পুলিশের ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ কী, ক্ষমতার অবপ্যবহারের আশঙ্কা কতটা
Published: 9th, March 2025 GMT
‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ বা ‘সহায়ক বাহিনী’। বিশ্বের অনেক দেশে কোনো কোনো দেশেই পুলিশের কাজে সহায়তার জন্য এমন ফোর্স রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বিষয়টি নতুন। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী খান শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ নিয়োগের কথা বলেছেন। এরপর বিষয়টি আলোচনায় আসে। ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, ঈদের আগে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬–এর ১০ ধারা অনুযায়ী কমিশনার নিজ ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ দেবে। এটা হবে সাময়িক সময়ের জন্য।
ঢাকার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে এই ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এ ব্যাপারে সংশয় আছে। এমনকি নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ বা এ ধরনের পুলিশিংয়ের সঙ্গে পরিচিত নয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সাবেক তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এ ধরনের ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ নিয়োগের কথা আইনে আছে। এর আগে এই আইন প্রয়োগ করা হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তাঁদের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে তাঁদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হলে সেটির অপব্যবহার হতে পারে।
অনেক দেশেই অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্সবিশ্বের অনেক দেশেই অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস অন্যতম। তবে এসব দেশে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্সে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে ‘অক্সিলিয়ারি পুলিশ প্রোগ্রাম’ রয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অক্সিলিয়ারি পুলিশ প্রোগ্রাম।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানে অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ কোর্স করতে হয়। নিজের প্রতিরক্ষা কৌশল, টহল কৌশল, নিউইয়র্কের ফৌজদারি আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি শারীরিক পরীক্ষা দিতে হয় তাঁদের।
নিউইয়র্ক পুলিশে অক্সিলিয়ারি পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে টহল কার্যক্রমে ভূমিকা রাখা, বিভিন্ন উৎসব ও ইভেন্টের নিরাপত্তা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখা এবং সরাসরি আইন প্রয়োগ করতে হয় না, এমন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া। আর যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১৭ বছর হতে হবে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। নৈতিক চরিত্র এবং মাদকের বিষয়ে শূন্য সহনশীল হতে হবে।
ডিএমপি সদর দপ্তর অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে। কমিশনার তাঁর ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ কার্যকর করবেন। মুহাম্মদ তালেবুর রহমান, উপকমিশনার (ডিসি)ডিএমপিতে অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ হবে কীভাবেডিএমপির অধ্যাদেশে অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগের প্রক্রিয়া কী হবে, যোগ্যতা কী হবে, সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব কী হবে—এসব বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কোনো কিছু বলা নেই। কর্মকর্তারা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারছেন না, কীভাবে এই নিয়োগ হবে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.
ডিএমপির একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ডিএমপি কমিশনার প্রয়োজন মনে করলে পুলিশকে সহায়তার জন্য যেকোনো ব্যক্তিকে যেকোনো সময় ‘অক্সিলিয়ারি পুলিশ অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন। পুলিশের মতোই তাঁদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকবে। তাঁরা যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটায় বা অপরাধ করেন, তবে পুলিশের ক্ষেত্রে যে ধরনের শান্তির কথা বলা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই শাস্তির বিধান থাকবে। ডিএমপি অধ্যাদেশের ১০ ধারা প্রয়োগ কীভাবে হবে, এ–সংক্রান্ত কোনো বিধিমালাও নেই। ফলে এই মুহূর্তে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হবে, সেটি ঠিক করা হচ্ছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডিএমপি সদর দপ্তর অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে। কমিশনার তাঁর ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ কার্যকর করবেন। এই নিয়োগ মূলত ঈদের আগে শপিং মলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যই দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা মাঠে পুলিশের সহায়ক ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। তাই এই নিয়োগের প্রক্রিয়া, যোগ্যতা কী হবে এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
