কেউ বলে মিরধার মসজিদ, কেউ বলে জিনের
Published: 9th, March 2025 GMT
পবিত্র জোহরের নামাজের পরে সিঁড়ি বেয়ে মসজিদ থেকে নেমে আসছিলেন সহকারী ইমাম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়ে দিয়েছেন পুরান ঢাকার ৩১৯ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক খান মোহাম্মদ মিরধার মসজিদে মুয়াজ্জিন ও ইমাম হিসেবে। বহু গল্প জমে আছে তাঁর ঝুলিতে।
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গত মঙ্গলবার মসজিদটি ঘুরে দেখাতে দেখাতে তার কিছু শোনালেন একটু একটু করে। একসময় নিচু স্বরে বললেন, এই মসজিদে কিন্তু ‘জিন’ও আছে। লালবাগ-আতিশখানা-আমলীগোলা এলাকায় লোকজনের কাছে যদি ‘জিনের মসজিদ’ যাওয়ার পথ জানতে চান, তাহলে তারা এই মসজিদে আসার পথ দেখিয়ে দেবে।
কী ছিল আতিশখানায়খান মোহাম্মদ মিরধার মসজিদটি ১২১ লালবাগ রোডে। তবে ইতিহাসের বই–পুস্তকে এর অবস্থান আতিশখানায় বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আতিশখানা রোডটি মসজিদটির পাশেই। আগে মসজিদটি আতিশখানা মহল্লাতেই ছিল, তবে এখন পড়েছে লালবাগ অঞ্চলে। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড। মহল্লাটির নামকরণ কেন আতিশখানা হলো, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতান্তর আছে। অধ্যাপক আবদুল করিম তাঁর ‘মোগল রাজধানী ঢাকা’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন লালবাগ দুর্গের কাছে এই এলাকায় মোগল আমলে অস্ত্রাগার গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই থেকে এলাকাটির নাম আতিশখানা হয়েছে। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনও এই মতকে যুক্তিসংগত বলে মনে করেন।
মসজিদের ভেতরে উত্তর–দক্ষিণে দুটি ছোট দরজা। পশ্চিমের দেয়ালে খিলান আকৃতির প্রধান মেহরাবের দুই পাশে একটি করে ছোট আকারে খিলান মেহরাবতবে হাকিম হাবিবুর রহমানের মতে, এই এলাকায় জরথ্রুস্ত্রের অনুসারী পারসিক বা সম্রাট আকবরের দীন-ই-ইলাহীর কোনো অনুসারী বসবাস করতেন। তাঁদের সূত্রেই এলাকার নাম হয়েছে আতিশখানা। হাকিম হাবিবুর রহমান তাঁর ‘আসুদগান-ই-ঢাকা’ বইয়ে লিখেছেন, উনিশ শতকের শেষার্ধে আতিশখানা অঞ্চল বড় কবরস্থানে পরিণত হয়েছিল।
নামের রহস্যদিল্লির মসনদে তখন আসীন সম্রাট আওরঙ্গজেব। ঢাকার উপশাসনকর্তা ছিলেন ফরুকসিয়ার, যিনি পরে নবম মোগল সম্রাট হিসেবে মসনদে আসীন হয়েছিলেন এবং অত্যন্ত মর্মান্তিক মৃত্যু বরণ করেছিলেন। তখন ঢাকার প্রধান বিচারক কাজী ইবাদুল্লার নির্দেশে আতিশখানায় এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন খান মোহাম্মদ মিরধা। মুনতাসীর মামুনের মতে, প্রাচীনত্বের দিক থেকে এটি ঢাকার সপ্তদশতম মসজিদ।
খান মোহাম্মদ মিরধা মসজিদের ভেতরের একাংশ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
চীন ও ইউরোপ কীভাবে মার্কিন শুল্ক ঝড় রুখবে
অ্যাডাম স্মিথের লেখা বিখ্যাত বই দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস অর্থনীতির জগতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। স্মিথ বলেছিলেন, ভাগ ভাগ করে কাজ করলে উৎপাদন ও দক্ষতা বাড়ে। দেশগুলোর মধ্যেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। যে দেশ যেটা সবচেয়ে ভালো করতে পারে, সেটাই উৎপাদন করবে এবং অন্য দেশের সঙ্গে বিনিময় করবে। কিন্তু শুল্ক বা ট্যারিফের মতো বাধাগুলো এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, অর্থনীতিকে করে তোলে অকার্যকর এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষতিই বেশি হয়।
এই সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও শুল্কনীতির পক্ষে সওয়াল করছেন। তিনি দাবি করেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ‘আমেরিকাকে আবার মহান’ করে তোলা যাবে। ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’ অনুযায়ী, যেসব দেশ আমেরিকান পণ্যে শুল্ক বসায়, তাদের পণ্যের ওপর আমেরিকাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। এতে নাকি আমেরিকার শিল্প এবং চাকরি রক্ষা পাবে এবং রাজস্বও বাড়বে।
শুল্ক আসলে কী করেকিন্তু বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। শুল্ক মূলত ভোক্তা ও ব্যবসার ওপর একধরনের করের মতো কাজ করে। এতে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ে, যার ফলাফল হয় মূল্যস্ফীতি। যেসব শিল্প বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহার করে, তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় আর এই বাড়তি খরচ পড়ে সাধারণ ক্রেতার ঘাড়ে। অন্যদিকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক বসিয়ে অন্যান্য দেশও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। ফলে মার্কিন রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিদেশি বাজার হারায় এবং এর প্রভাবে চাকরি হারান বহু মানুষ। এককথায়, সাময়িক যে রাজস্ব আসে, তা এই আর্থিক ক্ষতির তুলনায় নেহাতই সামান্য।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রাজিল এবং ভারতকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মূল লক্ষ্য ইউরোপের এমন সব খাত, যেগুলোর প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে ইউরোপের গাড়িশিল্প এই শুল্কের বড় শিকার হতে পারে।
সেই সঙ্গে যন্ত্রপাতি, ওষুধ এবং মহাকাশপ্রযুক্তি—এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতও মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে শুল্কসংক্রান্ত উত্তেজনা চলতে থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক সহযোগিতা ও মুক্তবাণিজ্যের বদলে যদি দেশগুলো একে অপরের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দেয়, তাহলে ক্ষতিটা সবারই হবে।
আরও পড়ুনবিশ্ব চালাবে কে—চীন নাকি ইউরোপ২০ ঘণ্টা আগেইউরোপ যে ঝামেলায় পড়েছেএই মুহূর্তে ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতারা কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। একদিকে বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদনে চীন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপও ক্রমেই বাড়ছে। চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবন ও উৎপাদনদক্ষতা ইউরোপীয় গাড়িশিল্পের জন্য একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ইউরোপ এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
এর মধ্যে আরও চাপ তৈরি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বড় বড় ইউরোপীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনকেন্দ্র সরিয়ে আনার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাঁর যুক্তি, এতে আমেরিকায় চাকরি তৈরি হবে এবং অর্থনীতি মজবুত হবে।
অথচ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা শিক্ষিত পেশাজীবীদের অভিবাসনের মাধ্যমেও যুক্তরাষ্ট্র অনেক লাভবান হচ্ছে। ইলন মাস্কের কথাই ধরা যাক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বড় হয়েছেন, পড়ালেখা করেছেন কানাডায় এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে এসে টেসলা ও স্পেসএক্সের মতো বৈপ্লবিক কোম্পানি গড়ে তুলেছেন।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট, চীনা প্রধান মন্ত্রী ও ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট বেইজিং-এ এক সংবাদ সম্মেলনে, জুলাই ২০১৮