জাতীয় নারী ফুটবল দলের অয়ন্তের বাড়িতে উৎসবের আমেজ
Published: 8th, March 2025 GMT
ফাল্গুনের হিম ছড়ানো সকাল। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের গোতিথা গ্রামের পাকা রাস্তা শেষে মেঠো পথ পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই মনিলাল মাহাতোর বাড়ি। মাটির তৈরি বাড়িটিতে যেন উৎসবের আমেজ বইছে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে সুযোগ পাওয়া অয়ন্ত বালা মাহাতো এই বাড়ির সন্তান। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ শেষে বাড়িতে ফিরেছেন অয়ন্ত।
অয়ন্ত বালার মা শেফালি রানী মাহাতো মেয়ের জন্য সাধ্যের মধ্যে নানা পদের রান্নায় ব্যস্ত। বললেন, মেয়ে দুই বছর ধরে বিকেএসপিতে পড়ালেখা করছে। ছুটি হলেই বাড়িতে আসে। কিন্তু এবার বিদেশ থেকে ফেরার পর সবকিছু অন্য রকম লাগছে। অয়ন্তের বড় বোন, ভগ্নিপতি ও একমাত্র ভাই বাড়িতে এসেছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন তাঁকে দেখতে বাড়িতে আসছে।
অয়ন্তের বাবা মনিলাল মাহাতো প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মেয়ে বিদেশে খেলতে গিয়েছিল, এটাই বড় কথা। সবার কাছে আশীর্বাদ চাই, যেন মেয়ে ভালো কিছু করতে পারে।’ বড় বোন রিনা রানী মাহাতো জানান, বিদেশ থেকে বোন ফেরার পর দেখা করতে স্বামী-সন্তান নিয়ে এসেছেন। তিনি বোনের জন্য দেশবাসীর কাছে আশীর্বাদ কামনা করেন।
অয়ন্তদের বাড়িতে ভিড় করেন আশপাশের অনেকেই। স্থানীয় বকুল চন্দ্র মাহাতো বলেন, তাঁদের মেয়ে আজ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। অয়ন্তের পথ অনুসরণ করে তাঁদের ফুটবল একাডেমির অনেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। পাশের তাড়াশ উপজেলার ভাটারপাড়া গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী রাজিব চন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘অয়ন্ত বালা মাহাতোর সঙ্গে কথা বলতে ও দেখা করতে এসেছি।’
ফুটবলার অয়ন্ত বালা মাহাতো প্রথম আলোকে বলেন, তাড়াশের বিষমডাঙা গার্লস স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পান। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ। এ জন্য স্থানীয় আদিবাসী প্রমীলা ফুটবল একাডেমির সদস্য হন। প্রশিক্ষক নিহার রঞ্জন মাহাতো ও জেলার কৃতী ফুটবলার প্রয়াত ইমদাদুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মা–বাবার অনুমতি নিয়ে তাঁদের চেষ্টায় আমার আজ এখানে আসা। ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভালো কিছু করার জন্য সবার কাছে আশীর্বাদ কামনা করি।’
এর আগে সকাল আটটার দিকে সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু-কিশোরীর সঙ্গে অনুশীলনে ব্যস্ত অয়ন্ত বালা। বলেন, ‘এ মাঠেই আমার ফুটবলে হাতেখড়ি। তাই বাড়িতে এলে ছুটে আসি এ মাঠে। অন্যদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠি।’
অয়ন্ত বালা মাহাতোর উপস্থিতির কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ সবাই একটু বেশি মনোযোগী ও খুশি। ধলজান গ্রামের লক্ষ্মণ চন্দ্র মাহাতোর মেয়ে ও বিষমডাঙা গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ষা রানী মাহাতো বলে, ‘আমাদের অয়ন্ত প্রথমে বিকেএসপিতে পড়ালেখার সুযোগ পেল, এখন জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই গৌরবের। তার সঙ্গে আমরাও যেন ভালো কিছু করতে পারি, সবার আশীর্বাদ কামনা করি।’
জেলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রমীলা ক্রীড়া একাডেমির প্রশিক্ষক নিহার রঞ্জন মাহাতো প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাডেমির সদস্য অয়ন্ত বালা জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচের প্রীতি ফুটবল খেলতে গিয়েছিল। মূল একাদশে সুযোগ না পেলেও অয়ন্তকে নিয়ে আমরা গর্বিত। সুযোগ পেলে একদিন ভালো কিছু করতে পারবে।’
অয়ন্তদের নিয়ে প্রথম আলোয় ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর ‘ফুটবলে স্বপ্ন বুনছে তারা’, ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৩ কিশোরী ফুটবলার স্বপ্নপূরণের পথে’ ও গত ২১ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় নারী ফুটবল দলে সুযোগ পাওয়া অয়ন্ত বালা মাহাতোর গ্রামে আনন্দ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অয়ন ত ব ল ফ টবল দল প রথম আল এক ড ম র ফ টবল র অয়ন ত র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে আমিও হাসি চেপে রাখতে পারিনি: সুনেরাহ
সুনেরাহ বিনতে কামাল। অভিনেত্রী ও মডেল। ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘দাগি’। নতুন সিনেমা ও সমসাময়িক অন্যান্য প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এমদাদুল হক মিলটন।
প্রথমবার ঈদে আপনার অভিনীত কোন সিনেমা মুক্তি পেল, কেমন লাগছে?
ঈদে সিনেমা মুক্তি পাওয়া অবশ্যই আনন্দের। কারণ ঈদ উৎসবে মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা দেখতে যায়। হলে হলে দর্শকের ঢল নামে। এ রকম একটি উৎসবে নিজের সিনেমা মুক্তি সৌভাগ্যের।
দর্শক প্রতিক্রিয়া জানার কী সুযোগ হয়েছে?
