‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ বা ‘সহায়ক বাহিনী’। বিশ্বের অনেক দেশে কোনো কোনো দেশেই পুলিশের কাজে সহায়তার জন্য এমন ফোর্স রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বিষয়টি নতুন। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী খান শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ নিয়োগের কথা বলেছেন। এরপর বিষয়টি আলোচনায় আসে। ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, ঈদের আগে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬–এর ১০ ধারা অনুযায়ী কমিশনার নিজ ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ দেবে। এটা হবে সাময়িক সময়ের জন্য।

ঢাকার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে এই ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এ ব্যাপারে সংশয় আছে। এমনকি নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ বা এ ধরনের পুলিশিংয়ের সঙ্গে পরিচিত নয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সাবেক তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এ ধরনের ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ নিয়োগের কথা আইনে আছে। এর আগে এই আইন প্রয়োগ করা হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তাঁদের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে তাঁদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হলে সেটির অপব্যবহার হতে পারে।

অনেক দেশেই অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স

বিশ্বের অনেক দেশেই অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস অন্যতম। তবে এসব দেশে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্সে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে ‘অক্সিলিয়ারি পুলিশ প্রোগ্রাম’ রয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অক্সিলিয়ারি পুলিশ প্রোগ্রাম।

নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানে অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ কোর্স করতে হয়। নিজের প্রতিরক্ষা কৌশল, টহল কৌশল, নিউইয়র্কের ফৌজদারি আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি শারীরিক পরীক্ষা দিতে হয় তাঁদের।

নিউইয়র্ক পুলিশে অক্সিলিয়ারি পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে টহল কার্যক্রমে ভূমিকা রাখা, বিভিন্ন উৎসব ও ইভেন্টের নিরাপত্তা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখা এবং সরাসরি আইন প্রয়োগ করতে হয় না, এমন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া। আর যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১৭ বছর হতে হবে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। নৈতিক চরিত্র এবং মাদকের বিষয়ে শূন্য সহনশীল হতে হবে।

 ডিএমপি সদর দপ্তর অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে। কমিশনার তাঁর ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ কার্যকর করবেন। মুহাম্মদ তালেবুর রহমান, উপকমিশনার (ডিসি)ডিএমপিতে অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ হবে কীভাবে

ডিএমপির অধ্যাদেশে অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগের প্রক্রিয়া কী হবে, যোগ্যতা কী হবে, সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব কী হবে—এসব বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কোনো কিছু বলা নেই। কর্মকর্তারা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারছেন না, কীভাবে এই নিয়োগ হবে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.

সাজ্জাত আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পুলিশকে সহায়তাকারী হিসেবে ৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মহানগর পুলিশের আইনবলে অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগের ক্ষমতা আমার আছে। আমি সেই মোতাবেক অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স হিসেবে যারা প্রাইভেট নিরাপত্তার লোকেরা আছে, তাদের নিয়োগ দিচ্ছি।’

যাঁদের এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের সততার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি নিজে (নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি) যদি মনে করেন তিনি পুলিশ হয়ে গেছেন, তবে এটার অপব্যবহার হতে পারে। নাইম আহমদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার

ডিএমপির একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ডিএমপি কমিশনার প্রয়োজন মনে করলে পুলিশকে সহায়তার জন্য যেকোনো ব্যক্তিকে যেকোনো সময় ‘অক্সিলিয়ারি পুলিশ অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন। পুলিশের মতোই তাঁদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকবে। তাঁরা যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটায় বা অপরাধ করেন, তবে পুলিশের ক্ষেত্রে যে ধরনের শান্তির কথা বলা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই শাস্তির বিধান থাকবে। ডিএমপি অধ্যাদেশের ১০ ধারা প্রয়োগ কীভাবে হবে, এ–সংক্রান্ত কোনো বিধিমালাও নেই। ফলে এই মুহূর্তে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হবে, সেটি ঠিক করা হচ্ছে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডিএমপি সদর দপ্তর অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে। কমিশনার তাঁর ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ কার্যকর করবেন। এই নিয়োগ মূলত ঈদের আগে শপিং মলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যই দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা মাঠে পুলিশের সহায়ক ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। তাই এই নিয়োগের প্রক্রিয়া, যোগ্যতা কী হবে এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

