নারীদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে, কঠোর হাতে দমন করতে হবে: সালাউদ্দিন
Published: 8th, March 2025 GMT
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা-নিপীড়ন যে পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। আমরা নিন্দা জানাই। এটি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘অদম্য নারী, শক্তিতে অজেয়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ছাত্রদল।
সালাউদ্দিন আরও বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন যেভাবে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, তা আমরা রোধ করতে না পারলে তাহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করুন। এখানে পতিত ফ্যাসিবাদীদের কোনো চক্রান্ত আছে কিনা, তা বের করুন। বাংলাদেশকে কোনোভাবে অস্থিতিশীল করা যাবে না।
নারীদের ব্যাপারে বিএনপির সংস্কার দফার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে নারীদের বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি আছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা নারীসহ সমাজের অন্যান্য অংশের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, নারীদের ক্ষমতায়ন হবে সাংবিধানিকভাবে, সংসদীয়ভাবে এবং আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজের সর্বক্ষেত্রে ক্ষমতায়নের হার পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, আশা করি, আমরা সংসদে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংসদীয় নারীর ক্ষমতায়নে আমরা ভূমিকা রাখব। আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক যেসব দিক আছে, যেসব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। এখানে কোনো বৈষম্যের স্বীকৃতি আমরা দেব না।
অভ্যুত্থানে নারীদের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছে, তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী ও শিশু। সেই হিসেবে তাদের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিকভাবে দেওয়া হয়েছে। নারীরা সবসময় আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এগিয়ে ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে নারীরা সম্মুখ সারিতে ছিল। আমাদের অর্জিত বিজয়ে নারীদের সিংহভাগ ছিল বলেই আমরা মনে করি।
নিজ দলের বৈষম্যের শিকার মন্তব্য করে বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, যেসব ছাত্রনেতা আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছে, আজ তারা বড় বড় পর্যায়ে আছে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে ছাত্রদের মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু এরশাদের সময়ে কারফিউ ভেঙ্গে যে মিছিল হয়েছিল, সে মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে আমি নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের মূল্যায়ন করা হয় না। আমরাও দলে বৈষম্যের শিকার।
শিরিন সুলতানা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী দ্বারা একজন নারী শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ৮ বছরের একটি ছোট্ট শিশুকে মাগুরায় নির্যাতন করে আজ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাতরাচ্ছেন। পত্রিকা খুললেই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, নিপীড়নের ঘটনা আমরা দেখি। তিনি বলেন, সমাজের সর্বস্তরের মতো রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নারীদের মূল্যায়ন করা। নারীরা মূল্যায়িত হলে সমাজের সর্বস্তরে তারা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং নারীরা নিরাপদ থাকবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ। আলোচনা সভায় ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাভুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদিজাতুল কুবরা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ নাফিসা হোসেন মারয়ার মামা হযরত আলী বক্তব্য রাখেন।
সভার পাশাপাশি নারী দিবস উপলক্ষে বইমেলা এবং উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করেছে ছাত্রদল।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হবে কিনা সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার
নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি এ বছর বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হবে কিনা– আগামী বৃহস্পতিবার সে সিদ্ধান্ত জানাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সভা শেষে এ কথা জানান সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, আগামী ১০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সভা হবে, সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সভা শেষে সিদ্ধান্তের কথা জানাবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। তবে নাম পরিবর্তন নিয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটা আয়োজন করে, তারাই এ বিষয় সিদ্ধান্ত জানাবে।
এর আগে গত ২৩ মার্চ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরদিন তিনি বলেছিলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ ফারুকী বলেন, এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক শেষে আমি যে বক্তব্য দিয়েছিলাম, তা ‘মিস কোট’ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা এবং দেশজুড়ে বাঙালি ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কী কী অনুষ্ঠান হচ্ছে, এ নিয়ে আগামীকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হবে, এটি কখন কোথায় হবে। এবারের শোভাযাত্রায় বাঙালিসহ অন্যান্য ২৬টি জাতিগোষ্ঠী অংশ নেবে।
এদিকে পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত হুমকি নেই বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ বছর ব্যাপকভাবে বাংলা নববর্ষ পালন হবে। ফলে সেই বিষয়টি সামনে রেখে এবার নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য যা করা প্রয়োজন, সেসব করা হচ্ছে।