স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস’ বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ একটি একাডেমিক প্রতিযোগিতা। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও প্রবন্ধগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। প্রতিবছর ২৫টি একাডেমিক বিভাগে একজন বৈশ্বিক (গ্লোবাল) বিজয়ী এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। তবে সঠিক তথ্য ও নির্দেশনার অভাবেই সম্ভবত আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাফল্যের হার তুলনামূলক কম। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য গবেষণা বা প্রবন্ধ নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মানসম্পন্ন, মৌলিক ও বিশ্লেষণধর্মী গবেষণাই বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। বিষয় নির্বাচনের সময় তাই এমন কিছু বেছে নেওয়া উচিত, যা প্রাসঙ্গিক ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাফায়েত আলম ২০২৪ সালে স্থাপত্য ও নকশা বিভাগে রিজিওনাল অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হয়েছেন। কীভাবে বিষয় নির্বাচন করেছিলেন তিনি?

আরও পড়ুন‘অনেক চাকরি নিয়ে বসে আছি, কিন্তু লোক পাচ্ছি না’১৯ জানুয়ারি ২০২৫

সাফায়েত বলেন, ‘আমি কলেজজীবন থেকেই পাখির ছবি তুলতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছি। প্রায় ৫০০ প্রজাতির পাখির ছবি তুলেছি। প্রকৃতির সঙ্গে এই দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে আমার মধ্যে প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ তৈরি হয়েছে। তাই স্থাপত্যের থিসিসের জন্য আমি এমন একটি বিষয় বেছে নিই, যা দেশের বন ও প্রাকৃতিক জীবনের সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারে। হাতি বন রক্ষা ও পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু আমাদের দেশে হাতির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। তাই আমি এই সংকট নিয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পরিকল্পনামাফিক এগোনোর পরামর্শ দেন সাফায়েত। তিনি বলেন, গবেষণার শুরুতে একটি সুস্পষ্ট কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে পুরো গবেষণার প্রবাহ সুশৃঙ্খল থাকে। কাঠামো তৈরি করার পর প্রথম ধাপে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য একাডেমিক উৎস, গবেষণা নিবন্ধ, জার্নাল, সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট এবং প্রাসঙ্গিক বইপত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। তথ্য সংগ্রহের সময় সূত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা জরুরি, ভুল তথ্য গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করে। তথ্য সংগ্রহের পর গবেষণার খসড়া লেখা শুরু করা উচিত। খসড়া লেখার সময় গবেষণার মূল যুক্তি বা থিসিস স্টেটমেন্ট স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে, যেন পুরো গবেষণাটি একটি সুসংগঠিত কাঠামোর মধ্যে থাকে।

আরও পড়ুন৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে চাকরির সুযোগ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছে। চলবে ৬ জুন পর্যন্ত। এই সময়সীমার মধ্যে আবেদনকারীদের গবেষণা বা প্রবন্ধ নির্ধারিত ফরম্যাটে জমা দিতে হবে। ৭ জুন থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গবেষণার মূল্যায়ন করা হবে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রকাশিত হবে প্রতিযোগিতার ফলাফল। বৈশ্বিক বিজয়ী পাবেন বিশেষ সম্মাননা। এ ছাড়া নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অনুষ্ঠিত হবে গ্লোবাল সামিট, যেখানে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা বিশ্বের শীর্ষ মেধাবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন।
গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪-এ ভাষাতত্ত্ব বিভাগে এশিয়া অঞ্চলে বিজয়ী হয়েছিলেন হাসান শেখ। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা (ইএলটি) বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। তিনি বলেন, আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ হলেও সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। প্রথমে প্রতিযোগিতার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর নির্ধারিত ফরম্যাটে গবেষণা বা প্রবন্ধ আপলোড করতে হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে সাবমিশন নিশ্চিত করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সাবধানতার সঙ্গে সব জমা দেওয়া উচিত। নির্দিষ্ট গাইডলাইন ভালোভাবে বুঝে নেওয়া খুব জরুরি। প্রতিটি বিভাগের জন্য নির্ধারিত শব্দসীমা ও কাঠামো আলাদা, তাই আগে থেকেই নির্দেশিকা অনুসারে গবেষণা প্রস্তুত করা উচিত। গবেষণা অবশ্যই ‘anonymous submission’ হিসেবে জমা দিতে হবে, যেখানে লেখকের পরিচয় গোপন রাখা বাধ্যতামূলক। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার আগে গবেষণা কোথাও প্রকাশ করা যাবে না, অন্যথায় আবেদন বাতিল হতে পারে। জমা দেওয়ার আগে অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ নির্দেশিকা দেখে নেওয়া উচিত, যেন কোনো নিয়ম ভঙ্গ না হয়।
এই বছর যাঁরা আবেদন করতে চান, তাঁদের জন্য সাফায়েত আলমের পরামর্শ, গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডসের নিজস্ব আর্কাইভ রয়েছে, যেখানে তারা আগের বছরের পুরস্কৃত গবেষণাগুলো প্রকাশ করেছে। এসব গবেষণা পর্যালোচনা করলে প্রতিযোগিতার মান ও কাঠামো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, যা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ড ম ক প রবন ধ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মার্চে রপ্তানি হয়েছে ৪২৪ কোটি ডলারের পণ্য