আরও পড়ুনবেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পুলিশের ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার৯ ঘণ্টা আগে‘অপব্যবহার হতে পারে’বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীতে দুই লাখের কিছু বেশি পুলিশ সদস্য রয়েছেন। ডিএমপিতে পুলিশ সবচেয়ে বেশি, সংখ্যাটি ৩৩-৩৪ হাজার।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিএমপিতে ব্যাপক রদবদল করা হয়। ঢাকার বাইরে থেকে আনা হয় বেশির ভাগ সদস্যকে।
নতুন পরিস্থিতিতে সারা দেশেই ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা বাড়ছে। একের পর এক অপরাধের ঘটনা জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিএমপি কমিশনার অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগের কথা বললেন।
অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগ দিলে এটার অপব্যবহার হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার নাইম আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের সততার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি নিজে (নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি) যদি মনে করেন তিনি পুলিশ হয়ে গেছেন, তবে এটার অপব্যবহার হতে পারে।
নাইম আহমেদ বলেন, এখন যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে তাঁরা কিছু করছে কি না, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। এই নিয়ন্ত্রণ যদি না থাকে, তবে তাঁরা নিজেরা যা ইচ্ছা তা–ই করবেন। আর নিয়োগের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। কাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
আরও পড়ুননতুন দলের নিবন্ধন পেতে কী শর্ত পূরণ করতে হবে, রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ কী০৫ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনবাণিজ্যযুদ্ধ কী ও কেন, এই যুদ্ধে কে জেতে১৬ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক প রথম আল এই ন য় গ ড এমপ র র ক ষমত বল ছ ন র জন য র অন ক সদস য ব ষয়ট করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
আন্তর্জাতিক নারী দিবস: কীভাবে এল, প্রথম কবে কোথায় পালিত হলো
কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ন্যায়সংগত দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছিলেন নারী শ্রমিকেরা। এই শ্রম আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ পথপরিক্রমায় চালু হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’।
গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি দিবসটি জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ বিশ্বরূপ পায়।
‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ এখন নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সব ধরনের অর্জন উদ্যাপনের একটি বৈশ্বিক দিন। একই সঙ্গে দিবসটি লৈঙ্গিক সমতার বিষয়টিও তুলে ধরে। নারীর উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের ডাক দেয়।
কোন পটভূমিতে কোন পথ ধরে দিবসটি এল, প্রথম কবে–কোথায় কীভাবে দিবসটি পালিত হলো, তা জানতে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে দূর অতীতে।
ধর্মঘট-বিক্ষোভ১৭৭৬ সালের ৩১ মার্চ অ্যাবিগেল স্মিথ অ্যাডামস ‘রিমেমবার দ্য লেডিস’ শিরোনামে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন আইনের খসড়া তৈরির সময় নারীদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করতে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
একই বছরের ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। অ্যাবিগেল স্মিথ পরবর্তীকালে মার্কিন ফার্স্ট লেডি (১৭৯৭-১৮০১) হন। তাঁর স্বামী জন অ্যাডামস যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
১৭৯২ সালে ইংরেজ লেখক মেরি ওলস্টোনক্র্যাফ্ট তাঁর ‘আ ভিনডিকেশন অব দ্য রাইটস অব উইমেন’ শীর্ষক বইয়ে নারীদের শিক্ষাগত ও সামাজিক সমতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন।
নিউইয়র্কে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো ধর্মঘট পালন করেন নারী টেক্সটাইলকর্মীরা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁরা মজুরি বৈষম্য ও বৈরী কর্মপরিবেশের প্রতিবাদ জানান। সম-অধিকারের পাশাপাশি কম কর্মঘণ্টা ও উপযুক্ত মজুরি দাবি করেন তাঁরা।
১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান প্রায় ১৫ হাজার নারী শ্রমিক। তাঁরা শিশুশ্রম ও বৈরী কর্মপরিবেশের প্রতিবাদ জানান। কর্মঘণ্টা কমানো, বেতন বাড়ানো ও ভোটাধিকার দাবি করেন তাঁরা। এই আন্দোলন নারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি বড় নজির তৈরি করে।
এবার জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে: ‘অধিকার, সমতা, মতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’