বেশ ভালো। যারা সিনেমাটি ইতোমধ্যে দেখেছেন, প্রত্যেকের কাছ থেকেই খুব প্রশংসা পাচ্ছি। অনেকেই আমার অভিনীত চরিত্রটি পছন্দ করেছেন। দর্শক দীর্ঘদিন এ রকম একটি সিনেমার অপেক্ষায় ছিলেন। এ সিনেমাটির মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে আমি মনে করি। মহাখালীর একটি প্রেক্ষাগৃহে আমি একা মাস্ক পরে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সরাসরি দর্শক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্যই হলে যাওয়া। মজার বিষয় হচ্ছে, আমার সিনগুলো যখন পর্দায় আসে দর্শক তখন হাসছিল। সেটি দেখে নিজেও হাসি চেপে রাখতে পারিনি। আমি যদি ওই হলে ঘোষণা দিয়ে যেতাম, তাহলে অথেনটিক প্রতিক্রিয়া পেতাম না। সিনেমার গল্প ভালো। আর ভালো গল্পের দর্শক সবসময়ই আছে। দর্শক হিসেবে আমারও মনে হয়েছে, এমন একটা গল্পই দর্শক এখন চাইছে। প্রত্যেকেই তাঁর নিজস্ব জায়গা থেকে সেরাটি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাই ফলাফলটা ভালো হয়েছে।
সিনেমার প্রচার প্রচারণায় আপনাকে খুব বেশি পাওয়া যায়নি। এর কারণ কী?
হ্যাঁ, এটি সত্যি সিনেমার প্রচারণায় কম অংশ নিয়েছি। পারিবারিক সমস্যার কারণে প্রচারণায় সময় দিতে পারিনি। মা অসুস্থ, তাঁকে সময় দিতে হয়েছে। একেবারেই যে প্রচারণায় যাইনি তা কিন্তু নয়। যেখানে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, সেখানে গিয়েছি।
‘দাগি’তে আপনার চরিত্রের ব্যাপ্তি কম। অভিনয় নিয়ে আপনি কী সন্তুষ্ট?
একটি চরিত্র দেখানোর জন্য যতটা সময়ের প্রয়োজন, ততটুকুই আমার চরিত্রটিতে আছে। গল্পের প্রয়োজনেই চরিত্রটি আনা হয়েছে। আসলে গল্পপ্রধান সিনেমায় চরিত্রকে বেশি অনুভব করতে পারি। এ কারণেই কাজটি শুরু করেছি। তবে অডিয়েন্স চেয়েছে আমাকে আরও একটু দেখতে। আমার অভিনয় দর্শকমনে দাগ কেটেছে বলেই তারা এমনটি মনে করেছেন। এটি আমার জন্য ইতিবাচক।
ঈদের অন্যান্য সিনেমা নিয়ে আপনার অভিমত কী?
ঈদের সবক’টি সিনেমা এখনও দেখা হয়নি। সময় সুযোগ পেলে দেখব। শুনেছি ঈদের সব সিনেমাই ভালো চলেছে। একেকটা একেক জনরার সিনেমা। এ কারণে সবাই বেশ উপভোগ করেছেন। সিনেমা দেখতে দর্শকের এত ভিড় শেষ আমি কবে দেখেছি মনে নেই। হল উপচে পড়া মানুষ। আসলে সব ধরনের সিনেমাই দরকার। এতে দর্শক বাড়ে। ঈদের ছবিগুলো তাই প্রমাণ করে।
শুনেছি, নতুন একটি সিনেমার শুটিং শুরু করেছেন?
ঠিকই শুনেছেন। বড় আয়োজনের অসাধারণ গল্পের একটি সিনেমায় অভিনয় করছি। যদিও এ বিষয়ে এখনি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। একটু বলব, নির্মাতার সঙ্গে এটি আমার প্রথম কাজ। শুনেছি, আগামী ঈদুল আজহায় এটি মুক্তি পাবে।
বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দায়ও অভিনয় করছেন...
সবসময় কাজের মধ্যেই থাকতে চাই। এ কারণে এ সময়ে এসে পর্দা বিভাজন করছি না। ছোট পর্দায় অনেক কাজ হয়। এখানে ভিন্ন ভিন্ন গল্পে কাজের সুযোগ থাকে। সবসময় চর্চার মধ্যে থাকা যায়। শেখার তো শেষ নেই। অনেক কিছু শিখতে পারছি। আর অল্প সময়ের মধ্যে একটা চরিত্র নিজের মধ্যে ধারণ করে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার আনন্দই অন্যরকম। সবকিছু বিবেচনায় রেখেই ছোট পর্দায় মাঝেমধ্যে অভিনয় করছি। এই ঈদে ছোট পর্দায় আমার অভিনীত কয়েকটি কাজ প্রচার হয়েছে। ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে ছোট পর্দার কাজে আপত্তি করছি না।
অভিনয় নিয়ে সবসময়ই ব্যস্ত সময় কাটছে। একটু অবসর পেলে কী করেন?
বাসায় থাকলে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিই অনেকটা সময়। খাওয়া-দাওয়া করি, সিনেমা দেখি, বই পড়ি। সময় যে কখন চলে যায়, টেরই পাই না। মাঝেমধ্যে একা ঘুরতে যাই। একা ঘুরতে আমার আনন্দই লাগে। কখনও বন্ধুদের সঙ্গে ছুটে যাই পাহাড়-সমুদ্রে।