই এই এলাকার মহিষের দইয়ের সঙ্গে ইলিশিয়ার নাম যুক্ত হয়ে যায়। তবে এখন দইয়ের কারখানা বা দোকান—সবই লাল ব্রিজ এলাকায়। লাল ব্রিজ এলাকার ১২-১৫টি দইয়ের দোকান থেকে প্রতিদিন চকরিয়া সদর, কক্সবাজার, পেকুয়া ও চট্টগ্রামে এক হাজার হাঁড়ির মতো দই সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ক্রেতারাও দূরদূরান্ত থেকে এসে কিনে নেন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে ইলিশিয়ার এই দই এখন মালয়েশিয়া, ভারত, দুবাই, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের এক হাঁড়ি দইয়ের দাম এখন ২৫০ টাকা। দুধের দাম কমলে তখন দইয়ের দামও কমে ২২০ টাকায় আসে।

চকরিয়া উপজেলার বড়ভেওলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি গ্রাম ইলিশিয়া। এই গ্রামেরই নাজেম উদ্দিনের ছেলে ওয়াহিদুল ইসলাম (৩২) আজ থেকে ১২ বছর আগে লাল ব্রিজ এলাকায় দই বিক্রি শুরু করেন। তত দিনে ইলিশিয়া এলাকায় দই বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। ওয়াহিদের দই ইলিশিয়ার দই হিসেবে বিক্রি হতে লাগল। গত পাঁচ বছরে ওয়াহিদের সাফল্য দেখে আরও ১৫টি দোকান গড়ে উঠেছে। এখন লাল ব্রিজ এলাকাটি ইলিশিয়ার দইয়ের জন্য বিখ্যাত।

লালব্রিজ এলাকার দই ব্যবসায়ী ওয়াহিদুল ইসলাম। সম্প্রতি তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ল ব র জ এল ক য় দইয় র চকর য়

এছাড়াও পড়ুন:

বম নারীদের কোমর তাঁতে চলে সংসার

বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়ক ধরে আট কিলোমিটার গেলে শৈলপ্রপাত ঝর্ণা। সেখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে বম সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের কোমর তাঁতের চাঁদর, কম্বল, মাফলার, ওড়না ছাড়াও হস্ত ও কুটিরশিল্পের পণ্য এবং বাগানের ফলমূল বিক্রি করেন। সেই রোজগারে তাদের সংসার চলে।

শৈলপ্রপাত ঝর্ণার পাশে লাইমি পাড়া ও ফারুক পাড়া। এ দুই পাড়া মূলত বম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে দুই শতাধিক বম পরিবারের বসবাস রয়েছে। এসব পরিবারের নারী সদস্যরা বুনন করেন কোমর তাঁত। তৈরি করেন ছোট-বড় সাইজের বিভিন্ন কম্বল, মাফলার ও চাদরসহ বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র।

শৈলপ্রপাতে স্থায়ীভাবে কোনো বাজার গড়ে না উঠলেও বম নারীরা নিজ উদ্যোগে একটি অস্থায়ী বাজার গড়ে তুলেছেন। সেখানে খ্রিস্টীয় চার্চ সমিতির পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে কয়েকটি ছোট-বাজার শেডও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। রোববার ছাড়া সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে সকাল-সন্ধ্যা বম সম্প্রদায়ের নারীরা কোমর তাঁতের বুনন করা কাপড় বিক্রি করে থাকেন।

জেলা কুটির শিল্প সংস্থার তথ্যমতে, বান্দরবান জেলায় প্রায় ১০ হাজার পাহাড়ি নারী কোমর তাঁতে কাপড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। পাহাড়ি নারীরা কোমর তাঁতে তৈরি করেন থামি, গামছা, কম্বল, রুমাল, গায়ের শাল, টুপি, ওড়না ও বিছানার চাদরসহ রকমারি পোশাক। এইসব পোশাক বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন। 

কাপড় ও কারুপণ্যের দোকানি জুলি বম জানান, আগের মতো বিক্রি না হলেও মোটামুটি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার বিক্রি হয়। ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিক্রি হয়ে থাকে। রোজার দিন হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। ঈদের ছুটিতে বিক্রি বাড়বে বলে তাঁরা সবাই আশাবাদী।

ফারুক পাড়ার কোমর তাঁত শিল্পী লিমা বম জানান, বান্দরবানে পর্যটকদের আনাগোনার কারণে কয়েক বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত আছেন। ভালো মানের একটি থামি (পরনের কাপড়) বিক্রি করেন দেড় থেকে দুই হাজার টাকায়।

আরেক তরুণী লাল কিম বম জানান, বাজার থেকে কাপড় কিনে নিজেদের তৈরি চরকার মাধ্যমে সুতা তৈরি করেন। সে সুতায় রঙ লাগিয়ে রোদে শুকানোর পর কোমর তাঁতের মাধ্যমে কাপড় তৈরি করা হয়। পরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দামে কিনে করে নিয়ে যায়। সব কিছু মিলিয়ে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।

জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুপন চাকমা জানান, জেলায় বসবাসরত ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কম-বেশি সবাই কোমর তাঁতে কাপড় বুনে থাকে। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে মূলত বম নারীরা পর্যটকদের ঘিরে কোমর তাঁত বুনে বাণিজ্যিকভাবে আয় করে থাকে। বিভিন্ন সময় পাহাড়ি তরুণীদের কোমর তাঁত বুননের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বান্দরবান উপ-ব্যবস্থাপক মো. শামীম আলম জানান, কোমর তাঁত পাহাড়ি জনপদের প্রাচীন পেশা। কোমর তাঁতের ওপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল। দক্ষ ও যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে কোমর তাঁত উদ্যোক্তারা চাইলে করপোরেশনের পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দেওয়া হয়।
 

ঢাকা/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