Samakal:
2025-03-09@12:03:32 GMT

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

Published: 8th, March 2025 GMT

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

কখনও কখনও একটি সঠিক সিদ্ধান্ত জীবন বদলে দিতে পারে। শম্পা আক্তার ও তাঁর পরিবারের গল্পটা ঠিক এমনই। হঠাৎ একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামী জাকির হোসেন মারা যান। জাকির হোসেন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাঁর। জাকির হোসেনকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন শম্পা আক্তার।
সন্তানদের নিয়ে কী করবেন, কীভাবে পরিবারের হাল ধরবেন বুঝতে পারছিলেন না তিনি। তবে জাকির হোসেন জীবদ্দশায় একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তা হলো তিনি ২০ লাখ টাকার একটি জীবন বীমা পলিসি করেছিলেন। ৩২ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিতে পেরেছিলেন তিনি। এরপরেও মাত্র তিন দিনের মধ্যেই তাঁকে বীমা পলিসির পুরো ২০ লাখ টাকাই ‍পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটি। এটিই হয়ে ওঠে শম্পা আক্তারের নতুন পথচলা শুরুর গল্প।
জাকির হোসেনের জমি ও দোকান ছিল। দোকানটি বন্ধক রেখেছিলেন তিনি। শম্পা আক্তার বলেন, ‘ইন্স্যুরেন্সের ১০ লাখ টাকা দিয়ে দোকানটা ছাড়িয়ে নিয়েছি। ওটা থেকে মাসে মাসে ভাড়া পাই। বাকি টাকা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ফিক্সড করে রেখে দিয়েছি।’ এভাবেই ইন্স্যুরেন্সের পাওয়া টাকা থেকে শম্পা আক্তার পরিবারের জন্য নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস তৈরির পাশাপাশি সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও শিক্ষা নিশ্চিত করেন।
জাকির হোসেনের পরিবারে এখন অনিশ্চয়তার কালো মেঘ নেই। সেখানে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। দুই সন্তান নিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শম্পা আক্তার। নতুন স্বপ্ন নিয়ে হাল ধরেছেন জীবনের। সবকিছু সম্ভব হয়েছে জীবদ্দশায় স্বামী জাকির হোসেনের নেওয়া সেই সিদ্ধান্তের কারণে; যা তাঁর দুই সন্তান ও স্ত্রীকে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে বীমা কোম্পানি দ্বারা গ্রাহক হয়রানির ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। এমনকি বীমাদাবি নিষ্পত্তির সময় গ্রাহকের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা একবারেই যে নেই তা নয়। শম্পা আক্তারের অভিজ্ঞতা পুরোটাই আলাদা। কারণ, তাঁর স্বামী জাকির হোসেন এই বীমা পলিসিটি নিয়েছিলেন গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের কাছ থেকে। ২০১৪ সাল থেকে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে দেশের বীমা খাতে ভালো অবস্থান রয়েছে তাদের। প্রতিশ্রুতি রক্ষার অসংখ্য গল্প রয়েছে বলেও গার্ডিয়ান লাইফের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বর্তমানে ১ কোটি ২০ লাখের অধিক মানুষকে আর্থিক সুরক্ষা দিয়ে চলেছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইন স য র ন স পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

