এআই সার্চ ইঞ্জিনের কারণে নিউজ সাইটের ট্রাফিক ৯৬ শতাংশ কমেছে
Published: 8th, March 2025 GMT
এআইভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনের কারণে নিউজ ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলোর ট্রাফিক আশঙ্কাজনক হারে কমছে। প্রচলিত গুগল সার্চের তুলনায় ওপেনএআই, পারপ্লেক্সিটি ও গুগলের এআই সার্চ টুল থেকে সংবাদমাধ্যম ও ব্লগগুলো ৯৬ শতাংশ কম রেফারেল পাচ্ছে। কনটেন্ট লাইসেন্সিং প্ল্যাটফর্ম টোলবিটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এআই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মডেলের প্রশিক্ষণের জন্য ওয়েবসাইট থেকে আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় তথ্য সংগ্রহ করছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬০টির বেশি জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম, প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ও কেনাকাটাবিষয়ক ব্লগ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওপেনএআই, পারপ্লেক্সিটি ও মেটা ওই সময়সীমায় ওয়েবসাইট ব্যবহার করেছে প্রায় ২০ লাখ বার। প্রতিটি ওয়েব পেজ গড়ে সাতবার করে স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। এআই প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েব ক্রলার বা এআই বট ব্যবহারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু বেশির ভাগ ওয়েবসাইট মালিক বা প্রকাশকের কাছে এটি অজানা থাকে। কারণ, এসব বটের কার্যক্রম স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয় না।
টোলবিটের গবেষণায় দেখা গেছে, পারপ্লেক্সিটি একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ৫০০ বার স্ক্র্যাপ করলেও ওই ওয়েবসাইটে পাঠানো রেফারেলের সংখ্যা মাত্র ১০ হাজার। এর আগে পারপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগে বলা হয়, তারা অজ্ঞাত ওয়েব ক্রলার ব্যবহার করে ওয়েবসাইট স্ক্র্যাপ করছে এবং ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত রোবটস ডট টিএক্সটি নির্দেশিকা মানছে না।
ওয়েবসাইটে ক্রমাগত এআই বটের প্রবেশ বাড়তে থাকায় নিউজ সাইটগুলোর সার্ভার খরচও বেড়ে যাচ্ছে। টোলবিটের প্রধান নির্বাহী তোষিত পানিগ্রাহী বলেন, ব্যবহারকারী যখন কোনো প্রশ্ন করেন, তখন অসংখ্য বট একসঙ্গে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে।
প্রকাশকদের কনটেন্টের চাহিদা এআইভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মানুষের তথ্য গ্রহণের ধরন আর এআইয়ের ধরন এক নয়। একজন পাঠক সাধারণত একটি লিংকে ক্লিক করেন, এরপর দ্বিতীয়টিতে যান, তারপর অন্য কোথাও চলে যান। কিন্তু এআই একটি উত্তর পাওয়ার জন্য ১০ থেকে ২০টি লিংক বিশ্লেষণ করে।
এর আগে ওপেনএআই ও পারপ্লেক্সিটি দাবি করেছিল, তাদের এআই প্রযুক্তির সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইটগুলোয় আরও বেশি ট্রাফিক পাঠাবে এবং প্রকাশকদের জন্য নতুন আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। তবে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গার্টনারের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৬ সালের মধ্যে এআই চ্যাটবট ও ভার্চ্যুয়াল এজেন্টের কারণে ওয়েবসাইটের সার্চ ট্রাফিক ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে।
নিউজ সাইটের ট্রাফিক কমে যাওয়ার পাশাপাশি এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগও বাড়ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এডটেক প্রতিষ্ঠান চেগ গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, গুগলের এআই দিয়ে তৈরি সারাংশ তাদের ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কমিয়ে দিয়েছে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চেগের দাবি, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তাদের সার্চ ট্রাফিক ৪৯ শতাংশ কমেছে, যেখানে ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। এ সময় গুগল এআই ওভারভিউস চালু করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম ওপেনএআই ও পারপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছে। ভারতের দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের করা এক মামলায় সংবাদ সংস্থা এএনআই অভিযোগ করেছে, ওপেনএআই তাদের কপিরাইট-সুরক্ষিত কনটেন্ট এআই প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করেছে। এ বছরের শুরুতে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভিসহ একাধিক ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন জানিয়েছে।
তবে কিছু সংবাদমাধ্যম কপিরাইট বিতর্ক এড়াতে সরাসরি এআই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, অ্যাক্সেল স্প্রিংগার ও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ওপেনএআইয়ের সঙ্গে কনটেন্ট লাইসেন্সিং চুক্তি করেছে। অন্যদিকে রয়টার্স ও অ্যাক্সিওস তাদের কনটেন্ট মেটাকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এসব কনটেন্ট এআই চ্যাটবটের উত্তরের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কনট ন ট ব যবহ র র জন য স ইট র র এআই এআই প
এছাড়াও পড়ুন:
জিবলি যেন উন্মাদনা!
