সন্দেহ নেই, বৈঠকটি নেহাত কারিগরি। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম যদিও ‘যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক’ বলছে, বাস্তবে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকটি আরও কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাঠামো। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির পর নদীটির পানিবণ্টন প্রক্রিয়া দেখভালের জন্য ১৯৭২ সালে গঠিত যৌথ নদী কমিশনের অধীনে গঠিত হয়েছিল ‘যৌথ কমিটি’। এর প্রথম বৈঠক হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায়। এই কমিটিরই ৮৬তম বৈঠক এ বছর ৪ থেকে ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হলো কলকাতায়।

রীতি অনুযায়ী, যৌথ কমিটির এজেন্ডাভুক্ত আলোচনায় ঐকমত্যের পর সেটি যাবে যৌথ কারিগরি কমিটিতে, সেখান থেকে যৌথ নদী কমিশনে। যৌথ নদী কমিশনে চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তাব রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ও স্বাক্ষরিত হবে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমিটির বৈঠকটির পর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ ফুরাতে যাওয়া গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন সম্ভাবনা কতদূর অগ্রসর হলো? গত বছর ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের আগেই, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের শুরুতেই আমি লিখেছিলাম– ‘নদী বিষয়ে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন’। আগ্রহীরা বিস্তারিত পড়তে পারেন গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি সমকালে প্রকাশিত নিবন্ধ– ‘গঙ্গা চুক্তির নবায়ন ২০২৬ সালের মধ্যে সম্ভব?’
আমরা দেখবো, শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নদীবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। সেই তুলনায় ‘নিষ্পন্ন ইস্যু’ গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন ইস্যু ততটা মনোযোগ পায়নি। 

গত এক দশকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্তত ছয়বার এমন আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছিলেন, যেগুলোর শেষে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করতে হয়েছে। এর মধ্যে তিনবার শেখ হাসিনা দিল্লি গেছেন এবং দু’বার নরেন্দ্র মোদি ঢাকা এসেছেন। করোনাকালের একটি ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিক আলোচনায় এসেছে অনেক পরে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর প্রকাশিত ৫৩ দফা যৌথ বিবৃতির ২০ নম্বর দফায় বলা হয়, ২০১৯ সালের আগস্টে ঢাকায় দুই দেশের পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ে আলোচনার পর ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ গৃহীত পানির ‘অপটিমাম ইউটিলাইজেশন’ বা সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে প্রস্তাবিত গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠিত হওয়ায় দুই নেতা স্বস্তি প্রকাশ করেন। 
সর্বশেষ, ২০২৪ সালের ২১ থেকে ২২ জুন শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে যৌথ বিবৃতির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল– ‘১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা শুরুর জন্য যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনকে আমরা স্বাগত জানাই।’ 

বলাবাহুল্য, গত এক বছরে গঙ্গায় আরও অনেক কিউসেক পানি গড়িয়েছে। কেবল গঙ্গা বা তিস্তার পানিবণ্টন নয়; বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের আরও অনেক বিষয়ে পুরোনো হিসাব-নিকাশ পাল্টে গিয়েছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে মাত্রায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে যৌথ কমিটির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়াই ছিল বড় ‘সাফল্য’।
গঙ্গার পানিবণ্টন-সংক্রান্ত যৌথ কমিটি সাধারণত নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল কলকাতায় গেলে প্রথমে ফারাক্কা ব্যারাজের ভাটিতে গিয়ে প্রবাহ মেপে দেখে যে, চুক্তি অনুযায়ী পানি গড়াচ্ছে কিনা। তারপর আলোচনার জন্য বৈঠকে বসে। ভারতীয় প্রতিনিধি দল ঢাকায় হলে প্রথমে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গিয়ে প্রবাহ মেপে দেখে যে, চুক্তি অনুযায়ী পানি গড়াচ্ছে কিনা। তারপর আলোচনার জন্য বৈঠকে বসে। এবার সেই রুটিন কাজের ব্যত্যয় না ঘটলেও গত বছর ১৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই কমিটির ৮৫তম বৈঠকই হয়েছিল কেবল। খুব সম্ভবত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিটির সদস্যরা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রবাহ মাপতে যাননি।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনাতেই সম্ভবত এবারের ‘রুটিন’ বৈঠকটিও উভয় দেশের সংবাদমাধ্যমে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। নেহাত ‘কারিগরি’ বৈঠকটির ‘রাজনৈতিক’ তাৎপর্যই বড় হয়ে উঠেছে। যেমন, গত ৬ মার্চ ভারতীয় চ্যানেল এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বৈঠকটি ‘হাই স্টেক মিটিং’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি বিদ্যমান চুক্তির চেয়ে বেশি; কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতোমধ্যে চুক্তিটি নিয়ে তার অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ ‘বেশি পানি পাওয়ার কারণে’ কলকাতা বন্দর নাব্য সংকটে পড়ছে। আবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রগুলো এনডিটিভিকে বলেছে, তারা নিশ্চয়ই গঙ্গা চুক্তির নবায়নে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত; কিন্তু একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও দাবির দিকে নজর রাখতে হবে।

