কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয়গ্রহণকারী কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা খাদ্য সংকটের তীব্র ঝুঁকিতে পড়িতে যাইতেছে বলিয়া শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদনে যেই আশঙ্কা প্রকাশিত হইয়াছে উহা সংগত। কেবল আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য নহে, খোদ বাংলাদেশের জন্যও উহা উদ্বেগজনক হইতে বাধ্য। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়কে এক পত্রের মাধ্যমে জানাইয়াছে, রোহিঙ্গাদের জন্য সংস্থাটির খাদ্যসহায়তা এপ্রিল হইতে অর্ধেকেরও নিম্নে নামিয়া আসিবে। ইহার ফল হিসাবে রোহিঙ্গাপিছু ডব্লিউএফপির মাসিক বরাদ্দ এপ্রিল হইতে সাড়ে ১২ ডলারের পরিবর্তে ৬ ডলার হইবে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার যথার্থই বলিয়াছেন, ডব্লিউএফপির বাজেট কাটছাঁটের ফলস্বরূপ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হইতে পারে। কারণ দিনে ২৪ টাকায় একজন মানুষের পক্ষে সুষম খাদ্য গ্রহণ দূরের কথা, ক্ষুধা নিবৃত্তিও সম্ভবপর নহে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংকটের পাশাপাশি শিবিরসমূহে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির শঙ্কা রহিয়াছে।
আমরা জানি, বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লক্ষের অধিক নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রহিয়াছেন। অনিবন্ধিত রহিয়াছেন আরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। এখনও নানা কৌশলে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করিতেছেন। রোহিঙ্গাশিবিরে নতুন জন্মগ্রহণকারী শিশুদের যোগ করিলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লক্ষ ছাড়াইয়া যাইবে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার হইতে অনেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়াইয়া পড়িয়াছেন বলিয়া জানা যায়। তাহাদের অনেকে পরিচয় গোপন করিয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট অবধি জোগাড় করিতেছেন। অন্যদিকে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরসমূহ ঘিরিয়া প্রায়ই রক্তপাত ও প্রাণহানি ঘটিতেছে। মাদক কারবার, অস্ত্র চোরাচালান, অপহরণ ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ লইয়া বিরোধে জড়াইতেছে নানা গোষ্ঠী। দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরসমূহে ১১টি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয়। ইহারা ডাকাতি, অপহরণ বাণিজ্যসহ নানাবিধ অপতৎপরতায় লিপ্ত, যাহার শিকার বাংলাদেশি নাগরিকও হইতেছেন। বৃহৎ শক্তিসমূহের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করিবার ঝুঁকি সম্পর্কেও সকলেই অবহিত। এই সকল কিছু মিলাইয়া দিন যতই যাইতেছে, ততই ভারী হইতেছে রোহিঙ্গা বোঝা। ‘গোদের উপর বিষফোড়া’ হইয়া উঠিতেছে বাজেট সংকট।
ইহা সত্য, রোহিঙ্গা বাবদ ব্যয়ের সংকুলান লইয়া বাংলাদেশ সেই ২০১৭ সাল হইতেই হিমশিম খাইতেছে, যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন হইতে বাঁচিতে বাংলাদেশে এক ধাক্কায় কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেন। অদ্যাবধি কোনো বৎসরই আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুসারে সাহায্য মিলে নাই। এতদসত্ত্বেও ডব্লিউএফপির সহায়তা দিয়া কায়ক্লেশে হইলেও অন্তত রোহিঙ্গাদের খাদ্যচাহিদা পূরণ করা হইত, এপ্রিল হইতে যাহা সম্ভব হইবে না। আমরা জানি, ডব্লিউএফপির যেই বরাদ্দ, তাহার প্রায় ৮০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র দিয়া থাকে। সম্প্রতি দেশটিতে সরকার পরিবর্তনের সহিত আন্তর্জাতিক সহায়তা নীতিও পরিবর্তন হইবার কারণে ডব্লিউএফপিকে উহার বরাদ্দ কাটছাঁট করিতে হইতেছে। কিন্তু ক্ষুধা তো আর এই সকল হিসাবনিকাশ শুনিবে না। তাই বিকল্প ব্যবস্থার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে।
আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমত রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করিবার কার্যক্রম জোরদার করিতে হইবে। পাশাপাশি যৌথ সাড়াদান কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেই সকল সদস্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতেছে, তাহাদের প্রতি সাহায্য বৃদ্ধির জন্য নূতন করিয়া আহ্বান রাখিতে হইবে। আগামী ১৩ মার্চ চার দিবসের সফরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ আসিতেছেন। তিনি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাইবেন এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনিবেন বলিয়া আমরা জানি। রোহিঙ্গাদের খাদ্যের সংস্থানসহ অন্যান্য বিষয়ে বিরাজমান সমস্যা সম্পর্কে তাহাকে বুঝাইতে পারিলেও কিছু সমাধান মিলিতে পারে বৈকি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশী শিক্ষকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেলোশিপ টিইএ, করুন আবেদন (অ্যাপ্রুভ)
