নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে তরুণদের প্রত্যাশা
Published: 8th, March 2025 GMT
২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান নিঃসন্দেহে একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে, যেমনটা হয়েছিল ১৯৭১ ও ১৯৯০-এ। দেশের রাজনৈতিক পরিসরে যত বড় আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে, প্রতিটিই প্রায় অভিন্ন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এর সারকথা হচ্ছে, বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা, যা অনেক ক্ষেত্রেই নিষ্পেষণ ও নিপীড়নমূলক, গোষ্ঠীতন্ত্রকে প্রশ্রয় দেয় এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। ২০২৪-এর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাও এসব পশ্চাৎপদতা ও পুরোনো ধারণা থেকে সমাজ কাঠামোকে বের করে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছে।
ছাত্রদের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ প্রত্যাশা করে এই দল এবং গণঅভ্যুত্থানের অগ্রগামী ছাত্রনেতারা তাদের দক্ষতা ও প্রজ্ঞা প্রয়োগের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সবার সামনে উন্মোচন করবে। তাদের সফলতা বৈষম্যমুক্ত এক বাংলাদেশের সূচনা করবে। আবার তাদের ব্যর্থতা ছাত্র ও যুবদের নিজেদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকেও এক অনিশ্চিত পথে ধাবিত করতে পারে। ছাত্রদের বর্তমান নেতৃত্ব বলছে, ‘এখনই সময় দেশ গড়ার’, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলাপ। এতে অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ আছে। ছাত্র ও যুবনেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুন নেতৃত্বকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তাদের অনেক কিছু যেমন ছাড়তে হবে এবং একই সঙ্গে বেশ কিছু নতুন নীতি, দক্ষতা ও প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটাতে হবে।
গত সাত মাসে দেশে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা শুরু হলেও প্রত্যাশিত রাজনৈতিক পরিবর্তন অনেকাংশেই সম্ভব হয়নি। আরও কিছু বিষয়ে জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে অনেকেই বলেন, শুধু পাত্রপাত্রীর পরিবর্তন হয়েছে। সাবেক রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় যারা নিপীড়কের ভূমিকায় ছিল, তারা ও তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর অনেকেই নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। অনেকেই নতুন এক কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন। এই কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভিন্নমত ও ভিন্ন সংস্কৃতির চর্চা অবদমিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, এই সময় নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্য দৃশ্যমান হয়েছে। বলা হচ্ছে, মব সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদ তৈরির চেষ্টা চলছে।
এই প্রেক্ষাপটে যুব ও ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক শক্তিকে আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায্যতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলোর ওপর যে কোনো আঘাত প্রতিরোধ করতে হবে। একই সঙ্গে এসব বিষয়ে নতুন সংলাপ ও বয়ান তৈরিতে তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। এই ছাত্রদের সরকার ও বর্তমান ক্ষমতা কাঠামো থেকে প্রচ্ছন্নভাবে দূরেও থাকতে হবে, যাতে সরকারের ব্যর্থতা তাদের কলুষিত করতে না পারে। নিজেদের গণমানুষের পক্ষের শক্তি হিসেবে অবস্থান দৃঢ় করার জন্য সরকারকে নৈতিক জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে না চাইলেও সরকারের ব্যর্থতা ছাত্র ও যুবদের এই রাজনৈতিক শক্তিকে গ্রাস করতে পারে।
ছাত্র-যুবদের রাজনৈতিক শক্তিকে সফল হওয়ার জন্য গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার আছে। মনে রাখতে হবে, ছাত্র-যুবার এই রাজনৈতিক প্রচেষ্টা যদি সফল না হয়, তার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ভূমিকা যতটা দায়ী হবে, তার থেকে অনেক বেশি দায়ী হবে তাদের নিজেদের কাঙ্ক্ষিত প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে না পারা, অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করা। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া যে কোনো রাজনৈতিক শক্তির প্রজ্ঞার পরিচয়। এটিও মনে রাখতে হবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কারও বয়স ও অনভিজ্ঞতা আর মুখ্য বিবেচ্য বিষয় থাকে না। মানুষ দেখতে চায় তাদের ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যে বিশ্বাস স্থাপন করা হয়েছে, সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন আছে কিনা। প্রতিফলন থাকলে জনতা তাদের মাথায় তুলে রাখবে আর আর না থাকলে ঐতিহাসিক ব্যর্থতার সত্য তাদেরও মেনে নিতে হবে। সেটিই ঐতিহাসিক পরাজয়।
গণআন্দোলনে ছাত্র ও যুবদের ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রমাণ করে তাদের বৃহত্তর অংশ নতুন রাজনৈতিক শক্তির সফলতাই চায়। এই সফলতার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হতে পারে; যে বাংলাদেশ সবার, বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর না। আবার এই রাজনৈতিক শক্তির ব্যর্থতা তাদের মধ্যে নতুন করে হতাশার জন্ম দিতে পারে। তারা বাংলাদেশকে নিয়ে আবারও আশাহত হতে পারে, যা আমাদের কারও কাছে কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।
নাজমুল আহসান: উন্নয়নকর্মী
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ য ত থ ন র জন ত ক প র জন ত ক ব র র জন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৯%, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাব: এডিবি
চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আজ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়।
প্রবৃদ্ধির এ হিসাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের আগে করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে এডিবির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট চন্দন সাপকোটা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি আরোপ হলে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় ধরনের অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকবে।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হতে পারে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে গতি থাকলেও এডিবি মনে করে, দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা, রাজনৈতিক পালাবদল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি, শিল্পে অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে।
নানা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘাতসহ বলে মনে করে এডিবি। সংস্থাটির এ দেশীয় প্রধান হোয়ে য়ুন জেওং মনে করেন, জরুরি কাঠামোগত সংস্কার করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হতে পারে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ২ শতাংশে উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, খুচরা বাজারের প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া, বাজার সম্পর্কে যথাযথ তথ্য না থাকা, সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তবে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে তা কমে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমছে এবং রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাড়ছে।