সংবাদমাধ্যম যাই বলুক, ভারতীয় পক্ষ যে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নে সহজে রাজি হতে যাচ্ছে না, সেটি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যেও স্পষ্ট। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জওসোয়াল বলেছেন– ‘বৈঠকে দুই পক্ষ গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পর্কিত কারিগরি বিষয় আলোচনা করেছেন। এ ধরনের বৈঠক রুটিনমাফিক বছরে তিনবার হয়ে থাকে।’
অবশ্য বৈঠকের সূত্রগুলো ঢাকার ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের দিল্লি প্রতিনিধিকে বলেছে যে, দুই পক্ষ আগামী তিন মাসের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন বিষয়ে একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করেছে (৭ মার্চ, ২০২৫)।

কথা হচ্ছে, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ কী ‘প্যাঁচ’ কষতে পারে? বলতে পারে, ১৯৯৬ সালের থেকে গঙ্গার প্রবাহ যা ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন তার থেকে কমে গেছে; আগের পরিমাণে পানি মিলবে না। বস্তুত ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ গত বছরই বলেছিলেন, ‘কেবল অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ নয়, বরং সেগুলোর পানি ঘাটতি বণ্টনের মধ্যেও সমাধান খুঁজে পেতে হবে’ (ভিআইএফইন্ডিয়া ডট ওআরজি, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪)।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দিক থেকেও এসব প্রশ্ন মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি রাখতে হবে বৈকি। বলতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন যদি ইস্যু হয়, তাহলে উত্তরাখণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পর্যন্ত গোটা গঙ্গার পানি পরিমাপ করতে হবে। বিদ্যমান চুক্তির মতো ফারাক্কা পয়েন্টে প্রাপ্ত প্রবাহের ভিত্তিতে ভাগাভাগি চলবে না।
গঙ্গায় আমরা কেবল পশ্চিমবঙ্গে ফারাক্কা ব্যারাজের কথা জানি। কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চে ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক ‘ভূমিধস’ প্রতিবেদনে আমাদের বন্ধু ও সহযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিক দেখিয়েছিলেন, আরও উজানে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে অন্তত ২৯টি ‘ছোট’ ড্যাম বা ব্যারাজ রয়েছে। ফারাক্কার পানি প্রত্যাহার ক্ষমতা যেখানে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার কিউসেক, এগুলোর সম্মিলিত পানি প্রত্যাহার ক্ষমতা সেখানে অন্তত ২ লাখ ৯২ হাজার কিউসেক। তার মানে, গঙ্গার ছোট ছোট ড্যাম ও ব্যারাজগুলো আলোচনার বাইরে থেকেই ফারাক্কার তিন গুণের বেশি পানি প্রত্যাহার করছে! 
বাংলাদেশকে এই প্রশ্নেও শক্ত অবস্থান নিতে হবে যে, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হতে হবে স্থায়ী, বিদ্যমানটির মতো ‘মেয়াদি’ নয়। কারণ ‘ট্রিটি’ কখনও মেয়াদি হয় না। দূরে যেতে হবে না; সিন্ধু নদ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিরই নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। তাহলে গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ থাকবে কেন?

