রমজানের শুরু থেকেই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। পর্যটক খরায় ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে হোটেল-মোটেল ও সৈকতকেন্দ্রিক কয়েক হাজার ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
গত সাড়ে চার মাস ভালো ব্যবসা হলেও রমজানের শুরুতেই চরম খরা দেখা দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। তবে ঈদ ঘিরে আবারও পর্যটন খাতে প্রাণসঞ্চার হওয়ার আশা সংশ্লিষ্টদের।
গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, পর্যটন নগরীর সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশমুখে চিরচেনা যানজট নেই, ফাঁকা সড়ক ও দু’পাশের দোকানপাট বন্ধ। শহরের রেস্তোরাঁগুলোর চিত্রও একই। খালি পড়ে আছে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস।
জানা যায়, রোজার মাসে পর্যটক টানতে কক্সবাজারের হোটেল কর্তৃপক্ষ কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। আগে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া যদি দুই হাজার টাকা হয়, এখন সেই কক্ষে থাকা যাবে মাত্র ৬০০ টাকায়। হোটেল মালিকরা বলেন, অতিরিক্ত খরচের কারণে এতদিন যারা কক্সবাজার সৈকতসহ জেলার দর্শনীয় স্থান দেখতে পারেননি, রোজার মাসের বিশেষ ছাড়ের এ সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারেন বলেও মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার সমকালকে বলেন, রোজার মাসে কক্সবাজারের ৯৯ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকে। অধিকাংশ হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজের কর্মচারীদেরও বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে ৩০-৪০ হাজার কর্মচারী ছুটিতে চলে গেছেন। অবশিষ্ট ১০-১৫ হাজার কর্মচারী দিয়ে হোটেলগুলো চালু রাখা হয়েছে। কিছু হোটেলের সংস্কার ও রঙের কাজ চলছে। তবে পর্যটকের জন্য সাহ্রি ও ইফতারের ব্যবস্থা করেছে বেশ কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁ।
তিনি বলেন, হোটেলগুলোতে বিশেষ এ ছাড়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে রোজার মাসে পর্যটককে কম টাকায় সৈকত ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া। ঈদের দিন পর্যন্ত বিশেষ ছাড়ের এই ঘোষণা কার্যকর থাকবে।
গতকাল দেখা যায়, সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে অলস সময় কাটছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বিচ বাইক চালক ও ফটোগ্রাফারদের। খালি পড়ে থাকা সৈকত যেন জানান দিচ্ছে পর্যটন খাতে নীরবতার চিত্র।
একইভাবে হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, কলাতলীর সাততলা রেইন ভিউ রিসোর্টে কক্ষ আছে ৫১টি। চারটি ছাড়া অবশিষ্ট ৪৭টি কক্ষ খালি পড়ে আছে। পাশের হোটেল কক্স ইন্টারন্যাশনালে কক্ষ আছে ২৫টি। অতিথি আছেন একটিতে, ২৪টিই খালি।
ডলফিন মোড়ের শাহজাদী রিসোর্টের ৪৫টি কক্ষের মধ্যে ৪৩টি খালি জানিয়ে রিসোর্টের মালিক নাজিম উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর রোজার মাসে হোটেলগুলো খালি থাকে। এবারও খালি যাচ্ছে। তবে এবারের বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা কাজে আসতে পারে। পর্যটক টানতে তাঁর রিসোর্টের কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
হোটেল মালিকরা জানান, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সৈকত ভ্রমণে আসেন অন্তত ২১ লাখ পর্যটক। এ সময় হোটেল কক্ষ ভাড়া ১০০ শতাংশ আদায় করা হয়। চলতি সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে ছয়-সাত লাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এ সময়ও কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়া খান বলেন, সন্তানদের স্কুল ছুটির অবসরে যারা একটু দূরে কয়েকটা দিন বেড়িয়ে আসতে চান, তাদের জন্য কক্সবাজার এখন আদর্শ জায়গা হতে পারে। কারণ, রমজান উপলক্ষে কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে চলছে বিশেষ ছাড়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
রমজানে পর্যটকশূন্য কুয়াকাটা
রমজানে পর্যটকশূন্য হয়ে পরেছে কুয়াকাটা। এতে বেকার দিন কাটাচ্ছে এখানকার অন্তত ১৬ ধরনের পেশার কয়েক হাজার মানুষ।
শুক্রবার সৈকতের সবগুলো পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, রমজানের শুরুর দিন থেকেই পর্যটকশূন্য রয়েছে এই সৈকত। গত শুক্রবারও সৈকতে টইটম্বুর ছিল পর্যটকে সেখানে এখন পর্যটকে হাহাকার। পর্যটক না থাকায় সৈকতে থাকা ছাতা, বেঞ্চ গুছিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ঝিনুক ব্যবসায়ীরাও তাদের স্টলগুলো বন্ধ রেখেছেন। তবে কিছু দোকানিরা সকালে দোকান খুলে বসলেও সন্ধ্যা নামার আগেই তা বন্ধ করেছন।
শুধু শুঁটকি, ছাতা, বেঞ্চ বা ঝিনুক ব্যবসায়ীরাই নয় পর্যটনকেন্দ্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রায় দুইশ’র বেশি হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না একটি রুম বুকিং দেয়ার মত পর্যটক। তবে তাদের আশা রমজানের প্রথম দিকে পর্যটক না পেলেও শেষের দিকে কিছু পর্যটক পাবেন।
কুয়াকাটা সৈকতের ফটোগ্রাফার আ. রহিম জানান, রমজান শুরুর দিন থেকেই পর্যটকশূন্য সৈকত, মার্চ মাসে আমরা ভরপুর পর্যটক পেয়ে থাকি তবে রমজান শুরু হওয়ায় সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছ। আমরা ক্যামেরা নিয়ে সৈকতে নামি কিন্তু কোনো লোক নাই, সরাদিনে একশো টাকাও ইনকাম নেই।
সৈকতের আচার দোকানি নাসির উদ্দিন জানান, রমজানের শুরুটা পর্যটকশূন্য হলেও ১০ রমজানের পরে পর্যটকের আমগন ঘটবে এমনটা মনে হচ্ছে। বর্তমানে পর্যটক নেই তাই অনেক দোকান বন্ধ রয়েছে। আমরা কিছু দোকান খুলে সময় কাটাচ্ছি তবে ইফতারের আগে বন্ধ করে ফেলি।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, রমজান মাসের প্রথম দিকে পর্যটক তুলনামূলক অনেকটাই কম থাকে। তবে আমরা ১০-১৫ রমজানে কিছু বুকিং পেয়েছি। সেই সঙ্গে ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় অগ্রিম ভালো বুকিং আসা করছি।
ট্যুরস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন পুলিশ পরিদর্শক কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, বর্তমানে কুয়াকাটায় পর্যটক নেই কিন্তু আমাদের টহল টিম এখনও সৈকতে দায়িত্ব পালন করছে।