শারীরিক প্রতিবন্ধী হোসনা আক্তার। উচ্চতা ৩৯ ইঞ্চি। প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষকে স্বাবলম্বী করতেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
ময়মনসিংহ নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চর কালিবাড়ী এলাকার কুদরত আলী ও আলেয়া বেগম দম্পতির মেয়ে হোসনা আক্তার। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটাতে চেষ্টার কমতি নেই তাঁর। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছুটে বেড়ান শুধু প্রতিবন্ধীর খোঁজে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘অগ্রণী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনের প্রতিবন্ধীরা হোসনাকে বানিয়েছেন সভাপতি।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া, চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নসহ নগরীর ওয়ার্ডগুলোতে রয়েছে আট শতাধিক প্রতিবন্ধী। শুয়ে-বসে খাওয়া ছাড়া পরিবারের জন্য তাদের কিছুই করার ছিল না। কিন্তু কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করার উদ্যোগ নেন হোসনা আক্তার। সরকারি-বেসরকারিভাবে পাওয়া সহায়তা হোসনা পৌঁছে দেন প্রতিবন্ধীদের হাতে। নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের করছেন দক্ষ। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী।
এখানেই থেমে থাকেননি হোসনা আক্তার। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে করেন বৃক্ষরোপণ। এভাবে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় হোসনা বিভাগীয় পর্যায়ে অদম্য নারী সম্মাননা পুরস্কার ২০২৪ এবং ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মালেকা খাতুন বলেন, ‘পরিবার অবহেলা না করলেও এক সময় নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করতাম। হোসনা আমাদের বাড়িতে এসে সেলাইয়ের কাজসহ বাটিকের কাজ শিখতে উৎসাহ দেয়। তার কথামতো কাজ শিখে এখন টাকা রোজগার করতে পারছি।’
কথা হয় হোসনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনপথে চলার শুরুটা ছিল অনেক কঠিন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল আমার সব সমস্যার প্রধান। স্বাভাবিক জীবন ছিল না বিধায় সবার সঙ্গে মিশে পড়ালেখা হয়নি। তাই ঘরের চার দেয়ালের মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতাম। আমার সঙ্গে মা-বাবাকেও সামাজিকভাবে অনেক হয়রানির শিকার হতে হতো। আমি অন্য সবার চেয়ে শারীরিক গঠনে অনেক ছোট বিধায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতাম না। আমার উচ্চতা মাত্র ৩৯ ইঞ্চি।’ তিনি বলেন, ‘আমি সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে, আর্থসামাজিক নির্যাতনের কথা ভুলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করি। আমাকে সাহায্য করেছিল প্রতিবন্ধী কমিউনিটি সেন্টার। তাদের সহায়তা আর পরামর্শে নিজেকে ঘরের বাইরে উপস্থাপন করতে শুরু করি। নতুন করে পড়ালেখায় মন দেই। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার স্বামীও একজন প্রতিবন্ধী। আমি তাঁর সহযোগিতায় চলাফেরা করি। আমাদের একটি কন্যাসন্তান আছে।’
হোসনার বাবা কুদরত আলীর ভাষ্য, 
এক সময় ঘর থেকে বের হতে চাইত না হোসনা, লজ্জা পেত। ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে অন্যদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাকে নিয়ে এখন গর্ব হয়।
মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘মায়ের কাছে সব সন্তান সমান। হোসনাকে কখনোই আলাদা চোখে দেখিনি। তার মেধা ভালো। সমাজে ভালো কাজ করছে আমার মেয়ে। তাকে ছোটরা সম্মান করে, বড়রা স্নেহ করে। এমন দৃশ্য দেখে মা হিসেবে আনন্দ পাই।’
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ময়মনসিংহের অঞ্চলের পরিচালক নাঈমা হোসেন জানান, সমাজ উন্নয়নে হোসনা আক্তার সংবর্ধনা পেয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে তাঁর জন্য গর্বের।
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, নারী-পুরুষ সবাইকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুরে দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, আহত ৪

জামালপুরের শহরের পাশে একই স্থানে পৃথক ঘটনায় একজন ট্রাকচালক ও একজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এসময় চারজন গুরুতর আহত হন।

নিহতরা হলেন-জামালপুর পৌরসভার ছনকান্দা এলাকার মনসুর আকন্দের ছেলে ট্রাকচালক জুয়েল আকন্দ কালু ও বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমারপাড় এলাকার শাওন ইসলাম। 

শনিবার (৮ মার্চ) ভোর ৬ টার দিকে জামালপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের ছনকান্দা এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে৷ 

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, পৌরসভার ছনকান্দা এলাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে নিজের ট্রাক পরিস্কার করছিলেন চালক জুয়েল আকন্দ কালু। এসময় জামালপুর থেকে নান্দিনাগামী দশ চাকার (লং ভেহিকেল) একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকটিতে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই জুয়েল আকন্দ কালু নিহত হন। আহত হন আরও ৩ জন । দুর্ঘটনার পর সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে আটকে পড়ে বেশকিছু যানবাহন। 

পরে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পাথরবাহী একটি ট্রাকে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহগামী একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের চালক শাওন নিহত হন। অপর আরোহী গুরুতর আহত হন। আহতদের ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

জামালপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু মোহাম্মদ ফয়সল আতিক বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকগুলো আটক করা হয়েছে। এছাড়া নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।”

ঢাকা/শোভন/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় মামলা
  • পাতা খুঁটে মজুরি পান পুরুষের অর্ধেক
  • ময়মনসিংহে প্রসূতিদের গর্ভফুল পাচার চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার
  • জামালপুরে দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, আহত ৪
  • এক ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন চলাচল সচল
  • জামালপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের
  • ইঞ্জিনে আগুন, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ
  • ইঞ্জিনে আগুন: ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