সিনেমার গল্প লেখার প্রয়োজনে বাঙালির বিখ্যাত চরিত্র অপু কিংবা ফেলুদা অবয়ব মাথায় ভেবে দিব্যি তার মুখাবয়বের ছবি এঁকে ফেলতেন অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। ভাবনা থেকেই তৈরি হয়ে যেত কাস্টিং। কার্টুন ভাবনা থেকে সিনেমার পর্দায় চরিত্র বিনির্মাণে সেকালে একতরফা নাম কুড়িয়েছেন সত্যজিৎ রায়। অনেক বছর পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে যেন তারই পুনরাবৃত্তি করল জিবলি। গবেষণা রিপোর্ট বলছে, জিবলির কারণে প্রথমবার চ্যাটজিপিটির সাপ্তাহিক গড় সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ১৫ কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছে। ওপেনএআইর নির্বাহী প্রধান স্যাম অল্টম্যান জানালেন, ঘণ্টার ব্যবধানে ১০ লাখের বেশি নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। বছর দুই আগে আত্মপ্রকাশের পর সমান সংখ্যক গ্রাহক নিবন্ধিত হতে সময় লেগেছিল পাঁচ দিন। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
সারাবিশ্বে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জিবলি’ ছড়িয়েছে উন্মাদনার ঝড়। কমবেশি সবাই বুঁদ হয়েছেন নিজের আর্ট (অ্যানিমেটেড) ছবি নির্মাণে। নিজের নির্বাচিত ছবি দিয়ে চ্যাটজিপিটিকে নির্দেশ দিলেই সে ঠিক আপনার মতো হুবহু অ্যানিমেটেড ছবি বানিয়ে দেবে।
ওপেনএআই উদ্ভাবিত চ্যাটজিপিটির বিশেষ ফিচারের কারণে এমনটি ঘটছে। কিন্তু এমন ফিচারের মাধ্যমে অজান্তেই কি নিজের মুখাবয়বের অপব্যবহার ঘটার ঝুঁকি বাড়ছে– শঙ্কা ঠিক যেন সেখানেই। নিজের ছবি তো আছেই, অনেকে এখন নিয়মিত পারিবারিক ফ্রেমের ছবি তৈরির ফরমায়েশ করছেন জিবলির কাছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অনেকে বলছেন, স্মার্টফোন আনলক করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে বন্ধুদের ট্যাগ করা বা ক্যামেরা অ্যাপ খোলার আগে অনুমতি দিতে এআই ঘরানার সব সংস্থার কাছে ‘ফেসিয়াল ডেটা’ নথিবদ্ধ হয়ে যায়। সব সংস্থা শুধু এসব ডেটা প্রসেসই করে না, স্ক্যান করে সংরক্ষণ করে। এমনকি কারও মুখের সূক্ষ্ম সব দাগ এআইর নজর এড়িয়ে যায় না।
অন্যদিকে, পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ড নম্বর বেহাত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে ফেসিয়াল ডায়মেনশনের কারণে। যে কোনোভাবে একবার খোয়া গেলে তা এআই প্রযুক্তির হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা কার্যত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। জানা গেছে, গুগল ও মেটার বিরুদ্ধে নিজেদের এআই প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া গ্রাহকের ‘ফেসিয়াল ডেটা’ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ‘জিবলি’ তৈরি করলে কীভাবে ফেসিয়াল ডায়মেনশনের তথ্য বেহাত হয়। তাই বায়োমেট্রিক মুখাবয়ব থেকে ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল জানা প্রয়োজন।
নিরাপত্তায় যা করবেন
প্রচলিত এআই পরিচালিত সব ধরনের প্ল্যাটফর্মে নিজের এইচডি ছবি আপলোড করা থেকে বিরত থাকবেন।
মুখাবয়ব (ফেস) আনলক সিস্টেমের পরিবর্তে ডিভাইসে পাসওয়ার্ড বা পিন পদ্ধতি ব্যবহার করা শ্রেয়। পরিচিত বা অপরিচিত যে কোনো অ্যাপে হুট করে ক্যামেরা ব্যবহারে অনুমতি না দেওয়া।
