দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।

শনিবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা মিছিল নিয়ে কয়েকটি সড়ক হয়ে ছাত্রীদের হলের সামনে দিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান। এতে ১০ থেকে ১২টি হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আরও পড়ুনঢাকাসহ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতে হল থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ৩৫ মিনিট আগে

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারাদেশে ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। গত পরশু মাগুরাতে আট বছরের শিশু পর্যন্ত ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। শনিবার গাজীপুরে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে সে দৃশ্য নিজের স্মার্টফোনে ধারণ করেন এক তরুণ। এসব ঘটনার দৃশ্যমান বিচার না হওয়ার কারণে ক্রমান্বয়ে ধর্ষণের মত অপরাধ বেড়ে চলেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এই অবনতির দায় অন্তবর্তীকালীন সরকারকে নিতে হবে। অবিলম্বে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আপামর ছাত্র-জনতা আমাদের মা-বোনদের নিরাপত্তার জন্য ফের আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আড়াই বছরেও দৃশ্যমান হয়নি ১৭৭ কোটি টাকার সেতু

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে ১৭৭ কোটি টাকার একটি সেতু নির্মাণের মেয়াদ তিন বছর হলেও আড়াই বছরেও তা দৃশ্যমান হয়নি। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 
জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৭৭ কোটি ২৩ লাখ ৫১ হাজার ১০৮ টাকা ব্যয়ে নির্মিত অষ্টগ্রামের বাংগালপাড়া মেঘনা নদীর ওপর এক কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর কাজ ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত। অর্থাৎ ২ বছর ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও সেতুর অর্ধেক কাজও হয়নি।  
সম্প্রতি সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতুর মেঘনা শাখা নদীর উত্তর পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। ওই অফিসে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। অফিসে একজনকে পাওয়া গেলেও তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবং সেতু নির্মাণের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সেতুটি ২৮টি পিলারের ওপর নির্মিত হওয়ার কথা। নদীর দুই পারে ২৫টি পিলার ও নদীর মধ্যে তিনটি পিলার। দুই পারে ২৫টি পিলারের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬টির। ১৯টি পিলারের কাজ শুরুই হয়নি। নদীর মধ্যে মূল তিনটি পিলারের কাজও শুরু হয়নি। 
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত হাসিনা সরকারের তিন মেয়াদে থাকা কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক হাওরে উন্নয়নের নামে বেশ কিছু অপরিকল্পিত কাজ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে এ সেতু অন্যতম। তাঁর এসব অপরিকল্পিত কাজ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সেতুর কাজ পরিদর্শনে একবার এলেও সরকার পরিবর্তনের পর কোনো তদারকি করেননি তিনি। প্রকল্পের মেয়াদ আর মাত্র ৭ মাস বাকি থাকলেও, এই প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে সেতুটি দৃশ্যমান হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  
এলাকাবাসী জানান, এই সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বাংগালপাড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কয়েক গ্রামের মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে তা হবে একটি মাইলফলক। 
অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রেজাউল হক বলেন, সেতুর কাজ চলমান আছে। জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও স্থানীয় লোকজনের বাধায় ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া ওরফে মানিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তিনি বিদেশে আছেন। এর ফলেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আগামী বছর এ কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 
তমা কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জরিপ প্রকৌশলী মো. বুলবুল বলেন, সেতুর ২৮টি পিলারের মধ্যে ছয়টি পিলার ও তিনটি গার্ডারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চারটি গার্ডারের কাজ চলমান আছে। সব মিলিয়ে ৩৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর কাজে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয়রা জায়গা দিতে চান না। তাদের বাধায় কয়েকবার কাজ বন্ধ হয়েছে।  
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ শাহ আলম মিয়া বলেন, নাসিরনগরের দিকে কিছু গাছ কাটার প্রয়োজন হলে সেখানকার লোকজন বাধা দেয়। ফলে কাজ সম্ভব হচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বলেন, তারা সবসময় তদারকির মধ্যেই আছেন। তাদের সিনিয়র কনসালট্যান্টরা প্রতিমাসে সাইট ভিজিট করছেন। সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর সহযোগিতার অভাব রয়েছে। অষ্টগ্রামের চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশি সমস্যা। ওই এলাকার লোকজন কাজ করতেই দেয় না। এ ছাড়া হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমে কাজ করা যায় না। সেতুটিকে অপরিকল্পিত বলা যাবে না। কারণ, হাওর দুর্গম এলাকা হওয়ায় জেলা শহর ও রাজধানী ঢাকা শহরে যাতায়াত করতে হলে লঞ্চ বা ট্রলারে এক রাত যাপন করে পরদিন গ্রামে আসতে হতো। আর এখানে এ সেতু নির্মাণ হলে রাজধানী ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়কপথে সারাবছর যোগাযোগ করা যাবে। এর ফলে হাওরের কৃষি পণ্য ও মিঠা পানির মাছের ন্যায্যমূল্য পাবে হাওরবাসী। 
কিশোরগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমিন ভূঁইয়া বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। সেতুর জায়গা নির্বাচনে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। প্রকল্প এলাকা থেকে আরও দক্ষিণে মেঘনায় সেতুটি হলে ভালো হতো। কেননা, প্রকল্প এলাকায় অনেক জমি ও বনায়নের ক্ষতি হয়েছে। সেতু নির্মাণ হলে আবাদি কৃষিজমির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধর্ষণের বিচার দাবিতে জাবির সাংবাদিকতা বিভাগের মানবন্ধন
  • আড়াই বছরেও দৃশ্যমান হয়নি ১৭৭ কোটি টাকার সেতু