ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পরও সহিংসতা ও দায়মুক্তির ঘটনা ঘটছে
Published: 8th, March 2025 GMT
ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও বাংলাদেশে সহিংসতা, নৈরাজ্য এবং দায়মুক্তির ঘটনা ঘটছে। বিভিন্নভাবে নারীর ওপর সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। নারীদের পোশাকের পছন্দকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটছে। নারী অধিকার ও লিঙ্গসমতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন অধিকার। তাদের ভাষ্যমতে, ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য নিরাপদ ও আরও ন্যায্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে একটি সংশোধিত এবং শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা প্রয়োজন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে ঐতিহাসিক আন্দোলনের সময় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ব্যাপক সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন। সে সময় নারী আন্দোলনকারীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকের হামলা চালিয়েছিল বলে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদন উঠে এসেছে।
অধিকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের সময় অসংখ্য নারী যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সে সময় ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচারব্যবস্থার অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণের কারণে ন্যায়বিচার বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল।
গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তবু বিভিন্নভাবে নারীর ওপর সহিংসতা ও যৌন নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। নারীদের পোশাকের পছন্দকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণ, যৌতুক-সংক্রান্ত সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও পারিবারিক নির্যাতনের মতো অপরাধ হচ্ছে। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায়ও কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও বাংলাদেশে সহিংসতা, নৈরাজ্য এবং দায়মুক্তির ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে নারী অধিকার ও লিঙ্গসমতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য নিরাপদ ও আরও ন্যায্য একটি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শক্তিশালী এবং সংস্কার করা একটি বিচারব্যবস্থা প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচনায় রাজি হিজবুল্লাহ
ইসরায়েল দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে এবং আকাশপথে হামলা বন্ধ করলে অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে লেবাননের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হিজবুল্লাহ। সশস্ত্র সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ এক নেতা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে তিনি সংগঠনটির এ অবস্থানের কথা জানান।
মাত্র দুই বছর আগে যখন হিজবুল্লাহ নিজেদের ক্ষমতার চূড়ায় অবস্থান করছিল, তখন সংগঠনটিকে নিরস্ত্র করা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনাই ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধ ঘিরে বিধ্বংসী এক সংঘাতে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে ইসরায়েল রীতিমতো ধসিয়ে দেয়। এতে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার এ আলোচনা সেই পরিবর্তনই তুলে ধরছে।
গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন। ওই সময় তিনি অস্ত্রের ওপর রাষ্ট্রের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হিজবুল্লাহর হাতে থাকা অস্ত্রের বিষয়ে সংগঠনটির সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা পোষণ করেন। লেবাননের তিনটি রাজনৈতিক সূত্র এমনটি জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ ২০২৪ সালের লড়াইয়ে ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা এবং হাজারো যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। তাঁদের রকেটের মজুতের বেশির ভাগই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হলে আরও চাপে পড়ে হিজবুল্লাহ। ইরান থেকে অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে হিজবুল্লাহর ওই নেতা বলেন, জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলের প্রেক্ষাপটে অস্ত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত সংগঠনটি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের ওপর।
হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘পাঁচটি অবস্থান থেকে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করলে এবং লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করলে নিজেদের অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত হিজবুল্লাহ।’
অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা নিয়ে হিজবুল্লাহর অবস্থান এর আগে প্রকাশ্যে আসেনি। রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় নাম প্রকাশ করতে চায়নি সূত্রগুলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি হিজবুল্লাহর গণমাধ্যম দপ্তর। প্রেসিডেন্টের দপ্তরও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
যুদ্ধের সময় দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে সেখান থেকে বেশির ভাগ সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে দেশটি জানায়, পাঁচটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নেওয়া সেনারা সেখানে অবস্থান করবেন।
নভেম্বরে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও হিজবুল্লাহর অবস্থানে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ঠিক একই সময়ে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার দাবি জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় চাপে পড়েছে সংগঠনটি। হিজবুল্লাহকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত সবচেয়ে শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী মনে করা হয়।
গত সোমবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘাত এড়াতে অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে প্রস্তুত আছে বলে প্রথমবারের মতো জানিয়েছে ইরান-সমর্থিত কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করল হুতিরাআল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় আল-জাওফ প্রদেশে যুক্তরাষ্ট্রের একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে হুতিরা। হুতি-সমর্থিত আল মাসিরাহ টিভি চ্যানেল এ কথা জানিয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এ ধরনের তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে খবরে বলা হয়।
অত্যাধুনিক এই ড্রোন ১৫ হাজার ২৪০ মিটার উঁচুতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে পারে। ইয়েমেনে বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ড্রোন ব্যবহার করে আসছে।
গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি রিপার ড্রোন হামলা চালাতেও সক্ষম।