আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতি পেতে পারেন আপনিও
Published: 9th, March 2025 GMT
স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস’ বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ একটি একাডেমিক প্রতিযোগিতা। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও প্রবন্ধগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। প্রতিবছর ২৫টি একাডেমিক বিভাগে একজন বৈশ্বিক (গ্লোবাল) বিজয়ী এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। তবে সঠিক তথ্য ও নির্দেশনার অভাবেই সম্ভবত আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাফল্যের হার তুলনামূলক কম। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য গবেষণা বা প্রবন্ধ নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মানসম্পন্ন, মৌলিক ও বিশ্লেষণধর্মী গবেষণাই বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। বিষয় নির্বাচনের সময় তাই এমন কিছু বেছে নেওয়া উচিত, যা প্রাসঙ্গিক ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাফায়েত আলম ২০২৪ সালে স্থাপত্য ও নকশা বিভাগে রিজিওনাল অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হয়েছেন। কীভাবে বিষয় নির্বাচন করেছিলেন তিনি?
সাফায়েত বলেন, ‘আমি কলেজজীবন থেকেই পাখির ছবি তুলতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছি। প্রায় ৫০০ প্রজাতির পাখির ছবি তুলেছি। প্রকৃতির সঙ্গে এই দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে আমার মধ্যে প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ তৈরি হয়েছে। তাই স্থাপত্যের থিসিসের জন্য আমি এমন একটি বিষয় বেছে নিই, যা দেশের বন ও প্রাকৃতিক জীবনের সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারে। হাতি বন রক্ষা ও পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু আমাদের দেশে হাতির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। তাই আমি এই সংকট নিয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পরিকল্পনামাফিক এগোনোর পরামর্শ দেন সাফায়েত। তিনি বলেন, গবেষণার শুরুতে একটি সুস্পষ্ট কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে পুরো গবেষণার প্রবাহ সুশৃঙ্খল থাকে। কাঠামো তৈরি করার পর প্রথম ধাপে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য একাডেমিক উৎস, গবেষণা নিবন্ধ, জার্নাল, সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট এবং প্রাসঙ্গিক বইপত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। তথ্য সংগ্রহের সময় সূত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা জরুরি, ভুল তথ্য গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করে। তথ্য সংগ্রহের পর গবেষণার খসড়া লেখা শুরু করা উচিত। খসড়া লেখার সময় গবেষণার মূল যুক্তি বা থিসিস স্টেটমেন্ট স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে, যেন পুরো গবেষণাটি একটি সুসংগঠিত কাঠামোর মধ্যে থাকে।
গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছে। চলবে ৬ জুন পর্যন্ত। এই সময়সীমার মধ্যে আবেদনকারীদের গবেষণা বা প্রবন্ধ নির্ধারিত ফরম্যাটে জমা দিতে হবে। ৭ জুন থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গবেষণার মূল্যায়ন করা হবে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রকাশিত হবে প্রতিযোগিতার ফলাফল। বৈশ্বিক বিজয়ী পাবেন বিশেষ সম্মাননা। এ ছাড়া নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অনুষ্ঠিত হবে গ্লোবাল সামিট, যেখানে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা বিশ্বের শীর্ষ মেধাবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন।
গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪-এ ভাষাতত্ত্ব বিভাগে এশিয়া অঞ্চলে বিজয়ী হয়েছিলেন হাসান শেখ। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা (ইএলটি) বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। তিনি বলেন, আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ হলেও সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। প্রথমে প্রতিযোগিতার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর নির্ধারিত ফরম্যাটে গবেষণা বা প্রবন্ধ আপলোড করতে হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে সাবমিশন নিশ্চিত করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সাবধানতার সঙ্গে সব জমা দেওয়া উচিত। নির্দিষ্ট গাইডলাইন ভালোভাবে বুঝে নেওয়া খুব জরুরি। প্রতিটি বিভাগের জন্য নির্ধারিত শব্দসীমা ও কাঠামো আলাদা, তাই আগে থেকেই নির্দেশিকা অনুসারে গবেষণা প্রস্তুত করা উচিত। গবেষণা অবশ্যই ‘anonymous submission’ হিসেবে জমা দিতে হবে, যেখানে লেখকের পরিচয় গোপন রাখা বাধ্যতামূলক। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার আগে গবেষণা কোথাও প্রকাশ করা যাবে না, অন্যথায় আবেদন বাতিল হতে পারে। জমা দেওয়ার আগে অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ নির্দেশিকা দেখে নেওয়া উচিত, যেন কোনো নিয়ম ভঙ্গ না হয়।
