স্টারলিংকের সঙ্গে বাংলাদেশি কোম্পানি যৌথভাবে কাজ করবে
Published: 8th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে গ্রাউন্ড আর্থস্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দেশি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী স্টারলিংকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। এর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে। এরই মধ্যে স্টারলিংকের সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠান যৌথ অংশীদারত্বে কাজ করার জন্য চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই অংশীদারত্বের আওতায় মহাকাশে স্পেস বরাদ্দ, নির্মাণসহায়তা এবং চলমান অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
স্টারলিংক প্রতিনিধিদলের সফরের ফলে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আগ্রহী ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছে। কিছু ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারে সহায়তা দেবে, আবার কিছু ক্ষেত্রে স্টারলিংক হাইটেক পার্কের জমি ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, লোকেশন নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নসংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা চলছে।
ফয়েজ আহমদ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, স্টারলিংক বাংলাদেশের শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করবে, যা লোডশেডিং বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাধা থেকে মুক্ত থাকবে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি নিরবচ্ছিন্ন এবং উচ্চমানের সেবা নিশ্চিত করবে। যেহেতু বাংলাদেশে টেলিকম-গ্রেড ফাইবার নেটওয়ার্কের কভারেজ সীমিত এবং অনেক দূরবর্তী এলাকায় এখনো লোডশেডিং সমস্যা রয়েছে, স্টারলিংক আমাদের উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার, এনজিও এবং এসএমই ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং ডিজিটাল অর্থনৈতিক উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করবে।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘আমরা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের সঙ্গে যৌক্তিক একটি মডেল বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
আরও পড়ুনইন্টারনেট শাটডাউন চিরতরে বন্ধে স্টারলিংককে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে: প্রেস সচিব২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনবাংলাদেশে স্টারলিংক আনার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও ইলন মাস্কের মধ্যে আলোচনা১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে মার্কিন শীর্ষ ব্যবসায়ী ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং দেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট সেবা চালুর আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে ফয়েজ আহমেদ জানান, বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে তিনি দেশের তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাবেন, যাঁরা এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী হবেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্কের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। আলোচনায় ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরও পড়ুনইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট কি বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের ক্ষতি করছে০৫ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনপৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কীভাবে পরিচালিত হয় ইলন মাস্কের স্টারলিংক২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দ নিয়ে আপত্তি
বিএনপির নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। এ ব্যাপারে তাঁরা বিএনপির নেতাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন।
গতকাল শনিবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের নেতারা এ অনুরোধ জানান বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
রাত আটটার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা তাঁরা বৈঠক করেন। হেফাজতে ইসলামের আগ্রহে এ বৈঠক হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠকে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বাকিরা হলেন নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী ও মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ ও অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুনির হুসাইন কাসেমী।
বিএনপির পক্ষে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
বৈঠক–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের নেতারা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অতীতের মামলা-মোকদ্দমা, সংবিধানের সংস্কারসহ সাম্প্রতিক কিছু বিষয় নিয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ওই সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ‘মৌলবাদের উত্থান’–সম্পর্কিত বিএনপির নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানান হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তাঁরা বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা করেননি বলেও উল্লেখ করেন। তাঁদের ভাষ্য, বিএনপি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলতে পারে, এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
এ পর্যায়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা মৌলবাদী বলতে জামায়াতে ইসলামীকে বুঝিয়েছেন। এ সময় হেফাজতের নেতারা বলেন, এতে শুধু জামায়াত নয়, সব ইসলামপন্থীদের আঘাত করা হচ্ছে।
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমাদ আবদুল কাদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য “মৌলবাদ” শব্দের ব্যবহার নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। ওনারা ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’
জানা গেছে, মতবিনিময়ে বিএনপির নেতারা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের সমর্থন চান। হেফাজতের নেতারা এর সঙ্গে একমত পোষণ করে। তবে তাঁরা নির্বাচনে আগে সংস্কার সম্পন্ন করা, সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দেওয়া এবং ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কথাটি বিএনপির প্রস্তাবে যুক্ত করতে অনুরোধ জানান। এ ছাড়া গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এ দাবির সঙ্গে বিএনপি একমত পোষণ করেছে। তবে কৌশলগত কারণে তারা প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বলবেন না।
বৈঠক শেষে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত মতবিনিময় হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা নিয়ে। বিগত সময়ে আমাদের লোকজনকে হত্যা করা হলো, অথচ উল্টো মামলা দিয়ে আমাদেরই জেলে নেওয়া হয়েছে। সে মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। আবার আমরা যে মামলা করেছি, সেগুলোরও কোনো দৃশ্যমান কার্যকারিতা নেই। এ ব্যাপারে বিএনপির সহযোগিতা চেয়েছি আমরা।’
সাজেদুর রহমান বলেন, তাঁরা সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দেওয়া এবং ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কথাটি যুক্ত করতে বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, একমত হেফাজতহেফাজতের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপির জোরালো দাবি, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবেন, যাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যায়। সেই দাবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একমত হয়েছে।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম ও তার অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যথাযথ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে কি না, এটা তারা (হেফাজত) চিন্তা করে দেখবেন।
হেফাজত বেঠকে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপিও এই দাবি প্রকাশ্যে করেছে। বিএনপি চায় আওয়ামী লীগকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনা হোক। এ ছাড়া আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া সব ‘মিথ্যা’ মামলার প্রত্যাহার চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম। বিএনপি তাতে একমত প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।