প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। আমাদের এখন সতর্ক থাকতে হবে, যেমন আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম। গতকাল শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
নারী-শিশুদের নিরাপত্তায় সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে ড.

ইউনূস বলেন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলুন। একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করুন।

তিনি বলেন, আজকের বিশ্বে নারীরা যতটুকু অধিকার ও স্বাধীনতা চর্চা করতে পারছেন, পুরোটাই তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। বাংলাদেশে নারীরা ন্যায্য অধিকারের জন্য যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করে এসেছে। তেভাগা থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নারীসমাজ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ইতিহাসের অনেক বীর নারীদের আমরা ভুলে গেছি, তাদের অবদানের কথা জানি না। কিন্তু জুলাই কন্যাদের নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের কথা আমরা ভুলে যেতে দেব না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীরা বিভিন্ন সময়ে আমাকে তাদের সংগ্রাম ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, নারীর অংশগ্রহণ ও তাদের অধিকার নিশ্চিত ছাড়া সম্ভব হবে না। এ কাজে সহযোদ্ধা হয়ে কাজ করতে হবে পুরুষদের।

তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ’– এ আমরা আমাদের প্রত্যাশিত পরিবারকে নতুনভাবে গড়তে চাই। যেটা সব মা-বাবা, ভাইবোনের নিশ্চিত ও স্বীকৃত অধিকারের পরিবার। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছেন, তাদের প্রতি আমার আহ্বান– যত বাধাই আসুক না কেন ইতিহাস যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেটিকে আমরা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করবই। নতুন বাংলাদেশ গড়বই, এই আমাদের প্রতিজ্ঞা।

সম্প্রতি নারীদের ওপর জঘন্য হামলার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, এটি নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আমাদের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে এটি প্রতিষ্ঠা করব।

তিনি বলেন, নারীবিরোধী যে শক্তি মাথাচাড়ার চেষ্টা করছে, তাকে আমরা দেশের সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করব। তা ছাড়া আমাদের .সমাজে এখনও এমন বহু মানুষ আছে, যারা নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাদের খাটো করে দেখে, অবজ্ঞার চোখে দেখে। অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে, বৈষম্যহীন সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে নারীর পাশে দাঁড়ানো ও সমর্থন জানানোর কোনো বিকল্প নেই। নারীদের খাটো করে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তা না হলে জাতি হিসেবে এগোতে পারব না।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, কয়েকদিন আগে তারুণ্যের উৎসবে ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবলসহ প্রায় তিন হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার মেয়ে অংশ নেয়।

সর্বস্তরের মানুষ দর্শকসারিতে বসে তাদের উৎসাহ জোগান। দর্শকের এ উপস্থিতিই প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সমাজে নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠায় পুরুষেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে।

অনুষ্ঠানে অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। এবার পুরস্কার পেয়েছেন অর্থনীতিতে শরিফা সুলতানা, শিক্ষা ও চাকরিতে হালিমা বেগম, সফল জননী মেরিনা বেসরা, জীবন সংগ্রামে জয়ী লিপি বেগম, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানে মো. মুহিন (মোহনা) ও বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে নৈশ ক্লাবের ছাদ ধসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৪

ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী সান্তো দোমিঙ্গোতে নৈশ ক্লাবের ছাদ ধসে পড়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ১৫০ জনের বেশি মানুষকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার হতাহতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাদেশিক গভর্নর ও মেজর লিগ বেসবলের সাবেক খেলোয়াড় অক্তাভিও দোতেলও রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে ৫১ বছর বয়সী দোতেল মারা যান।

নৈশ ক্লাবটির নাম জেট সেট। গত সোমবার দিবাগত রাতে সেখানে জনপ্রিয় মেরেঙ্গু গায়ক রুবি পেরেজের কনসার্ট চলাকালে ছাদ ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের মধ্যে তিনিও আছেন বলে জানা গেছে।

ঘটনার সময় কয়েক শ মানুষ নৈশ ক্লাবের ভেতরে ছিলেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টায় প্রায় ৪০০ জন উদ্ধারকারী কাজ করছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের (সিওই) পরিচালক হুয়ান ম্যানুয়েল মেন্ডিজ বলেছেন, ধসে পড়া ছাদের নিচে চাপা পড়া অনেকেই এখনো বেঁচে আছেন বলে আশা তাঁর।

জেট সেট সান্তো দোমিঙ্গো এলাকার একটি জনপ্রিয় নৈশ ক্লাব। সেখানে নিয়মিতই সোমবার সন্ধ্যায় ডান্স মিউজিক কনসার্টের আয়োজন করা হয়। ছাদ ধসে পড়ার সময় রাজনীতিবিদ, ক্রীড়াবিদ ও অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদের বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মন্টে ক্রিস্টি প্রদেশের গভর্নর নেলসি ক্রুজও আছেন। তিনি সাবেক বেসবল খেলোয়াড় নেলসন ক্রুজের বোন। 

ক্লাবের ভেতর ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রুবি পেরেজ গান গাওয়ার সময় মঞ্চের সামনে লোকজন বসে আছেন। কেউ কেউ আবার পেছনে সংগীতের তালে নাচছিলেন।

আরও পড়ুনডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে নৈশ ক্লাবের ছাদ ধসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৯ ১৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