আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা-নিপীড়ন যে পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। আমরা নিন্দা জানাই। এটি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘অদম্য নারী, শক্তিতে অজেয়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ছাত্রদল।

সালাউদ্দিন আরও বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন যেভাবে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, তা আমরা রোধ করতে না পারলে তাহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করুন। এখানে পতিত ফ্যাসিবাদীদের কোনো চক্রান্ত আছে কিনা, তা বের করুন। বাংলাদেশকে কোনোভাবে অস্থিতিশীল করা যাবে না।

নারীদের ব্যাপারে বিএনপির সংস্কার দফার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে নারীদের বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি আছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা নারীসহ সমাজের অন্যান্য অংশের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, নারীদের ক্ষমতায়ন হবে সাংবিধানিকভাবে, সংসদীয়ভাবে এবং আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজের সর্বক্ষেত্রে ক্ষমতায়নের হার পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, আশা করি, আমরা সংসদে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংসদীয় নারীর ক্ষমতায়নে আমরা ভূমিকা রাখব। আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক যেসব দিক আছে, যেসব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। এখানে কোনো বৈষম্যের স্বীকৃতি আমরা দেব না।

অভ্যুত্থানে নারীদের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছে, তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী ও শিশু। সেই হিসেবে তাদের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিকভাবে দেওয়া হয়েছে। নারীরা সবসময় আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এগিয়ে ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে নারীরা সম্মুখ সারিতে ছিল। আমাদের অর্জিত বিজয়ে নারীদের সিংহভাগ ছিল বলেই আমরা মনে করি।

নিজ দলের বৈষম্যের শিকার মন্তব্য করে বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, যেসব ছাত্রনেতা আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছে, আজ তারা বড় বড় পর্যায়ে আছে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে ছাত্রদের মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু এরশাদের সময়ে কারফিউ ভেঙ্গে যে মিছিল হয়েছিল, সে মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে আমি নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের মূল্যায়ন করা হয় না। আমরাও দলে বৈষম্যের শিকার।

শিরিন সুলতানা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী দ্বারা একজন নারী শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ৮ বছরের একটি ছোট্ট শিশুকে মাগুরায় নির্যাতন করে আজ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাতরাচ্ছেন। পত্রিকা খুললেই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, নিপীড়নের ঘটনা আমরা দেখি। তিনি বলেন, সমাজের সর্বস্তরের মতো রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নারীদের মূল্যায়ন করা। নারীরা মূল্যায়িত হলে সমাজের সর্বস্তরে তারা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং নারীরা নিরাপদ থাকবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ। আলোচনা সভায় ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাভুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদিজাতুল কুবরা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ নাফিসা হোসেন মারয়ার মামা হযরত আলী বক্তব্য রাখেন।

সভার পাশাপাশি নারী দিবস উপলক্ষে বইমেলা এবং উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করেছে ছাত্রদল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নারীর প্রতি সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে: সিপিবি

বাংলাদেশের নারী ও প্রগতিশীল সমাজ বর্তমানে এক ভয়াবহ দুঃসময় পার করছে। দেশে নারী বিদ্বেষ ও নারীর প্রতি সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি গোষ্ঠী গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নানা অপচেষ্টা করছে। তারা নারীদের নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি তাঁদের ওপর সহিংসতা ও আক্রমণ চালাচ্ছে, যা গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) এ কথা বলেছেন।

বিবৃতিতে সিপিবির নেতারা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক, শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলাম, সেটাকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। সমাজে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং সব কাজে সমান সুযোগ ও সমান মজুরি ছাড়া দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে না।’

‘তৌহিদি জনতা’র নামে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী নারীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে সিপিবির বিবৃতিতে বলা হয়, একের পর এক আক্রমণের ঘটনা ঘটাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নারীদের হেনস্তা করার পরও সরকার হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এসব অপশক্তিকে দমন করতে না পারার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে।

বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়ন এবং পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারী সমাজকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন সিপিবির নেতারা। তাঁরা বলেন, দেশে গণতন্ত্র না থাকলে শোষণ-নিপীড়ন বাড়তেই থাকে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী সমাজ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরও বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ ও শিশুহত্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে নারী ও শিশুরা খুন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সিপিবির কেন্দ্রীয় নারী সেলের উদ্যোগে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে সমাবেশ ও র‍্যালি করবে সিপিবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২৪ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
  • রমজান উপলক্ষে ভাড়ায় ছাড় দিচ্ছেন কুড়িগ্রামের অটোরিকশাচালক সাইদুল
  • আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিমানের ঢাকা–ব্যাংকক ফ্লাইটের সব দায়িত্বে নারীরা
  • পথেঘাটে নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন সেলিমা রহমানের
  • নারী দিবস সম্মাননা পেলেন রুমা মোদক 
  • টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে নারী দিবসে বর্ণাঢ্য র‌্যালি 
  • আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস
  • বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করেছে
  • নারীর প্রতি সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে: সিপিবি