একলা রাতের অন্ধকারে

আমি কি পাস করেছিলাম কখনও, ফেল-এর কথা লিখব? জীবনের যত সংকট, পরীক্ষার নামান্তর যদি হয়, ফেলই তো করেছি সারাবেলা। হয়তো খুব টেনেটুনে উতরে গেছি দুয়েকবার, তা দিয়েই চলছি, তা নিয়েই চালিয়ে নিচ্ছি। আর তা দিয়ে কেটেছে বেলা, চলেছে পরিণতিতে। একবার স্কুলে পরীক্ষা দিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গেলে আমার এক শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, এত ভাবনার কী আছে? ফলাফল তো দুটি– হয় পাস, নয় ফেল। যে কোনো একটা তো হবেই। তাই তো যে কোনো একটা তো হবেই– হয় পাস, নয় ফেল। হয় জীবন, না-হয় মৃত্যু। দুয়ের বাইরে তো জীবন ও জগতে কিছু নেই; সাদা আর কালো দুটি রঙে রাঙিয়ে নিয়েছি চেতনার রং। পান্নাকে করেছি সবুজ, চুনিকে রাঙিয়েছি। ধূসর যা কিছু অস্পষ্ট পাস আর ফেইলের মাঝামাঝি কিছু অস্তিত্ব কই তার? তবু এই জীবন আর মৃত্যু নিয়ে মানুষের কী অক্লান্ত দৌড়ঝাঁপ। অতর্কিতে পাওয়া এক জীবন মানুষ হারাতে পারে অতর্কিতে। তবু কত ভালোবাসা প্রতিটি মুহূর্তের জন্য। কত চুলচেরা হিসাব। হারলাম, না জিতলাম। জিততেই হবে। প্রত্যেকের এ এক অবাস্তব দৌড়। দৌড়...দৌড়...। যেন জেতাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। হারা যদি হয় ফেইলের নামান্তর, ফেল করা যাবে না কিছুতেই। জেতার লক্ষ্যে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত জীবন শেষে ফল হাতে নিয়ে আবিষ্কৃত হয় অজস্র ফেইলে ভরে আছে জীবনের রিপোর্ট কার্ড। সবাই যদি জেতেই কেবল, হারবে কে? অথবা কে আছে এমন খালি জিতেই গেছে? কোনো না কোনোভাবে কোথাও না কোথাও তার ফেল অনিবার্য নিয়তি। তবু মানুষ বাস্তবতা ভুলে প্রতিটি মুহূর্তকে মেপে নিতে চায় পাস-ফেইলের দাঁড়িপাল্লায়। আর আমার এই না মাপা পর্যবসিত হয় বোকামিতে। যারা আমাকে বোকা বলে, জীবন আর অনুভবের মধ্যবর্তী সংযোগ সুতোয় বসে আমি বরং আমার ফেলকেই উদযাপন করি পরম স্বস্তিতে।
আমি কি কখনও ফেল করেছিলাম, ফেইলের কথা লিখব। প্রথম ফেল। আসলে পাস-ফেল কি কেবলই একাডেমিক শ্রেণিকক্ষের পরিমাপক? স্কুলের প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠার সময় প্রথম যখন প্রথম হয়ে গেলাম, তখনও এর মর্যাদা বুঝিনি। কাইদাজম, বাড়ির কাছের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে এই নামেই ডাকতাম তখন; বড় হতে হতে জানলাম আসলে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে স্কুলটির নাম ছিল কায়েদ-এ-আজম। ৩০ লাখ প্রাণ ঝরে গেছে, পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছে নতুন দেশ, স্বাধীন পতাকা, সার্বভৌম সীমানা। তবু নাম আঁকড়ে আছে লোকমুখে, বিকৃত হয়েও। সেই কাইদাজম স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কেবল নামটি মনে আছে তাঁর, বিভাদি। শহরের একমাত্র দাঁতের ডাক্তার অনিল দাদুর স্ত্রী, পারিবারিক সম্পর্কের খাতিরেই বোধকরি আমাকে এক পোটলা চীনাবাদাম কিনে দিয়েছিলেন। অমূল্য সেই পোটলা নিয়ে আমার নৃত্য দেখে কে। নাচতে নাচতে মায়ের হাতে গুঁজে দিয়েছি সেই বাদামের পোটলা, জীবনের প্রথম অনাকাঙ্ক্ষিত উপহার। অথচ এর চেয়ে অনেক অনেক মূল্যবান লাল কালিতে ‘১ম’ লেখা টুকরো কাগজটা আমি বুঝিনি তখনও। 
পরে বড় হতে হতে জানা হয়েছে জীবনের প্রয়োজনে, জীবিকার প্রয়োজনে, সাফল্য কিংবা ফুটানির প্রয়োজনে ক্লাসে প্রথম হতে হয়। জীবনের পরীক্ষায় পাস করতে হয়। যে পাস করে সময় তার পাসের গাথা নানা রং বাহারে লিখে রাখে, পৌঁছে দেয় ভবিষ্যতের কাছে। কিন্তু ফেল যে করে তার কাছে কেউ জানতে চায় না ফেইলিউরের কারণ। পৃথিবীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় না পরাজিতের কোনো গাথা। তার জন্য কোনো করুণা নেই। মায়া নেই। আক্ষেপ নেই, ক্ষমা নেই। সে ইরেজ হয়ে যায় সময়ের পাতা থেকে।