এখন, ভাটির দেশের এসব শর্ত উজানের দেশ যদি না মানে? একটি সমাধান হতে পারে, আন্তর্জাতিক রক্ষাকবচ হিসেবে নদীবিষয়ক জাতিসংঘ সনদগুলো স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর। বাংলাদেশ চাইলেই ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের আগেই সেটি করতে পারে। আগ্রহীরা পড়ুন– চীন-ভারতের ‘পানি অস্ত্র’ এবং বাংলাদেশের করণীয় (সমকাল, ২০ অক্টোবর ২০২৪)।
আরেকটি সমাধান হতে পারত গঙ্গা ব্যারাজ। এ বিষয়ে ২০০৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ২০১৩ সালে সমীক্ষা শেষ হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের এপ্রিলে কার্যত নাকচ হয়ে যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে আবারও ভাবা যেতে পারে বৈকি।

শেখ রোকন: লেখক ও নদী গবেষক
skrokon@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ১৯৯৬ স ল র ড স ম বর অন ষ ঠ ত র জন ত ক য থ কম ট গত বছর প রব হ য থ নদ কম ট র হয় ছ ল র জন য কলক ত ব ঠকট

এছাড়াও পড়ুন:

খাদ্য মূল্যস্ফীতির ‘লাল’ তালিকায় বাংলাদেশ

খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিতে ‘লাল’ শ্রেণিতে আছে বাংলাদেশ। প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই শ্রেণিতে অবস্থান করছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই চিত্র ওঠে এসেছে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তার হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। প্রতি ছয় মাস পরপর এই চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। সেই অনুসারে, প্রায় দুই বছর ধরেই বাংলাদেশ লাল তালিকায় অর্থাৎ অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।

বিশ্বব্যাংক ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা–বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ লাল শ্রেণিতে আছে। দেশগুলো হলো কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, ভারত, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি, তা বোঝাতে বিভিন্ন দেশকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে ‘বেগুনি’ শ্রেণিতে; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি, তাদের ‘লাল’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘হলুদ’ ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘সবুজ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।

কেন বাংলাদেশ লাল শ্রেণিতে

প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। তবে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। টানা ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের বেশি।

১০ মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামে। মার্চেও তা এক অঙ্কের ঘরেই ছিল, যা একটু স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত বছরের মার্চের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আর এক অঙ্কের ঘরে নামেনি। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েননি আগে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি আপনার খাবার কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়। পরের এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খাবার কিনতে লাগল ১১০ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা। এর মানে, বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের খাবার খরচ গড়ে এক-দশমাংশ বেড়েছে।

মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। ধরুন, আপনার প্রতি মাসে আয়ের পুরোটাই সংসার চালাতে খরচ হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে এবং সে অনুযায়ী আপনার আয় না বাড়লে আপনাকে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে কিংবা খাবার, কাপড়–চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের মানুষকে গড় আয়ের অর্ধেকের মতো খরচ করতে হয় খাবার কিনতে। গরিব মানুষের খাবারের পেছনে ব্যয় আরও বেশি। গরিব মানুষেরা তাঁদের আয়ের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচ করেন খাবার কেনার পেছনে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মুদ্রানীতির পাশাপাশি রাজস্ব নীতিগুলো এমন করতে হবে যেন মূল্যস্ফীতি কমে। এ ছাড়া বাজার তদারকিও জোরদার করতে হবে।

অন্য শ্রেণিতে কোন দেশ

উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের তালিকায় টানা এক বছর ধরে সবচেয়ে খারাপ শ্রেণি বেগুনিতে আছে ছয়টি দেশ। এই দেশগুলো হলো মালাওয়ি, দক্ষিণ সুদান, হাইতি, মিয়ানমার, আর্জেন্টিনা ও তুরস্ক।

খাবারের দাম নিয়ে সবচেয়ে ভালো আছে আটটি দেশ। সবুজ শ্রেণিভুক্ত দেশগুলো হলো সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরব, ম্যাকাও, চীন, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড ও বেনিন।

তালিকায় থাকা বাকি দেশগুলো গত এক বছরে কখনো লাল, কখনো বেগুনি, কখনো-বা হলুদ বা সবুজ তালিকায় রয়েছে। কেউ নিজেদের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির উন্নতি করেছে, কারও অবনতি হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • সিটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা চুক্তি বাতিলের দাবি বিজেপি নেতার
  • বাংলাদেশকেও পানি দেওয়া বন্ধের দাবি বিজেপির
  • লভ্যাংশের টাকা পাঠিয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স
  • হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • খাদ্য মূল্যস্ফীতির ‘লাল’ তালিকায় বাংলাদেশ