বাংলাদেশ থেকে গত মার্চ মাসে ৪২৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যা ৫১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতি মাসের শুরুতে পণ্য রপ্তানি আয়ের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে থাকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। কিন্তু সংস্থাটি গতকাল রোববার পর্যন্ত গত মাসের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩৮১ কোটি ২২ লাখ ডলারের পণ্য। আর এনবিআরের হিসাবে, গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪২৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি। সেই হিসাবে গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় এবার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সাধারণত ঈদের ছুটির আগে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। ঈদে ৭ থেকে ১০ দিনের দীর্ঘ ছুটি থাকে। ফলে ছুটির মধ্যে ও তার পরপর যেসব ক্রয়াদেশের পণ্য জাহাজীকরণের বাধ্যবাধকতা থাকে, সেগুলো ছুটির আগেই শেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ঈদের ছুটি শেষে কারখানাগুলো যখন খুলছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাল্টা শুল্ক নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যাঁরা পণ্য রপ্তানি করেন, তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন। প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর এই শুল্কের হার ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ; যদিও চীনকে দিতে হবে ৩৪ শতাংশ (মোট শুল্ক ৫৪) ও ভিয়েতনামকে দিতে হবে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। আর সেই পোশাক রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরের বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ১৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। পোশাকের পাশাপাশি এই বাজারে যাঁরা জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও হিমায়িত খাদ্য পণ্য রপ্তানি করেন, তাঁরাও উদ্বেগে আছেন।

তৈরি পোশাক, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকেরা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, পাল্টা শুল্কের কারণে ইতিমধ্যে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে। বাড়তি শুল্কের ক্ষতি পোষাতে মূল্যছাড় দাবি করছে তারা। আগামী দু-এক দিনে এমন ঘটনা আরও বাড়বে বলেই তাঁদের শঙ্কা।

ইপিবির প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে, অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলভা ফার্মার আর্থিক সক্ষমতা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি
  • ২০২৪ সালে ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: অ্যামনেস্টি
  • মার্চে কিছুটা বেড়েছে মূল্যস্ফীতি, উঠেছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ
  • দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায়, মার্চে প্রবৃদ্ধি ১১.৪৪%: ইপিবির তথ্য
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: আজ থেকে বিষয় পছন্দক্রমে দেওয়া যাবে আরবি
  • চুয়েটে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু ৯ এপ্রিল 
  • রেকর্ড রেমিট্যান্স দিলেন প্রবাসীরা, রাষ্ট্র তাঁদের কী দেবে
  • মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভা ২০ এপ্রিল
  • মার্চে রপ্তানি হয়েছে ৪২৪ কোটি ডলারের পণ্য
  • রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাস্থল ঘুরে দেখলেন প্রধান বিচারপতি