এই বছর যাঁরা আবেদন করতে চান, তাঁদের জন্য সাফায়েত আলমের পরামর্শ, গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডসের নিজস্ব আর্কাইভ রয়েছে, যেখানে তারা আগের বছরের পুরস্কৃত গবেষণাগুলো প্রকাশ করেছে। এসব গবেষণা পর্যালোচনা করলে প্রতিযোগিতার মান ও কাঠামো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, যা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ড ম ক প রবন ধ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গঙ্গা চুক্তি নবায়নে ‘কারিগরি’ বৈঠকের ‘রাজনৈতিক’ তাৎপর্য
সন্দেহ নেই, বৈঠকটি নেহাত কারিগরি। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম যদিও ‘যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক’ বলছে, বাস্তবে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকটি আরও কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাঠামো। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির পর নদীটির পানিবণ্টন প্রক্রিয়া দেখভালের জন্য ১৯৭২ সালে গঠিত যৌথ নদী কমিশনের অধীনে গঠিত হয়েছিল ‘যৌথ কমিটি’। এর প্রথম বৈঠক হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায়। এই কমিটিরই ৮৬তম বৈঠক এ বছর ৪ থেকে ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হলো কলকাতায়।
রীতি অনুযায়ী, যৌথ কমিটির এজেন্ডাভুক্ত আলোচনায় ঐকমত্যের পর সেটি যাবে যৌথ কারিগরি কমিটিতে, সেখান থেকে যৌথ নদী কমিশনে। যৌথ নদী কমিশনে চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তাব রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ও স্বাক্ষরিত হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমিটির বৈঠকটির পর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ ফুরাতে যাওয়া গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন সম্ভাবনা কতদূর অগ্রসর হলো? গত বছর ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের আগেই, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের শুরুতেই আমি লিখেছিলাম– ‘নদী বিষয়ে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন’। আগ্রহীরা বিস্তারিত পড়তে পারেন গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি সমকালে প্রকাশিত নিবন্ধ– ‘গঙ্গা চুক্তির নবায়ন ২০২৬ সালের মধ্যে সম্ভব?’
আমরা দেখবো, শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নদীবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। সেই তুলনায় ‘নিষ্পন্ন ইস্যু’ গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন ইস্যু ততটা মনোযোগ পায়নি।
গত এক দশকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্তত ছয়বার এমন আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছিলেন, যেগুলোর শেষে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করতে হয়েছে। এর মধ্যে তিনবার শেখ হাসিনা দিল্লি গেছেন এবং দু’বার নরেন্দ্র মোদি ঢাকা এসেছেন। করোনাকালের একটি ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিক আলোচনায় এসেছে অনেক পরে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর প্রকাশিত ৫৩ দফা যৌথ বিবৃতির ২০ নম্বর দফায় বলা হয়, ২০১৯ সালের আগস্টে ঢাকায় দুই দেশের পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ে আলোচনার পর ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ গৃহীত পানির ‘অপটিমাম ইউটিলাইজেশন’ বা সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে প্রস্তাবিত গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠিত হওয়ায় দুই নেতা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
সর্বশেষ, ২০২৪ সালের ২১ থেকে ২২ জুন শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে যৌথ বিবৃতির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল– ‘১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা শুরুর জন্য যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনকে আমরা স্বাগত জানাই।’
বলাবাহুল্য, গত এক বছরে গঙ্গায় আরও অনেক কিউসেক পানি গড়িয়েছে। কেবল গঙ্গা বা তিস্তার পানিবণ্টন নয়; বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের আরও অনেক বিষয়ে পুরোনো হিসাব-নিকাশ পাল্টে গিয়েছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে মাত্রায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে যৌথ কমিটির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়াই ছিল বড় ‘সাফল্য’।
