একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তামজিদ আহসান বেশ কয়েক বছর ধরেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন ক্যাশলেস লাইফস্টাইলে, হোক তা অনলাইন অর্ডারের ক্ষেত্রে বা কোথাও গিয়ে কেনাকাটার সময়। পবিত্র রমজান মাসে ক্যাশলেস লাইফস্টাইলের সুবিধা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো রমজানে অফিস ছুটির সময়টায় যানজটে স্থবির হয়ে থাকে শহর। আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই যেহেতু চাকরিজীবী, অফিস থেকে বের হয়ে পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতারি কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। সংশয় থাকে ঠিক সময়ে বাসায় পৌঁছাতে পারব কিনা। এমন অবস্থায় সহজ সমাধান বিকাশ পেমেন্ট। কোনো একটা পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতার অর্ডার দিই, আর পেমেন্ট করে দিই বিকাশে। দেখা যায় জ্যাম ঠেলে আমরা বাসায় পৌঁছানোর আগেই ইফতার পৌঁছে যাচ্ছে। এই সময়টায় বিকাশ পেমেন্টে বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফারও বেশ উৎসাহজনক।’

তামজিদের মতো দেশজুড়ে এমন বহু গ্রাহক ডিজিটাল পেমেন্টে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। নানা সুবিধার কারণে ক্রেতার পাশাপাশি বিক্রেতারাও ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছেন। রাজধানীর শেওড়াপাড়ার একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, ‘রমজান মাসে ইফতারের আগে কাস্টমারের ভিড় সামলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কয়েক বছর ধরে বিকাশ পেমেন্ট গ্রহণ করার কারণে ‘বিলিং প্রসেস’ অনেক দ্রুত ও সহজ হয়েছে। পাশাপাশি বিকাশ পেমেন্টের কল্যাণে অনলাইনেও অনেক অর্ডার পাচ্ছি।’
দেশজুড়ে বিকাশের রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি এজেন্ট এবং প্রায় ১০ লাখ মার্চেন্টের এক বিশাল নেটওয়ার্ক। বর্তমানে বিকাশের প্রায় আট কোটি গ্রাহক দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ছোট-বড় মার্চেন্টে কিউআর স্ক্যান করে, পেমেন্ট গেটওয়ে এবং *247# ডায়াল করে দ্রুত, সহজে এবং নিরাপদে পেমেন্ট করতে পারছেন। বিকাশ গ্রাহকরা ৪৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং বাংলাদেশে ইস্যুকৃত ভিসা, অ্যামেক্স ও মাস্টারকার্ড থেকে যখন প্রয়োজন তখনই অ্যাড মানি করে প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটা সারতে পারছেন। বিকাশ পেমেন্টে কেনাকাটার বড় সুবিধা হচ্ছে অ্যাপের স্টেটমেন্ট অপশন থেকে যে কোনো সময় দেখে নেওয়া যায় কোন খাতে কত খরচ হলো। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে এবং ঈদকে সামনে রেখে বিকাশ পেমেন্টে ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক অফার দেখে নেওয়া যাবে বিকাশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ বা ওয়েব লিঙ্কে।  

বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘দৈনন্দিন ব্যস্ততায় মূল্যবান সময় বাঁচাতে গ্রাহকরা ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিকাশও তাই উৎসব-পার্বণ সামনে রেখে সুপারস্টোর, ব্র্যান্ড শপ, রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন স্থানে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্টসহ নানা অফার দিয়ে থাকে। পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্টের প্রকৃত সুবিধা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে বিকাশ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইউটিলিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, টেলিকম অপারেটর, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ নানা ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দেশে একটি ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক অফার : পাড়ার মুদি দোকানে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা থেকে শুরু করে বাস-ট্রেন-প্লেনের টিকিট কাটা যায় বিকাশ পেমেন্টে। সুপারস্টোর, অনলাইন শপ, ফেসবুক পেজ, বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপ, ফ্যাশন হাউস, জুতার দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন আউটলেটে বিকাশ পেমেন্টে রোজা ও ঈদের কেনাকাটায় মিলছে বিভিন্ন ধরনের ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক অফার।
অ্যাপ থেকে কার্ড দিয়ে সরাসরি পেমেন্ট: বিকাশ অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালান্স না থাকলেও বিকাশ অ্যাপে সংযুক্ত ভিসা কার্ড থেকে সরাসরি বিকাশ পেমেন্টের মাধ্যমে কেনাকাটার সুযোগ পাচ্ছেন বিকাশ গ্রাহকরা। অনেক দোকানে বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে ব্যয়বহুল পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও অনেক গ্রাহক ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট দিতে পারেন না। তবে এই ধরনের ছোট দোকান থেকে শুরু করে সুপারশপ, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে বিকাশের কিউআর স্ক্যান করে গ্রাহকরা তাদের বিকাশ অ্যাপে সংযুক্ত ভিসা কার্ড থেকে সরাসরি বিকাশ পেমেন্ট করে দিতে পারেন। 

