ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও বাংলাদেশে সহিংসতা, নৈরাজ্য এবং দায়মুক্তির ঘটনা ঘটছে। বিভিন্নভাবে নারীর ওপর সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। নারীদের পোশাকের পছন্দকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটছে। নারী অধিকার ও লিঙ্গসমতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন অধিকার। তাদের ভাষ্যমতে, ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য নিরাপদ ও আরও ন্যায্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে একটি সংশোধিত এবং শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা প্রয়োজন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে ঐতিহাসিক আন্দোলনের সময় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ব্যাপক সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন। সে সময় নারী আন্দোলনকারীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকের হামলা চালিয়েছিল বলে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদন উঠে এসেছে।

অধিকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের সময় অসংখ্য নারী যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সে সময় ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচারব্যবস্থার অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণের কারণে ন্যায়বিচার বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল।

গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তবু বিভিন্নভাবে নারীর ওপর সহিংসতা ও যৌন নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। নারীদের পোশাকের পছন্দকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণ, যৌতুক-সংক্রান্ত সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও পারিবারিক নির্যাতনের মতো অপরাধ হচ্ছে। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায়ও কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও বাংলাদেশে সহিংসতা, নৈরাজ্য এবং দায়মুক্তির ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে নারী অধিকার ও লিঙ্গসমতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য নিরাপদ ও আরও ন্যায্য একটি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শক্তিশালী এবং সংস্কার করা একটি বিচারব্যবস্থা প্রয়োজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ন র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালাতে পারে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে ভারত, এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ পাকিস্তানের হাতে আছে। খবর আল জাজিরার।

আজ বুধবার ভোরে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে আতাউল্লাহ তারার অভিযোগ করে বলেছেন, “ভারত গত সপ্তাহের পহেলগামে হামলাকে ‘মিথ্যা অজুহাত হিসেবে’ ব্যবহার করে পাকিস্তানে সম্ভাব্য আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করছে।”

মন্ত্রী তার দাবির সমর্থনে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করেননি এবং ভারত সরকার তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।

আরো পড়ুন:

‘আমি যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি, সে দেখতে চাকরানীর মতো’

পহেলগাম হামলা: প্রতিশোধ নিতে সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন মোদি

তারার ‘এক্স’ পোস্টে বলেছেন, “যেকোনো আগ্রাসনের কঠোর জবাব দেওয়া হবে। এই অঞ্চলে যেকোনো গুরুতর পরিণতির জন্য ভারত সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকবে।”

এর আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ আসিফও রয়টার্সকে বলেছিলেন, পাকিস্তানে ভারতের হামলা ‘আসন্ন’ ইসলামাবাদ অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

আসিফ বলেন, “ইসলামাবাদ উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। তবে, আমাদের অস্তিত্বের প্রতি সরাাসরি হুমকি সৃষ্টি হলে আমরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করব।”

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগ্রামে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পাকিস্তান পরোক্ষাভাবে জড়িত থাকার কথা ভারত বলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।

দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এটি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হামলাকারীদের কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি ছায়া সংগঠন হিসেবে ধারণা করা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এক বিবৃতিতে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

কিন্তু ইসলামাবাদ ঘটনার সঙ্গে কোনো ভূমিকা অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

পহেলগ্রামে হামলার ঘটনার পর, প্রতিবেশী দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ভিসা বাতিল এবং ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য পাকিস্তানি আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত ঘোষণা করেছে।

এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, তারা নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৭৪০ কিলোমিটার (৪৬০ মাইল) বাস্তব সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর গত কয়েকদিন ধরে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটছে। উত্তেজনা কমানোর জন্য দুই পক্ষকে আন্তর্জাতিকভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশকে একটি ‘দায়িত্বশীল সমাধান’ এর দিকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা উভয় পক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি এবং ... তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ না করার জন্য বলছি।”

মুখপাত্র আরো বলেন, “রুবিও মঙ্গলবার বা বুধবার ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে কথা বলবেন এবং অন্যান্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরও একই কথা বলতে উৎসাহিত করবেন।”

জাতিসংঘ বলেছে, মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সাথে কথা বলেছেন এবং ‘এমন সংঘর্ষ এড়াতে প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন যার পরিণতি দুঃখজনক হতে পারে’।

 

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