গঙ্গার পানিবণ্টন-সংক্রান্ত যৌথ কমিটি সাধারণত নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল কলকাতায় গেলে প্রথমে ফারাক্কা ব্যারাজের ভাটিতে গিয়ে প্রবাহ মেপে দেখে যে, চুক্তি অনুযায়ী পানি গড়াচ্ছে কিনা। তারপর আলোচনার জন্য বৈঠকে বসে। ভারতীয় প্রতিনিধি দল ঢাকায় হলে প্রথমে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গিয়ে প্রবাহ মেপে দেখে যে, চুক্তি অনুযায়ী পানি গড়াচ্ছে কিনা। তারপর আলোচনার জন্য বৈঠকে বসে। এবার সেই রুটিন কাজের ব্যত্যয় না ঘটলেও গত বছর ১৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই কমিটির ৮৫তম বৈঠকই হয়েছিল কেবল। খুব সম্ভবত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিটির সদস্যরা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রবাহ মাপতে যাননি।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনাতেই সম্ভবত এবারের ‘রুটিন’ বৈঠকটিও উভয় দেশের সংবাদমাধ্যমে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। নেহাত ‘কারিগরি’ বৈঠকটির ‘রাজনৈতিক’ তাৎপর্যই বড় হয়ে উঠেছে। যেমন, গত ৬ মার্চ ভারতীয় চ্যানেল এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বৈঠকটি ‘হাই স্টেক মিটিং’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি বিদ্যমান চুক্তির চেয়ে বেশি; কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতোমধ্যে চুক্তিটি নিয়ে তার অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ ‘বেশি পানি পাওয়ার কারণে’ কলকাতা বন্দর নাব্য সংকটে পড়ছে। আবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রগুলো এনডিটিভিকে বলেছে, তারা নিশ্চয়ই গঙ্গা চুক্তির নবায়নে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত; কিন্তু একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও দাবির দিকে নজর রাখতে হবে।
সংবাদমাধ্যম যাই বলুক, ভারতীয় পক্ষ যে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নে সহজে রাজি হতে যাচ্ছে না, সেটি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যেও স্পষ্ট। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জওসোয়াল বলেছেন– ‘বৈঠকে দুই পক্ষ গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পর্কিত কারিগরি বিষয় আলোচনা করেছেন। এ ধরনের বৈঠক রুটিনমাফিক বছরে তিনবার হয়ে থাকে।’
অবশ্য বৈঠকের সূত্রগুলো ঢাকার ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের দিল্লি প্রতিনিধিকে বলেছে যে, দুই পক্ষ আগামী তিন মাসের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন বিষয়ে একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করেছে (৭ মার্চ, ২০২৫)।
কথা হচ্ছে, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ কী ‘প্যাঁচ’ কষতে পারে? বলতে পারে, ১৯৯৬ সালের থেকে গঙ্গার প্রবাহ যা ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন তার থেকে কমে গেছে; আগের পরিমাণে পানি মিলবে না। বস্তুত ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ গত বছরই বলেছিলেন, ‘কেবল অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ নয়, বরং সেগুলোর পানি ঘাটতি বণ্টনের মধ্যেও সমাধান খুঁজে পেতে হবে’ (ভিআইএফইন্ডিয়া ডট ওআরজি, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪)।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দিক থেকেও এসব প্রশ্ন মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি রাখতে হবে বৈকি। বলতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন যদি ইস্যু হয়, তাহলে উত্তরাখণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পর্যন্ত গোটা গঙ্গার পানি পরিমাপ করতে হবে। বিদ্যমান চুক্তির মতো ফারাক্কা পয়েন্টে প্রাপ্ত প্রবাহের ভিত্তিতে ভাগাভাগি চলবে না।
গঙ্গায় আমরা কেবল পশ্চিমবঙ্গে ফারাক্কা ব্যারাজের কথা জানি। কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চে ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক ‘ভূমিধস’ প্রতিবেদনে আমাদের বন্ধু ও সহযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিক দেখিয়েছিলেন, আরও উজানে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে অন্তত ২৯টি ‘ছোট’ ড্যাম বা ব্যারাজ রয়েছে। ফারাক্কার পানি প্রত্যাহার ক্ষমতা যেখানে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার কিউসেক, এগুলোর সম্মিলিত পানি প্রত্যাহার ক্ষমতা সেখানে অন্তত ২ লাখ ৯২ হাজার কিউসেক। তার মানে, গঙ্গার ছোট ছোট ড্যাম ও ব্যারাজগুলো আলোচনার বাইরে থেকেই ফারাক্কার তিন গুণের বেশি পানি প্রত্যাহার করছে!
বাংলাদেশকে এই প্রশ্নেও শক্ত অবস্থান নিতে হবে যে, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হতে হবে স্থায়ী, বিদ্যমানটির মতো ‘মেয়াদি’ নয়। কারণ ‘ট্রিটি’ কখনও মেয়াদি হয় না। দূরে যেতে হবে না; সিন্ধু নদ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিরই নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। তাহলে গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ থাকবে কেন?
এখন, ভাটির দেশের এসব শর্ত উজানের দেশ যদি না মানে? একটি সমাধান হতে পারে, আন্তর্জাতিক রক্ষাকবচ হিসেবে নদীবিষয়ক জাতিসংঘ সনদগুলো স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর। বাংলাদেশ চাইলেই ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের আগেই সেটি করতে পারে। আগ্রহীরা পড়ুন– চীন-ভারতের ‘পানি অস্ত্র’ এবং বাংলাদেশের করণীয় (সমকাল, ২০ অক্টোবর ২০২৪)।
আরেকটি সমাধান হতে পারত গঙ্গা ব্যারাজ। এ বিষয়ে ২০০৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ২০১৩ সালে সমীক্ষা শেষ হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের এপ্রিলে কার্যত নাকচ হয়ে যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে আবারও ভাবা যেতে পারে বৈকি।
শেখ রোকন: লেখক ও নদী গবেষক
skrokon@gmail.com