চাঁদাবাজির ভিডিও ভাইরাল: বৈষম্যবিরোধীর রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদকে অব্যাহতি
Published: 9th, March 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চাঁদা দাবির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ ইমতি ও সদস্য সচিব রহমত আলীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র পদ থেকে নাহিদ হাসান খন্দকারকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।
এর আগে, গত ১ মার্চ রাতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশে বলা হয়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির অভিযোগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না। অতএব, উপরোক্ত বিষয়ে কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার কৈফিয়ত পত্র পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে নিম্নে স্বাক্ষরকারীর কাছে পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় বিষয়টি সাংগঠনিক নিয়মে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁদা দাবির ভিডিওর পর নাহিদ হাসান খন্দকারের কল রেকর্ড ভাইরাল হয়। গত শনিবার রাতে নাহিদের সঙ্গে নগরীর গ্রিন সিটি ইকো পার্কের প্রকল্প ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেনের চারটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
একটিতে নাহিদ মোবাইল ফোনে বেলালকে বলেন, ‘ডিসি আমাকে রাতে ফোন করেছিল, তারা কোনো স্টেপ নিবে কিনা। আমি তাঁকে বলেছি, আমরা তাদের সঙ্গে (পার্ক মালিক) কথা বলছি। আমরা প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা দাবি করেছি এবং ১ লাখ টাকা চাইছি বলে আপনাদের লোক বিচার দিছে। আমার মনে হয় সবকিছু আটকায় দেওয়া ভুল হয়েছে। রাতেই আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
কথোপকথনে বেলাল বলেন, ‘তুমি যেটা চাইছ, তোমার জায়গা থেকে। আওয়ামী লীগ চলে গেছে, ভেবেছি জ্বালা গেল। এখন এটা আবার নতুন করে তৈরি হয়েছে। তুমি ১ লাখ টাকা চেয়েছ, এটা আমাদের দেওয়া সম্ভব না। আমাদের এক পয়সা ইনকাম নাই।’ এসব কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নাহিদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
আর ওই দিন সকালে নাহিদের চাঁদা দাবির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দুই মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপে নাহিদকে দেখা গেলেও তাঁর পাশে থাকা ব্যক্তিকে দেখা যায়নি। এতে এক বালু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। তবে নাহিদ বলছেন, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
টাকা আত্মসাৎকারীকে জামিন দেওয়ায় গ্রাহকদের ক্ষোভ
উপজেলার রামশালা গ্রামের মিতু আক্তারের প্রবাসী স্বামী আক্কেলপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখায় পাঠান। সে টাকা কৌশলে আত্মসাৎ করে জমি-বাড়ি করেছে ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা। টাকার জন্য মিতুর সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। টাকা না পেলে সংসার ভেঙে যাবে তাঁর।
একই ব্যাংকে আমানতকারী জামাল উদ্দীনের প্রবাসী তিন ছেলে নিয়মিত টাকা পাঠান। ওই ব্যাংকের ক্যাশিয়ার তাদের কষ্টার্জিত ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গোপীনাথপুরের লিপি বেগম এ শাখায় স্থায়ী আমানত রেখেছিলেন। তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় মিতু আক্তার, জামাল উদ্দিন, লিপি বেগমসহ অসংখ্য গ্রাহক বুধবার সকাল থেকে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখা ও উপজেলা পরিষদের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে প্রতারিত গ্রাহক ছাড়াও দারুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর আগে তারা প্রতারকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। কর্মসূচি থেকে ১৩ এপ্রিল একই দাবিতে ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানান, ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখার ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা কৌশলে গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিতেন। তিনি বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। ২৩ মার্চ ঘটনাটি জানাজানি হলে গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে মাসুদ রানাকে অবরুদ্ধ করেন। তিনি সাংবাদিকসহ সবার সামনে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। ওইদিনই আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহম্মেদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক দিন পর আদালত থেকে তারা জামিনে ছাড়া পান। তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে গ্রাহকরা আমানতের টাকা পাওয়া ও জড়িতদের শাস্তির বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তারা জামিন বাতিল করে আসামিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
মানববন্ধনে আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখায় মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য এতিম ছাত্রদের দান-খয়রাতের টাকা রাখা ছিল। ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে কর্মকর্তারা মাদ্রাসার সাড়ে ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন মাদ্রাসা পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এতিমদের টাকা দ্রুত ফেরত চাই।
ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত দেড় কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করা হচ্ছে। আপাতত ওই শাখায় লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।