১৯৯০ সালে কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। আর গণতন্ত্রের উল্টোপথে যাত্রা ঠেকাতে প্রয়োজন ছিল কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার। সে সময় সংস্কারে জোর না দিয়ে নির্বাচন ও নির্বাচনের সময়সীমায় গুরুত্ব দেওয়া ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভুল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপ–রাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) বিআইআইএসএস’এ ‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে। সিজিএস আয়োজিত সংলাপে অংশ নেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপ রাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার চেয়ারম্যান মুনিরা খান। এরপর সঞ্চালকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনীতিক। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অতিথিদের প্রশ্নের উত্তর দেন তারা।

সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি তাদের দেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ভূমিকা এবং নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, আন্তর্জাতিক, উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সমাজের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।  

কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে প্রশ্ন করলে জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, অবশ্যই ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভুল পক্ষে ছিল। তবে এরপর থেকে একটি ধারাবাহিক নীতি নিয়ে চলেছে। 

২০০৭–০৮ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা জটিল ভূমিকা পালন করেছিল, সে সময়ে কূটনীতিকরা কিভাবে কাজ করে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭–০৮ সালে বড় ভুল করেছিল। আমি সে সময়ে বাংলাদেশে দায়িত্বে ছিলাম না। তবে আমি এটি বলতে পারি তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা অন্য কোনো মার্কিন কূটনীতিক ১/১১ এর পেছনে দায়ী নয়। আর কোনো গোপন কফি গ্রুপে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ বাংলাদেশিদের নির্দেশনা দেয়নি কি করতে হবে।

জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, তবে সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গতিপথ নিয়ে অনেক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিল, যে প্রত্যাশা তৎকালীন সরকার, সামরিক বাহিনী এবং সুশীল সমাজের ছিল। 

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি ছিল, তা লাইন বিচ্যুত হয়েছিল। আর বাংলাদেশকে সঠিক পথে আনতে কিছু মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। আমরা সংস্কারকে সহযোগিতা করেছিলাম। আমরা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছিলাম। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলাম।

১/১১-এর বিশ্লেষণে জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, পরিস্থিতির কারণে আমাদের বোঝাপড়ার ঘাটতি ছিল। আমাদের অনেকের কথা শোনার দরকার ছিল। কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনিনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকে আর্মির জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারদের কথায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ কি চেয়েছিল, তাতে গুরুত্ব দেয়নি। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বললেও আর্মিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এ কারণেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্র যে রকম প্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশ সে ধারায় যেতে পারেনি।

তিনি বলেন, আরও একটি ভুল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নির্বাচন ও নির্বাচনের সময়সীমাতে বেশি জোর দিয়েছিল। নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যে সরকার নির্বাচিত নয়, এমন সরকার দীর্ঘ সময় শাসন করতে পারে না। তবে সে সময়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার প্রয়োজন ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অগ্রাধিকার সংস্কারের চেষ্টা করেছিল। তবে যখন এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সে সরকারের এডেন্ডা হচ্ছে নির্বাচন এবং ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে প্রভাব হাড়িয়েছে।

জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সে সরকারের চুক্তি হয়েছিল গোপনে। ফলে আমরা জানি না সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কি দরকষাকষি হয়েছিল। তখন আমরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমাদের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা তাদের শিক্ষা পেয়েছেন এবং সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজগুলোকে এগিয়ে নেবে। তবে আমাদের ধারণা ভুল ছিল এবং যা বলেছিল তা বিশ্বাস করেছিলাম। আর বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে অবনতি হতে দেখেছি, যার ফলে ২০২৪ এর জুলাই–আগস্ট হয়েছে। এ সময়ে অতীতের ভুল থেকে ভবিষ্যতের শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণতন ত র র ক টন ত ক সরক র র আম দ র কর ছ ল অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

জমি নিয়ে বিরোধ মামলা করে বাড়ি ছাড়া আট পরিবার

পঞ্চগড়ে জমি নিয়ে বিরোধে বাটোয়ারা মামলা করে বাড়ি ছাড়া আট পরিবারের অর্ধশত সদস্য। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলায় এক স্বজনের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। 
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় আট পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের বনগ্রাম ঠাকুরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে খোরশেদ আলম ও তাঁর স্বজনদের ১১ একর জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। গত ২৫ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা এ বিষয়ে আদালতে বাটোয়ারা মামলা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে খোরশেদ আলমের লোকজন গত ১৪ মার্চ জাহাঙ্গীর ও তার সমর্থক নজরুল, সুলতান, হাসিফুল, সুজন, জমির উদ্দিন ও নবিউলের বাড়িতে হামলা করে। তারা দুটি ট্রাক্টর, ১টি পিকআপ, ঘরে থাকা আসবাব ভাঙচুর করে। পরে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ৩ কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে যায়। তাদের হামলায় আহত ৭ জনকে বোদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে জাহাঙ্গীরের লোকজন হামলাকারীদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে তারা আদালতে মামলা করেন।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খোরশেদ আলমের পরিবারের সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য বাটোয়ারা মামলা করি। এরপর খোরশেদ ভাড়াটে লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের বাধায় আমরা বাড়িতে যেতে পারছি না। রাস্তায় তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে বসে থাকে।’
ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘খোরশেদ, বিরাম চন্দ্র, ধনীরাম, আব্দুল ওহাব বাবু, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল ওহাব বকুল, সামাদ, তৌহিদুল, হাসান, শাকিল, রফিকুল, আব্দুল মালেক ও আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে ভাড়া করা লোকজন আমাদের ওপর হামলা করেছে। তারা আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে খোরশেদ আলম জানান, জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন হামলা করে তাদের লোকজনকে গুরুতর আহত করেছে। এরপর তারা নিজেদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। 
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন সমকালে বলেন, ওই ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় মামলা করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এছাড়া একটি পক্ষের আদালতে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংসদীয় গণতন্ত্র নয়, ‘মৌলিক গণতন্ত্রের’ অন্য রূপ
  • গায়েবি সাহায্য
  • জমি নিয়ে বিরোধ মামলা করে বাড়ি ছাড়া আট পরিবার
  • পশ্চিমা গণতন্ত্র ও মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের বিবেক কি জাগবে না
  • পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক
  • মার্কিন সংবিধানকে কি চ্যালেঞ্জ করছেন ট্রাম্প
  • ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ নিন: জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল 
  • বাড়ল অনুদানের সিনেমা জমা দেওয়ার সময়সীমা
  • ট্রাম্প তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কথা বলে কি মার্কিন সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করছেন
  • রাষ্ট্রের মূলনীতি প্রশ্নে বিপরীত অবস্থানে বিএনপি ও জামায়াত