ঢাকার ধামরাইয়ে বংশী নদীর ওপর বেইলি ব্রিজের পাটাতন ভেঙে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে কয়লাবোঝাই একটি ট্রাক। গতকাল শনিবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ভালুম-কালামপুর বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত না হলেও সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ধামরাই ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার জনসাধারণ। তাদের বহনকারী যানবাহনগুলোকে অন্তত ১০ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ৩৫ বছর আগে ধামরাইয়ের কালামপুর-ভালুম-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের বংশী নদীর ওপর স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। ১০ বছর আগে সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত করার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় নেওয়া হয়। এ সড়ক দিয়ে ধামরাইয়ের সানোড়া, কুশুরা, ভাড়ারিয়া, বাইশাকান্দা, যাদবপুর ইউনিয়নসহ পাশের কালিয়াকৈর উপজেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ ধামরাই সদরসহ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করেন।
বেশ কিছুদিন ধরে ভালুম-কালামপুর বাজারের ওই বেইলি ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন ভালুম গ্রামের কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী ওয়াসিম রানা। তিনি বলেন, এ দশা অন্তত ১০ বছর ধরে চলছে। এরই মধ্যে কয়েকবার জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হয় সেতুটি। এতে যানবাহন চলাচল কোনো রকমে চলছিল। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরেই সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এ সেতুর ওপর দিয়ে শ্রমিকবাহী বাসসহ ইট, বালু, মাটি ও কয়লাভর্তি শত শত ট্রাক যাতায়াত করে। শনিবার দুপুর ২টার দিকে কয়লাভর্তি একটি ট্রাক ভালুমের দিকে যাচ্ছিল। সেটি সেতুর উত্তর পাশে যাওয়ার পরই পেছনের দুই চাকা সেতুতে দেবে যায়। এ দৃশ্য দেখতে বংশী নদীর দুই পারে শত শত মানুষ ভিড় করছেন।
কালামপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল হালিম কণ্ঠু বলেন, শনিবার দুপুরে ধসে পড়ার পর থেকেই সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। হেঁটে চলারও উপায় নেই। সবাইকে বিকল্প পথে চলাচল করার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে নয়ারহাট-ইসলামপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ওসমান গণি বলেন, বেইলি ব্রিজে দুর্ঘটনার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এখান দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করতে দ্রুতই ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
৮৮২ কোটি টাকার সড়ক মৃত্যুফাঁদ
বছর চারেক আগে ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬ কিলোমিটার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। দুই বছর না যেতেই বিভিন্ন স্থানে উঁচু-নিচু ঢেউ, গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট হয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের প্রায় ৬৬ কিলোমিটারে এই দশা। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আম্রবাটি মাদ্রাসা মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চণ্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু-নিচু হয়ে আছে। পিচঢালাই উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে অনেক জায়গায়।
মহাসড়কটিতে নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যাংক কর্মকর্তা শামিম হোসেন ও ট্রাকচালক হৃদয় খান বলেন, সড়কের অনেক স্থান দেবে আলপথের মতো হয়ে গেছে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নিচু স্থানে চাকা পড়লে নালা থেকে যানবাহন সাইড দেওয়া-নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
একই অবস্থা ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে পশ্চিম দিকে রাঙামাটি হয়ে বারাইহাটের কিছু অংশ এবং আমবাড়ী যাওয়ার আগে দিনাজপুর পর্যন্ত। মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী পরিবহন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর মহাসড়কের এসব এলাকা দিয়ে চলাচল আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, যত্রতত্র উঁচু হয়ে থাকায় এসব অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মোটরসাইকেল উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালিসহ ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানার সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে এই মহাসড়কে ১১৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন ৪৫ জন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু ফুলবাড়ীতে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ থেকে দিনাজপুর ১০৬ কিলোমিটার ৪২ ফুট প্রশস্তকরণে ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। রাস্তাটি ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে আট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ করে। প্রশস্ত ও সংস্কারের কাজ শেষ করার দুই বছরের মাথায় আবারও রাস্তাটি দেবে গিয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে, সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই সড়কের সংস্কার করে দেওয়ার চুক্তি থাকে। এর মধ্যে মহাসড়কে যেখানে সমস্যা হয়েছিল, তারা সেসব জায়গা সংস্কার করেছেন। এখন চুক্তির সময় ২০২৪ সাল পার হয়েছে। তাই তাদের আর কাজ করার সুযোগ নেই।
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ২০১৭-১৮ সালে সেই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানরা ঠিকাদারের কাছে কমিশন বাণিজ্য করেছেন। সড়কের শতকরা ৬০ ভাগ টাকা লুটপাট করে তাদের পকেট ভরেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের উপকরণ দ্বারা সংস্কার ও প্রশস্তকরণ করে বরাদ্দের অধিকাংশ
টাকা লুটপাট করায় এখন রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অনেক সময় ওভারলোড গাড়ি চলাচলের কারণে যেসব জায়গা উঁচু-নিচু হয়েছে, তা আমরা কেটে ফেলব। সড়কে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে কাজ করেছে। অনেকেরই চুক্তি শেষে হয়েছে এবং কিছু জায়গায় চুক্তির সময় আছে। সরেজমিন দেখে ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই জায়গাগুলো সংস্কার করা হবে।