এশ্চেরেশিয়া কোলাইয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রতিরোধী রোগজীবাণুর উদ্ভব ও বিস্তার বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বাংলাদেশে বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা বিভিন্ন মাছে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের হার অনেক বেশি। অন্যদিকে প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাওয়া একই ধরনের মাছে এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের হার কিছুটা কম।
 
গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ময়মনসিংহে পরিচালিত গবেষণায় গবেষকরা ১৩০টি কই ও শিং মাছ নিয়ে কাজ করেন। এর মধ্যে ৭০টি মাছ মুক্ত জলাশয় এবং ৬০টি চাষ করা বদ্ধ জলাশয় থেকে নেওয়া। নির্বাচিত কালচার, গ্রাম-স্টেইনিং ও বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষায় ১১৬টি মাছে ই.

কোলাইয়ের উপস্থিত শনাক্ত হয়। গবেষকরা ই. কোলাই শনাক্তকরণের নির্দিষ্ট পরীক্ষা ম্যাল-বি জিন নির্দিষ্ট পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) ব্যবহার করে ৮৭টি মাছ তথা ৬৭ শতাংশ মাছে ই. কোলাইয়ের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হন। তারা দেখতে পান, চাষকৃত মাছের ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার বেশি, ৭০ শতাংশ। বিপরীতে মুক্ত জলাশয়ে পাওয়া মাছের ক্ষেত্রে এই হার ৬৪ শতাংশ। 

পরীক্ষায় দেখা যায়, চাষকৃত মাছে পাওয়া ই. কোলাইয়ের ৭০ শতাংশ বায়োফিল্ম তৈরি করেছিল, যেখানে মুক্ত জলাশয়ে পাওয়া মাছের ক্ষেত্রে এই হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। এ ছাড়া, চাষকৃত মাছের ৭ শতাংশ ই. কোলাইয়ের শক্তিশালী বায়োফিল্ম উৎপাদনকারী হিসেবে শনাক্ত হয়। 

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ পরীক্ষায় দেখা যায়, এসব মাছে পাওয়া শতভাগ ই. কোলাই অ্যাম্পিসিলিন ও সেফটাজিডিমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রবণতা দেখিয়েছে। চাষের মাছ থেকে পাওয়া ই. কোলাইয়ের প্রায় ৯৭ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রতিরোধী ছিল, যেখানে মুক্ত জলাশয়ের মাছের ক্ষেত্রে তা ছিল ৬০ শতাংশ। 

চাষের মাছ থেকে পাওয়া ই. কোলাই বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিনের সম্ভাব্য ধারক ছিল। এই গবেষণার ফল ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশের মুক্ত জলাশয়ে পাওয়া ও বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা উভয় ধরনের মাছেই বেটা-ল্যাক্টামেজ প্রতিরোধী এবং বায়োফিল্ম-উৎপাদনকারী ই. কোলাইয়ের উপস্থিতি আছে। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এগুলো জনস্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদের জন্য সম্ভাব্য হুমকি তৈরি করতে পারে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদের বিভিন্ন স্থানে বরফ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা

চাঁদের পৃষ্ঠে পানির অস্তিত্ব অনুসন্ধানে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এবার চাঁদে অবতরণকরা চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চাঁদের মেরু এলাকার বেশ কিছু স্থানে বরফ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করে। মহাকাশটিতে থাকা বিক্রম ল্যান্ডারের চেসট নামের প্রোবের মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠের ১০ সেন্টিমিটার গভীরের তাপমাত্রা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী দুর্গা প্রসাদ করণম জানিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের পৃষ্ঠে বরফ জমা হয়েছিল। গবেষণার তথ্য সেই বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে। চাঁদে বরফের অস্তিত্ব নিয়ে একটি গবেষণাপত্র কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, চন্দ্রযান-৩–এর বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের প্রান্তে প্রায় ৬৯ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে অবতরণ করে। এই অবতরণ স্থানের ছয় ডিগ্রি কোণে সূর্যের দিকে মুখ করা একটি ঢালু জায়গা রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা দিনে প্রায় ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে মাইনাস ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বিক্রম ল্যান্ডারের অবতরণ স্থানের মাত্র এক মিটার দূরে থাকা একটি সমতল পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস; অর্থাৎ সামান্য একটি ঢালের কারণে আগের স্থানের তাপমাত্রার কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।

চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সংগ্রহ করা তথ্য কাজে লাগিয়ে একটি মডেল তৈরির পাশাপাশি চাঁদের ঢালু স্থান কীভাবে তাপমাত্রা প্রভাবিত করতে পারে, তা জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। সেই মডেলের তথ্যমতে, ১৪ ডিগ্রির বেশি কোণে ঝুঁকে থাকা ঢালু স্থানটির পৃষ্ঠের কাছাকাছি বরফ জমা হওয়ার জন্য যথেষ্ট ঠান্ডা তাপমাত্রা রয়েছে। আর তাই এই ঢালু স্থানটিতে বরফ থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত, চাঁদে বরফ পাওয়া গেলে পৃথিবী থেকে চাঁদে পানি পরিবহনের খরচ ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। ফলে চাঁদে মানুষের ঘাঁটি স্থাপনের পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহ বা মহাকাশ গবেষণার কাজও সহজ হবে।
সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