আরও পড়ুনবেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পুলিশের ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার৯ ঘণ্টা আগে‘অপব্যবহার হতে পারে’

বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীতে দুই লাখের কিছু বেশি পুলিশ সদস্য রয়েছেন। ডিএমপিতে পুলিশ সবচেয়ে বেশি, সংখ্যাটি ৩৩-৩৪ হাজার।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিএমপিতে ব্যাপক রদবদল করা হয়। ঢাকার বাইরে থেকে আনা হয় বেশির ভাগ সদস্যকে।

নতুন পরিস্থিতিতে সারা দেশেই ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা বাড়ছে। একের পর এক অপরাধের ঘটনা জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিএমপি কমিশনার অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগের কথা বললেন।

অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগ দিলে এটার অপব্যবহার হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার নাইম আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের সততার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি নিজে (নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি) যদি মনে করেন তিনি পুলিশ হয়ে গেছেন, তবে এটার অপব্যবহার হতে পারে।

নাইম আহমেদ বলেন, এখন যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে তাঁরা কিছু করছে কি না, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। এই নিয়ন্ত্রণ যদি না থাকে, তবে তাঁরা নিজেরা যা ইচ্ছা তা–ই করবেন। আর নিয়োগের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। কাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

আরও পড়ুননতুন দলের নিবন্ধন পেতে কী শর্ত পূরণ করতে হবে, রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ কী০৫ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনবাণিজ্যযুদ্ধ কী ও কেন, এই যুদ্ধে কে জেতে১৬ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক প রথম আল এই ন য় গ ড এমপ র র ক ষমত বল ছ ন র জন য র অন ক সদস য ব ষয়ট করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে অস্থিরতা, দেশবাসীকে ‘অনমনীয়’ হতে বললেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি ধরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বজুড়ে আরোপ করা শুল্ক গতকাল শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে দেশটির আমদানি করা সব পণ্যের ওপর এদিন থেকেই বাড়তি অর্থ আদায় শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এদিকে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশবাসীকে ‘অনমনীয়’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন পুঁজিবাজারের জন্য এটিই ছিল সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ। ফেডারেল সরকারের আকার কমানোসহ ট্রাম্পের নতুন আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গতকাল শনিবার ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় পড়া দেশগুলোর অন্যতম যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতারা বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কোনো কিছুই তাঁরা বিবেচনার বাইরে রাখছেন না। আর ওই ঘোষণায় বিশেষভাবে ধাক্কা খাওয়া চীন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

পুঁজিবাজারের এ অস্থিরতা ‘অর্থনৈতিক বিপ্লব’। যুক্তরাষ্ট্র এতে জিতবে (অস্থিরতা কাটিয়ে উঠবে)। অনমনীয় হোন, এটি সহজ হবে না, কিন্তু শেষমেশ যে ফলাফল আসবে, তা হবে ঐতিহাসিক।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

গত বুধবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তাঁর নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেন। এর দুই দিন পর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান পুঁজিবাজারের সূচকই ৫ শতাংশের বেশি কমে যায়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির পুঁজিবাজারের জন্য এটিই ছিল সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ।

ফেডারেল সরকারের আকার (জনবল ও খরচ) কমানোসহ ট্রাম্পের নতুন আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গতকাল ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ।

কোন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, আর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তিনি কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, সেই তালিকা তুলে ধরছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোজ গার্ডেন, হোয়াইট হাউস, ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র, ২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে অস্থিরতা, দেশবাসীকে ‘অনমনীয়’ হতে বললেন ট্রাম্প