আমি পাস করেছিলাম কবে যে প্রথম ফেইলের গল্প লিখব। জীবন তো অসংখ্য ফেইলের সমাহার। তবু প্রথম ফেল! জ্যামিতি বক্সে বেতনের টাকা রেখে ক্লাসে ঘোষণা দিয়েছিলাম– এই আমার ব্যাগে কিন্তু টাকা আছে, কেউ নিও না। ফের বারান্দা থেকে ক্লাসে ফিরতেই দেখি টাকা নেই। জ্যামিতি বক্সসহ উধাও। ভয় পেয়েছিলাম বাবার বকাকে। কিন্তু আমাকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে সেদিন কিচ্ছুটি বলেননি তিনি। পরদিন সন্ধ্যায় বুঝিয়ে বলেছিলেন, এই দুনিয়া কতটা কঠিন। আমি যে সরলতায় বিশ্বাস করি, আমি না করে গেলে আমার টাকা কেউ নেবে না; সেই সরলতা দিয়ে দুনিয়া চলে না। হ্যাঁ, ফেল তারাই করে, যারা বিশ্বাস করে। সরলতা দিয়ে জটিল পৃথিবী দেখে। আমার জীবনের প্রথম ফেল বোধহয় সেটাই। সেই সরল বিশ্বাসকে হারানো। জীবনকে দেখার দর্শনে ধাক্কা লাগা। 
সেই কৈশোরে জানা হয়েছিল জীবন এবং জগৎ সরল নয়, যেমন সরল করে আমি ভাবি। তাই বলে কি জটিল জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে জটিল করে তুলতে পেরেছিলাম যে আমার প্রথম ফেলই শেষ ফেল হবে। পরের জন্য কাষ্ঠাহরণ যাহার স্বভাব– আমি সেই নবকুমার। এই একটু কায়দা করে, চালাকি করে, জটিল করে কেবল পাসের পর পাস করে যাব, নিজেকে এভাবে কেঁচেগণ্ডূষ করা যায় না। কেউ কেউ চাইলেও পারে না। সরল বোকামি অন্তর্গত রক্তে বাস করে। চাইলেই উপড়ানো যায় না। আমিও পারিনি। ফেইলের পর ফেল করে গেছি। বুঝেও ফেল করেছি, না বুঝেও ফেল করেছি। প্রতিটি ফেলকেই ভেবেছি প্রথম ফেল। কিন্তু আত্মদহন হয়নি। ফেইলের ক্ষতিতে ভেঙেচুরে গেছি। জীবনজুড়ে মাশুল দিতে দিতে প্রতিদিন ফেলগুলো দেখি, নিজেকে করুণা করি, বাহবাও দিই। ফেল করেছি, কিন্তু দিন শেষে নিজের কাছে নিজের কিছু কৈফিয়ত নেই। হেরেছি। পরাজিত হয়েছি। ক্ষতি মেনে নিয়েছি। কিন্তু আত্মদহন নেই। সব সময় নিজের সরল বিশ্বাসের কাছেই বিশ্বস্ত থেকেছি। ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেইলে আগুন জ্বেলেছি বারে বারে। একলা রাতের অন্ধকারে আলো পেয়েছি ঠিক। পথ হারাইনি।
আমার পুতুলের শাড়ি চুরি করা খেলার সাথীটিকে চোর বলতে পারিনি। আমার পরীক্ষার খাতা দেখে ডিসিপ্লিন রচনা লেখা বন্ধুটি আমাকে না জানা প্রশ্নের উত্তর বলে না দিলে আমি তাকে প্রতারক বলতে পারিনি। আমার নোট নিয়ে পরীক্ষা পাস করা সহপাঠী স্বীকার না করলেও আমি তাকে অকৃতজ্ঞ বলতে পারিনি। প্রেমিকের চাতুর্য ধরতে পেরেও বুঝতে না পারার ভান করে আমি নির্বিকার থেকেছি। সংসারে নিজেকে বিলিয়ে দিতে দিতে ভেবেছি এই ভবিতব্য। প্রতিটি দিন সংগ্রামমুখর। যুদ্ধক্লান্ত। অথচ বাইরের দুনিয়া দেখে আমার বাহ্যিক অবয়ব, অজানা কারণে সেখানে এই যুদ্ধ ক্লান্তি কোনো ছায়া ফেল-এ না। এটাই বোধকরি আমার জিতে যাওয়া। সোকল্ড সাফল্য নামক পাসের খাতায় নাম না লিখেও নিজেকে ফেল না ভাবা, ব্যর্থতার গ্লানি বহন না করা।  হ্যাঁ, কোথাও পাস করতে পারিনি। অথচ পারতাম। কী না হতে পারতাম! নিজের প্রকৃতিপ্রদত্ত যোগ্যতা, সামর্থ্য কিংবা পার্থিব সুযোগ একটু কায়দা করে ব্যবহার করা গেলেই জাতে ওঠা যেত, ওঠা যেত সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায়। যাকে এই সমাজ-সংসার সাফল্য বলে। পাসের অন্য নাম। 
অথচ বোকার মতো, সরলতার মতো আমি জীবনভর ‘ফেল’ করেই গেলাম। ফেইলে ফেইলে ভরা আমার জীবন। কোথাও কোথাও দিন শেষে ফেইলিউরের অপর নাম পাস। নিজের কাছে নিজের পাস। জীবনের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মতো যে স্বভাব, সে স্বভাবে অবশেষে নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় নিজেকে। সেখান থেকে বিচ্যুত হওয়া মানে জীবন থেকে বিচ্যুত হওয়া। আমি জীবন থেকে বিচ্যুত হইনি। ফেল করে নিজের কাছে নিজে জিতে গেছি। প্রতিবার প্রতিটি ফেলকে ভেবেছি প্রথম ফেল।
‘আমারই হাতে এত দিয়েছ সম্ভার, জীর্ণ করে একে কোথায় নেবে?’ v

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বপ্ন ওড়ানো তরুণ জুলহাস
  • ‘অনুপ্রেরণা যে কোনো কাজই সহজ করে দেয়’
  • জীবিকা যখন ভ্রাম্যমাণ নার্সারি
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের দায় ও দায়িত্ব
  • নারী-শিশুর প্রতি বাড়ছে সহিংসতা
  • অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠিত করতে হলে
  • জীবন যুদ্ধ
  • একলা রাতের অন্ধকারে
  • অশ্রুবারিচয়