খননেও কাটেনি বরাক নদীর নাব্য সংকট, ব্যর্থ প্রকল্প
Published: 8th, March 2025 GMT
হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল ও নদীর জেলা মৌলভীবাজারের বহু জলাশয় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, কুশিয়ারা থেকে জন্ম নেওয়া সদর উপজেলার গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া বরাক নদী।
কালের গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী। ৭ বছর আগের অপরিকল্পিত খনন কার্যক্রমে টাকার অপচয় হলেও প্রাণ ফেরেনি নদীতে। উল্টো এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, শুষ্ক মৌসুমে ধু ধু বালুচর, বর্ষায় জলাবদ্ধতায় নিম্নাঞ্চলের মানুষের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ও মনুমুখ ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত বরাক নদী। কুশিয়ারা তীরের বাহাদুরপুর নামক স্থানে বরাক নদী নাম ধারণ করে। নদীর একটি শাখা হবিগঞ্জের ফুটারচর নামক স্থানে ফের দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। একটি শাখা বিজনা নদীতে পতিত হয়েছে। অপরটি শাখা বরাক নাম ধারণ করে নবীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে ফের কুশিয়ারা নদীতে পতিত হয়েছে।
কালের পরিক্রমায় বরাক নদীর স্রোতধারা সচল রাখার লক্ষ্যে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সদর উপজেলা অংশের ৮ কিলোমিটার অংশ খননের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সালে নদীর দুই তীরের বৃহৎ অংশ ছেড়ে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে চাঁনপুর পর্যন্ত বরাক নদী খনন করা হয়। বাহাদুরপুরের উৎপত্তিস্থল পলিস্তর জমে অনেক উঁচু থাকায় কুশিয়ারা থেকে বর্ষা মৌসুমেই স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবেশ করতে পারে না। শুষ্ক মৌসুমে সংযোগস্থল খা খা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে প্রয়োজনীয় অনেকটা অংশ ছেড়ে দিয়ে নদীর ৩০-৪০ ফুট করে খননের আওতায় নেওয়া হয়েছে। ফলে ছেড়ে দেওয়া অংশে স্থানীয়দের অনেকে দখল করে ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন বরাক তীরের নসিরপুর গ্রামের নূরুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, ২০-২৫ বছর আগেও এ নদী দিয়ে তীব্র বেগে পানি প্রবাহিত হতো। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত হাওর আর বিলে। নদীর বেহাল দশায় জমিতে পলিবাহিত পানি ওঠে না এখন, আগের মতো ফসল উৎপাদনও হয় না।
খলিলপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মুজাহিদ আলী জানান, পুরো বরাক নদী খনন না করায় বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি হলেই চাঁনপুর, কাটারাই, আলাপুর, মুকিমপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। একসঙ্গে ২০০ থেকে ৩০০ একর জমিতে একেক মৌসুমে কয়েকবার করে চারা লাগাতে হয়। তিনি আরও জানান, এ নদীর নিম্নাঞ্চল খনন প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হলে এই অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত হতো।
স্থানীয় খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী জানান, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে বরাকের নিম্নাঞ্চল খননের জন্য প্রকল্প গ্রহণে শিগগিরই পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি আবেদন করা হবে। তিনি জানান, এরই মধ্যে সদর উপজেলা ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে হয়েছে। এর আগে পানি নিষ্কাশনে ওই এলাকার ফুটারচর গ্রামে নির্মিত বাঁধ কেটে দেওয়ার সুপারিশ করলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ ইবনে ওয়ালিদ সমকালকে জানান, নদী ভরাট করে অনেক স্থানে রাস্তা, কালভার্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু জায়গা খনন করা যায়নি। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলাধীন এলাকার বরাক নদীর অংশ খনন করা হলে পানি স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল বর ক ন ত হয় ছ খনন ক
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রবিবার (৯ মার্চ) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না। মাগুরার ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের সবাইকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করবে সরকার। একইভাবে যদি দেশের কোথাও নারীর প্রতি কোনো সহিংসতা বা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে, তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
আরো পড়ুন:
স্বরাষ্ট্র সচিব
কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা দৌড়াচ্ছে, ভারী বুট পরা পুলিশ তার পিছনে দৌড়াতে পারে না
এবার জিনিসপত্রের দাম গতবারের চেয়ে কম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
“ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ পর্যন্ত নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্নপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি।”
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করবে। এতে যারা তাদের বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।”
এখন কোনো নারী নিরাপত্তাহীন বোধ করলে পুলিশের কাছে গিয়ে সে কি নিরাপত্তা পাবে-এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “পুলিশের কাছে গেলে যদি কেউ প্রতিকার না পায়। সেটা আমার নজরে আনবেন, আমি ওই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
কোনভাবেই কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সদস্যরা বায়তুল মোকাররম এলাকায় একটি মিছিল করে। পরে পুলিশের বাধার মুখে সেটি পণ্ড হয়ে যায় ও তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সরকার এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।”
সংঘবদ্ধ মব দুষ্কৃতিকারীদের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় এক এসআইকে কিছু স্থানীয় মাদকসেবী, দুষ্কৃতিকারী ও ছিনতাইকারীরা মব সৃষ্টি করে মারধর করেছে, যাদেরকে পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর যেকোনো আক্রমণ বরদাস্ত করা হবে না, কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে।”
রমজানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে তিনি বলেন, “রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রায় শতাধিক তল্লাশি চৌকি বা চেকপোস্ট বসানো হয়েছে ও অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথবাহিনী টার্গেট এলাকাসমূহে জোরদার অপারেশন পরিচালনা করছে। এসব চেকপোস্ট এবং টহল দলের রাত্রিকালীন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়মিত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “রমজানে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই প্রতিরোধ এবং বিভিন্ন বিপণী বিতানে যাতায়াতকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।”
“রমজান ও আসন্ন ঈদে সাধারণ জনগণের বাড়ি যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে মহাসড়কসমূহে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,” বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “যেসব অপরাধের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যাবে, সেগুলো সংগ্রহ করে ফ্যাক্ট চেকিং করে অপরাধীদের শনাক্তকরণ করা হবে এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