২০২৫–২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ফুলব্রাইট টিচিং এক্সিলেন্স অ্যান্ড অ্যাচিভমেন্ট (টিএই) প্রোগ্রামে ফেলোশিপের জন্য আবেদন আহ্বান করেছে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। এই ফেলোশিপ মাধ্যমিক স্কুলশিক্ষকদের জন্য ছয় সপ্তাহের একটি বিনিময় কার্যক্রম। ২০২৬ সালের জানুয়ারি অথবা সেপ্টেম্বরে এ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষকেরা এই ফেলোশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন আগামী ১২ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ব্যুরো অব এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্সের পৃষ্ঠপোষকতায় ফুলব্রাইট টিএই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আইআরইএক্স। এ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকেরা তাঁদের শিক্ষাবিষয়ে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, শিক্ষাদানের দক্ষতা জোরদার করা এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নিজেদের জ্ঞান বাড়ানোর অনন্য সুযোগ পাবেন। ২০২৬ সালের বসন্ত অথবা শরৎ মৌসুমে বাংলাদেশের শিক্ষকেরা যুক্তরাষ্ট্রে জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, শিক্ষাদানের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রোগ্রামে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে যোগ দেবেন।
আরও পড়ুনভারতের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ, মাসে ২৪৫০০ রুপি, আবেদন যেভাবে০৩ এপ্রিল ২০২৫প্রোগ্রামটির কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে অংশগ্রহণকারীদের নিজ দেশের পরিবেশে কোর্সের কাজ, শিক্ষাদানের পদ্ধতি, পাঠ পরিকল্পনা, শিক্ষাদানের কৌশল, সেই সঙ্গে ইন্টারনেট, ওয়ার্ড প্রসেসিং ও শিক্ষাদানের সরঞ্জাম হিসেবে কম্পিউটারের ব্যবহারবিষয়ক নিবিড় প্রশিক্ষণ। ছয় সপ্তাহের এই কার্যক্রমের আওতায় অংশগ্রহণকারীদের আমেরিকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আরও রয়েছে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই সপ্তাহের শিক্ষানবিশির সুযোগ। তা ছাড়া, মহামারির অবস্থা সাপেক্ষে কার্যক্রমের পুরো সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক স্থানগুলোয় ভ্রমণের সুযোগ ও শিক্ষাবিষয়ক সহায়তা প্রদান করা হবে শিক্ষকদের।
ফেলোশিপের আর্থিক সুবিধা—
*ফেলোশিপের আওতায় আর্থিক সুবিধাদির মধ্যে রয়েছে জে-১ ভিসার জন্য সহায়তা,
*যাত্রা শুরুর আগে ঢাকায় পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠান,
*যুক্তরাষ্ট্রের ফিরতি ও অভ্যন্তরীণ বিমান ভাড়া,
*ওয়াশিংটন ডিসিতে স্বাগতজ্ঞাপক ও পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠান,
*শিক্ষা কার্যক্রমের ফি,
*আবাসন (সাধারণত কার্যক্রমের সঙ্গীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা) ও খাবার,
*দুর্ঘটনা ও স্বাস্থ্যবিমা,
*শিক্ষানবিশি স্কুলে যাতায়াত (প্রয়োজন হলে), *বইপত্র/পেশাগত উন্নয়ন ভাতা,
*যুক্তরাষ্ট্রে ফুলব্রাইট টিইএ কার্যক্রমের আওতায় আমন্ত্রক বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে সমাপনী সেমিনার, দুই সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শিক্ষককে আতিথেয়তা দান এবং কার্যক্রমপরবর্তী বিভিন্ন অনুদানের জন্য আবেদনের সুযোগ।
আরও পড়ুনকুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা, অংশ নিয়ে ইংল্যান্ড ভ্রমণের সুযোগ ০২ এপ্রিল ২০২৫কাদের আবেদনের সুযোগ—
আবেদনকারীকে নিম্নোক্ত শর্তাবলি পূরণ করতে হবে।
*সমাজবিদ্যা, নাগরিক শিক্ষা, গণিত, বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঁচ বছর বা ততোধিক সময় ধরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
* শিক্ষকদের অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
* বাংলাদেশি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।
* নেতৃত্বদানের দৃষ্টান্তমূলক যোগ্যতা থাকতে হবে।
* এই ফেলোশিপ কার্যক্রম শেষে ন্যূনতম পাঁচ বছর শিক্ষকতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করতে হবে।
* ইংরেজিতে লেখা ও কথা বলায় পারদর্শী হতে হবে।
* যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে কাজকর্ম চালানোর জন্য ইংরেজি ভাষায় পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও পেশাগত ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও কার্যকরভাবে বিভিন্ন ধারণা প্রকাশে সক্ষম হতে হবে।
*ওয়ার্ড প্রসেসিং, সাধারণ ফাইল ব্যবস্থাপনা ও মাইক্রোসফট অফিস বিষয়ে পরিচিতিসহ কম্পিউটার চালনার সাধারণ দক্ষতা থাকতে হবে।
* অনলাইন আবেদন পেশ করতে হবে।
আরও পড়ুনহার্ভার্ডে বৃত্তি নিয়ে এমবিএ’র সুযোগ বাংলাদেশিদের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ছবি: মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া