পে-লেটার দিয়ে কেনাকাটা: জরুরি প্রয়োজনে কেনাকাটাকে আরও সহজ করতে প্রথমবারের মতো ‘পে-লেটার’ নামে বিশেষ জামানতবিহীন ঋণসেবা চালু করেছে বিকাশ ও সিটি ব্যাংক। এ সেবার মাধ্যমে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও গ্রাহক প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বিকাশ অ্যাপ থেকেই তাৎক্ষণিক সিটি ব্যাংকের বিশেষ ঋণ নিয়ে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। সাত দিনের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করা যায় কোনো ইন্টারেস্ট ছাড়াই। আবার গ্রাহক চাইলে তিন বা ছয় মাসের কিস্তিতেও পরিশোধ করতে পারবেন ঋণ। পে-লেটারের জন্য বিবেচ্য গ্রাহক ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণসীমা পেতে পারেন। বিকাশ অ্যাপের পেমেন্ট অপশন অথবা লোন অপশন থেকেও পে-লেটার ফিচার ব্যবহার করতে পারছেন গ্রাহকরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র হকর গ র হক ইফত র সরক র রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ছড়া লেখায় কড়া শাস্তি

ছড়া লিখে কড়া শাস্তির মুখে পড়েছেন ঢাকা ওয়াসার কমন সার্ভিস বিভাগের উপসচিব শহিদুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে এবং উপব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (প্রশাসন) দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও হয়েছে।

শহিদুল ইসলাম নিজের লেখা একটি ছড়া তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। ছড়ার বিষয় ছিল রাজধানীর আলোচিত সেই ঈদ শোভাযাত্রার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা, যিনি গাধার পিঠে উল্টো দিকে ফিরে বসেছিলেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই শোভাযাত্রা আয়োজন করে। হোজ্জারূপী ওই চরিত্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা হয়।

শহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘লেখালেখি পুরোনো অভ্যাস। এর দু-একটি ফেসবুকে শেয়ারও করি। ঈদের পর একটি ছড়া লিখে ফেসবুকে দিয়েছিলাম। হঠাৎ মঙ্গলবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাকে তাঁর কক্ষে ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে জিজ্ঞেস করেন, ছড়াটি আমার লেখা কিনা? হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলে, কেন লিখেছি জানতে চান তিনি। আমি স্যারকে বলি, অভ্যাস থেকে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু লেখালেখি করি। ছড়াটি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে লিখিনি।’

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এর পর এমডি স্যার বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে কী লেখা যাবে, আর যাবে না– তা উল্লেখ রয়েছে। আমি বলি, স্যার, আমি তো কাউকে উদ্দেশ করে লিখিনি। ছড়াতে অপরাধ কী হয়েছে, তাও বুঝতে পারছি না।’

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেলে অফিস ছাড়ার সময় একটি অফিস আদেশ আমাকে দেওয়া হয়। সেখানে দেখি, আমাকে ওএসডি করা হয়েছে।’

ছড়া লেখায় কর্মকর্তাকে ওএসডি করার খবরে ঢাকা ওয়াসায় নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে তা গণমাধ্যমের নজরে আসে। কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি চাকরি করে অনেকেই সাহিত্যচর্চা করছেন। অতীতে অনেক কবি-সাহিত্যিক সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে কবিতা, গল্প ও গান লিখেছেন। কিন্তু শহিদুল ইসলামের নিছক রসাত্মক ছড়াকে পুঁজি করে এমন শাস্তি দেওয়া ঠিক হয়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান সমকালকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবী কী লিখতে পারবেন, কী পারবেন না, সে নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তাঁর লেখা ছড়ায় সে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে হয়েছে। ওয়াসা সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। দেখা যাক, কমিটি কী প্রতিবেদন দেয়।

ছড়ায় যা আছে
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা 
পেয়ো নাকো লজ্জা
ঘোড়ায় চড়িয়া তুমি হাঁটিয়া চলো
রসিকতায় শত কথা সত্যি বলো
গাঁধা নাকি ঘোড়া সে
কি করে কে বলে যে
গাঁধা হাঁটে চার পায়ে টগবগ
তোমার মত নয় সে অযথাই বকবক
কেউ বলে তুর্কি কেউ বলে ইরানী
কখনও কি স্বাদ পেলে সুলতানী বিরানী
ঈদ এলে হেঁটেছ কি মুঘলের ঢাকাতে
কাণ্ড কি ঘটিয়েছ অযথাই হাসাতে
বহুকাল বাদে আজ তুমি দেখা দিলে
ঢাক ঢোলের তালে তালে
গাঁধার পশ্চাতে মুখ করে চলিলে উল্টো 
আজব এক ঈদ গেলো ঘটনাটি ভুল তো?
যাই হোক জানি কম নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
এতে তুমি পেয়ো না গো এতটুকু লজ্জা।

শহিদুলের ছড়াটি পড়ার পর কবি মোহন রায়হান সমকালকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে লেখালেখি করার জন্য। বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সমালোচনা সহ্য করতে পারেনি। ছড়াটিতে সরকারের সমালোচনা আছে বলে মনে হয়নি। বরং গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে যে অবয়বে তুলে ধরা হয়েছে, তা জামায়াতের এক নেতার প্রতিকৃতি মনে হতে পারে।’

একসময় আবু করিম নামে এক কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক লেখা লিখেছিলেন। পরে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পিএস হয়েছিলেন। যদিও শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলে আবু করিমকে চাকরিচ্যুত করেন। 

মোহন রায়হান বলেন, ‘আমি মনে করি না শহিদুলের এ ছড়ার মধ্যে এমন কিছু আছে, যার জন্য তাঁর পেশাগত জীবনে কোনো শাস্তি আরোপ হতে পারে। বরং শাস্তি দিলে তাঁর সৃষ্টিশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