জিবলি স্টাইল
ওপেনএআই প্রযুক্তি ছবির নতুন ফিচার উন্মোচন করেছে। জিপিটি-৪ও মডেলের ইমেজ জেনারেশন ফিচারটি রাতারাতি ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জনপ্রিয় সব সিনেমার একের পর এক আইকনিক ছবি থেকে শুরু করে বিখ্যাত ব্যক্তির অবয়ব অ্যানিমেশনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে বিশেষ ফিচার, যার নাম ‘জিবলি স্টাইল’। প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে হায়ায়ো মিয়াজাকি, ইসাও তাকাহাটা ও তোশিও সুজুকি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘স্টুডিও জিবলি’। ক্রমান্বয়ে তা জাপানের জনপ্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিও হয়ে ওঠে। ছবির খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে গল্পের আঙ্গিকে প্রতিটি ছবি দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি করা হতো বিশেষ স্টুডিওতে।
জিবলি মূলত আরবি শব্দ, যার অর্থ মরুঝড়। জিবলি স্টুডিওর সব ছবির অনুকরণেই চ্যাটজিপিটির নতুন ফিচার উদ্ভাবন। প্যাস্টেল আর ফিকে রঙের ক্যানভাস ব্যবহৃত হয় জিবলি আর্টে। কার্টুন অবয়বে অ্যানিমেশন যারা পছন্দ করেন, রাতারাতি তাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উল্লিখিত ফিচার।
বিখ্যাত ব্যক্তি বা আইকনিক দৃশ্যের ছবি জিবলি স্টাইলে কনভার্ট করে রাতারাতি ট্রেন্ড তৈরি করে ফেলেছে চ্যাটজিপিটি। জিবলি স্টাইল ঝড় এখন সবখানে দৃশ্যমান।
জিবলি তৈরি
আপাতত জিবলি তৈরিতে খরচ গুনতে হবে না। আগ্রহীরা এখন সহজে জিবলি স্টাইলে ছবি তৈরি করতে পারছেন।
প্রথমে নিজের চ্যাটজিপিটি অংশে যেতে হবে। তারপর ওপেনএআই ডটকমে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে নতুন চ্যাট উইন্ডো খুলে যাবে। লগইন করলেই ‘নিউ চ্যাট’ অপশনে ক্লিক করে নতুন কথোপকথন অংশে প্রম্পট লিখতে হবে। নিজের বিশেষায়িত ছবির প্রয়োজনে ইমেজ প্রম্পট লিখতে হবে। যে ছবিটি তৈরি করতে চাইছেন, তার জন্য বিস্তারিত প্রম্পট টাইপ করতে হবে। তারপর এন্টার দিলেই চ্যাটজিপিটির নির্দেশিকা পাওয়ার পর জিবলি স্টাইলে ছবি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। ব্যস, ডাউনলোড করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। ছবি দৃশ্যমান হলে রাইট ক্লিক করে ‘সেভ ইমেজ অ্যাজ’ নির্বাচন করে ডাউনলোড করা যাবে ছবিটি।
জিবলি নেপথ্যে
চ্যাটজিপিটির নেটিভ ইমেজ জেনারেটর আগ্রহীকে সহজ টেক্সট প্রম্পটে তার নিজস্ব এআই জেনারেটেড ছবি তৈরি করতে দেয়। নির্বাচিত ছবি আপলোড করে তার কিছুটা বিবরণ দিলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিজস্ব এআই উদ্ভাবিত ছবি দৃশ্যমান হয়। চ্যাটজিপিটি প্লাস, প্রো বা টিম সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে এআই জেনারেটেড ছবি পাওয়া সম্ভব। জিবলি উন্মাদনায় এখন সবাই ডুবছেন। ইতোমধ্যে বদল হতে শুরু করেছে অনেকের ফেসবুক প্রোফাইল ও কাভার ছবি। সব ছবিই দ্রুত ফরওয়ার্ড হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে। গবেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) রূপান্তরিত ছবির উন্মাদনা প্রমাণ করে, সামনের সময়ে এমন প্রযুক্তি সমাজ-সভ্যতাকে কোথায় পৌঁছে দেবে।